ঢাকা, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

চাঁদাবাজি-সিন্ডিকেট নেই, বাজারে স্বস্তি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৯ আগস্ট ২০২৪, শুক্রবারmzamin

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ভিন্ন এক চিত্র দেখা যাচ্ছে দেশের কাঁচা বাজারে। ইতিমধ্যেই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে পণ্য সরবরাহ বাড়ায় কমতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম। মাছ-মাংস ও সব ধরনের সবজির দাম আগের চেয়ে কমেছে। তবে পিয়াজ ও চালের দাম আগের অবস্থানে আছে। আর যেসব পণ্যের দাম কমেনি সেগুলো কমতে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে বলে মনে করেন বিক্রেতারা। ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে গত শুক্রবার থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ার প্রভাবে যেসব সবজির দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল, তা আবারো কমতে শুরু করেছে। তাদের মতে, পণ্য নিয়ে যে সিন্ডিকেট ছিল, সেটা নেই। এ ছাড়া পরিবহনে চাঁদাবাজিও নেই। ফলে দাম কমিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিংয়ে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। এটা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে মূলত ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দায়ী ছিল। এখন সেটা ভেঙে পড়ায় আগের চেয়ে দাম অনেকটা কমে আসতে শুরু করেছে। নতুন প্রশাসনের অধীনে হয়তো এতটা প্রকট সিন্ডিকেট বজায় রাখতে পারবে না। তাই দাম আরও কমে আসবে। তবে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। আগে যারা চাঁদাবাজি করতো তারা সামনে নেই। নতুন কেউ যেন আবার পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি শুরু করতে না পারে সেটা খেয়াল রাখতে হবে।

কাওরান বাজারে সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। পটোল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি, যা দুদিন আগেও ছিল ৬০ টাকা। ঢেঁড়সের কেজিও ৫০ থেকে নেমে এসেছে ৪০ টাকায়। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজিতে, যা ছিল ৫০ টাকা কেজি। এমনকি মরিচের ঝাঁজও কমতে শুরু করেছে, ১২০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। দুদিন আগেও এর দাম ছিল ৬০ টাকার উপরে। প্রতি কেজি বেগুন যেখানে বাজারভেদে ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেখানে এখন এলাকাভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। ৮০ টাকায় উঠে যাওয়া ঝিঙ্গা এখন ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কমেছে আলুর দামও। প্রতি কেজি আলু ৭০ টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। এ ছাড়া, পেঁপের দাম ১০ টাকা কমে ৪০ টাকা এবং  পটোল ও ঢেঁড়স কেজিপ্রতি ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

সবজি বিক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে পণ্য ঠিকমতো আসতেছে। এর আগে মাল কম থাকায় দাম কিছুটা বাড়ছিল। আলুর দাম কেজিতে আছিলো ৭০ টাকা। এখন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতেছি।’ সেগুনবাগিচা কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিসুর বলেন, শুক্রবার থেকেই আন্দোলনের কারণে ঢাকায় সবজির সরবরাহ কমে যায়। এজন্য দাম বেড়ে গিয়েছিল। এখন আবার সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।

সবজির পাশাপাশি ডিম ও মুরগির দামও কমে এসেছে অনেকটা। আন্দোলনের সময় ডিমের হালি ৬০ টাকায় গিয়ে  ঠেকেছিল। কিন্তু এখন তা ৫০ টাকায় নেমে এসেছে। কাওরান বাজারের ডিম বিক্রেতা নাসির জানান, মঙ্গলবার থেকে ডিম সরবরাহ আবার ঠিক হয়েছে। তাই দাম আগের জায়গায় নেমে এসেছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে ২১০ টাকা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। এখন এটি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। 

কাওরান বাজারে আউয়াল ব্রয়লার বাজারের বিক্রেতা জসীম বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় বর্তমানে মুরগির দাম কমেছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ২০০ টাকা, যা এ সপ্তাহে কমে দাঁড়িয়েছে ১৬৫ টাকায়। সোনালী বা পাকিস্তানি কক ৩২০ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২৭০ টাকা থেকে ২৮০ টাকায়, পাকিস্তান ও দেশি ক্রস ৪০০ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩২০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬০০ টাকা থেকে কমে বর্তমানে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে মুরগির দাম আরও কমবে বলে জানান তিনি।

ওদিকে গত দুইদিনে বাড়েনি চালের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, আগের মতোই মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা, আটাশ চাল ৫৮ টাকা, মোটা চাল ৫২ টাকা থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। মসুর ডাল ১২৫-১৪০ টাকা, ছোলার দাম ১১০-১১৫ টাকা, ১ লিটার সয়াবিন তেল ১৬৫ টাকা ও ৫ লিটার ৮০০-৮১০ টাকা, চিনির কেজি ১৩০ টাকা। 

মাছ বিক্রেতারা জানান, অন্য দিনের চেয়ে গত দুইদিনে বিভিন্ন আড়তে সরবরাহ কমে গেছে। রুই, কাতলার কেজি ৩৫০-৭০০ টাকা, চাষের চিংড়ি ৫৫০-৭০০ টাকা, নদীর চিংড়ি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। ট্যাংরা ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাচকি ও মলা মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, পাঙাশ, তেলাপিয়া ২০০-২৫০ টাকা, ইলিশের কেজি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারে সরবরাহ এখন স্বাভাবিক রয়েছে। দামও অনেক ক্ষেত্রে কমতির দিকে। রাজধানীর কাওরান বাজারে তদারকি শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। ভোক্তার ডিজি বলেন, বাজারের ‘হিডেন কস্ট’ সম্পর্কে আপনারাও জানেন যে, কোথায় এ ধরনের কস্ট ছিল। ব্যবসায়ীদের সেসব খরচ কমে গেলে বা দিতে বাধ্য না হলে পণ্যের সরবরাহ বা ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য প্রাপ্তিতে সমস্যা হবে না। দামও স্থির রাখা সম্ভব হবে। 
 

পাঠকের মতামত

দুষ্ট গরুর চেয়ে শূণ্য গোয়াল ভালো। ঐ চিহ্নিত দুষ্ট গরুটাই ছিল যত নষ্টের মূল। যার কারণে এ জাতির একটি খন্ডিত অংশ ধর্ম নীতি নৈতিকতা সবার সামনে থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। সবকটি দানবের রূপ নেয়। এখনো দানব তার সূতানাতা ঠিক করার ধান্ধায় ঘুরছে। লোভে পাপ পাপে মৃত্যু যাদের তাদের স্বভাব কি বদলায়? কয়লা ধুলে কখনো ময়লা যায় না। চাঁদাবাজির নায়িকা ছিল সে, নাকি সুরে কান্না গ্লিসারিনের নাটক জাতি দেখলো কিন্তু যারা তারে সামনে হাটতে দিল নাচলাে তারা কি ছাড়া পাবে, আওয়ামীরা সব দেশদ্রােহি শক্তি। এ লজ্জায় জাতির মাথা হেট হয়েছে। মানুষ বলতো কোন ভালো মানুষ এ দল করতে পারে না। প্রতিটি ছােট বড় ঘটনা দিয়ে ঐ দুষ্ট গরু সেটি প্রমাণ দিয়ে গেল, যা ইতিহাস হয়ে থাকবে।

Nazma Mustafa
১৯ আগস্ট ২০২৪, সোমবার, ৮:৫০ পূর্বাহ্ন

চাঁদাবাজি তো করতেন হাসিনার সোনার ছেলেরা !!!!

ইসলাম
১৫ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২:৫৯ অপরাহ্ন

প্রত্যেকের দায়িত্ব হচ্ছে চাঁদাবাজি এবং সিন্ডিকেট বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এরকম কোন ঘটনা নজরে আসলে সাথে সাথে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। নিরবে সহ্য করা যাবে না।

ইরফান
৯ আগস্ট ২০২৪, শুক্রবার, ৪:৩১ অপরাহ্ন

Just 2 days wait and see

Rafi
৯ আগস্ট ২০২৪, শুক্রবার, ২:৩৪ অপরাহ্ন

দেশের বিগত সরকারের এত চেষ্টার পরেও দ্রব্যমূল্য না কমলেও সরকার পদত্যাগের সাথে সাথে সবকিছুর দাম কমতে শুরু করেছে। এইটা কোন ভেলকি? তাহলে সিন্ডিকেট কোন দলের ছিল? চাঁদাবাজি এখন বন্ধ কেন? গাড়িভাড়া কম কেন? জ্বালানী তেলের দাম কি কমে গেছে? নাকি দূর্নীতি বিদায় হয়েছে?

MMRS
৯ আগস্ট ২০২৪, শুক্রবার, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন

পাইকারি আর খুচরা বিক্রেতার বিক্রয় মূল্য পার্থক্য দেখুন। এখানে বড় ধরণের গ্যাপ থাকে।

Razib
৯ আগস্ট ২০২৪, শুক্রবার, ৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

গতকাল কাওরান বাজারে গিয়েছি, মাছ বা তরিতরকারির দামে খুব একটা কমতি দেখিনি, বরং মাছের দাম পাইকারী বাজারেই তুলনামূলক বাড়তি পেয়েছি, ৩০০/- টাকার নিচে রুইকাতলা নাই, পাংগাস ২০০/- তাহলে সিন্ডিকেট এর প্রভাব বিলুপ্ত হইল কই। কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জেনেছি গত ২/৩ দিন যাবত চাদা দিতে হয়নি ঠিকই কিন্তু নতুন গ্রুপ আগের গ্রুপের স্থান দখলে নিতে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি এবং অস্তিত্ব জানান দিছে যা আমি নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছি...... শুধুমাত্র বোতলের লেবেল পরিবর্তন হয়েছে ভিতরের জিনিস একই রয়েগেছে, ১৮ বছরের ক্ষুধা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে যদিও কোনো ক্ষমতা এখনো পাইনি কিন্তু ময়দান তো ফাকা রাখা যাবে না!!

Insan
৯ আগস্ট ২০২৪, শুক্রবার, ৭:৫৪ পূর্বাহ্ন

শুধু তরকারি আর মাছের বাজার নয়। নিত্য পণ্যের মত জরুরী জীবন রক্ষাকারী ঔষধও গত এক বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে দুই গুণ তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অসুস্থ রোগীদের নিয়মিত ঔষধ চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে গেছে। অনতিবিলম্বে এই জায়গায় হাত দেয়া জরুরী।

জামশেদ পাটোয়ারী
৯ আগস্ট ২০২৪, শুক্রবার, ৭:১৬ পূর্বাহ্ন

All are fake info. Pls visit market

Rahul
৯ আগস্ট ২০২৪, শুক্রবার, ৫:৪৩ পূর্বাহ্ন

ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা প্রশংসার যোগ্য। এমন কি আন্দোলনের সময় ছাত্রদের রাস্তার মোড়ে খাদ্য ও পানি সরবরাহ করার দৃশ্য ছিল অচিন্তনীয় । এদেশ পরাজিত হবে না কোন দুর্বৃত্তদের কাছে ।

Kazi
৯ আগস্ট ২০২৪, শুক্রবার, ৪:১৫ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status