খেলা
‘এক কমপ্লেক্সে’ পুরো বিশ্ব
সামন হোসেন প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে
৮ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবারপ্যারিসের প্রাণকেন্দ্র থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে সেন্ট ডেনিসে তৈরি করা হয়েছে গেমস ভিলেজ। যেখানে জায়গা হয়েছে গেমসে অংশ নেয়া দশ হাজার অ্যাথলেটের। কোচ কর্মকর্তারাও থাকছেন সেখানে। বড় কন্টিনজেন্টের জন্য আলাদা আলাদা ভবন। ভিলেজের মাঝখানে রয়েছে ছোট্ট একটি লেক। তার দুই পাশে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে অ্যাথলেটদের। বাংলাদেশের ভবনের নম্বর ছিল ই-২২। এই ভবনে আরও ছিল আলবেনিয়া, উজবেকিস্তান, চিলি। ভবনের দুটি ফ্লোরে চারটি করে আটটি রুমে ছিল বাংলাদেশ। তৃতীয়তলায় ছিলেন কোচ, কর্মকর্তারা আর দ্বিতীয়তলায় খেলোয়াড়রা।
খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ, কর্মকর্তার বাইরে অন্য কারও গেমসের অ্যাক্রিডিটেশন থাকলেই ভিলেজে ঢোকার অনুমতি থাকে না। একদিন আগে আবেদন করে ঢুকতে হয় গেমস ভিলেছে। সেই সকল আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণ করে একদিন দুপুরে এক সহকর্মীকে নিয়ে গেমস ভিলেজে পৌঁছাই। ভিলেজ প্রাঙ্গণে পা রাখতেই বোঝা গেল পুরো বিশ্ব এই কমপ্লেক্সে। ছয় মহাদেশের বেশ কয়েকজন অ্যাথলেটকে চোখে পড়লো কয়েক মিনিটের মধ্যেই। কয়েক একর জায়গা নিয়ে হয়েছে এই ভিলেজ। গরমে হাঁটা অনেক দায়। তাই ভিলেজের মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট শাটল। সেই শাটলে করেই এক জায়গা থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেন অ্যাথলেটরা। ফুটবল, সার্ফিং, শুটিং ও আরও কয়েকটি খেলা প্যারিসের বাইরে হচ্ছে। ওই খেলার খেলোয়াড়রা ওই শহরগুলোর ভিলেজে আছেন। এ ছাড়া বাকি সব খেলার খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, কোচ সবাই সেন্ট ডেনিসের ক্যাম্পাসে। কয়েকশ’ বিল্ডিংয়ে থাকছেন নানা দেশের নানা ক্রীড়াবিদ। অ্যাথলেট আবাসনের দিকে গেলেই প্রথমে চোখ কাড়বে আমেরিকা। ৭ তলা বিশিষ্ট একটি বিল্ডিং পুরোটাই আমেরিকার কন্টিনজেন্টের জন্য। যার নিচতলা পুরোটাই ফাঁকা। একপাশে জিম আর অন্যপাশে কর্মকর্তারা বসে কাজ করছেন। ভবনের সামনেই ফুটকোর্ট। সেখানে দেখা গেল আমেরিকার বেশকিছু অ্যাথলেটকে। আমেরিকা ছাড়াও কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডও আলাদা আলাদা ভবনে থাকছেন। প্রত্যেকটি ভবন সাজানো হয়েছে দেশের পতাকা দিয়ে।
ভিলেজে পাঁচটি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে ভবনগুলো। বাংলাদেশ পড়েছে ‘ই’ ব্লকে। ভবনটির সামনে যেতেই চোখে পড়লো বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। ই ব্লকে ঢুকতেই চোখ কাড়বে রিফিউজি দল। চারতলা বিল্ডিংয়ে পুরোটাই রিফিউজি দলের জন্য। কোনো দেশের হয়ে খেলতে না পারা দলটি আইওসির পতাকাই তাদের সঙ্গী। আবাসনের পাশাপাশি গেমস ভিলেজে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ডাইনিং। আবাসন ভিন্ন ভিন্ন ব্লকে হলেও ডাইনিং এক জায়গায়। ডাইনিংয়ের অবস্থান ভিলেজের একেবারে মাঝে। সব ব্লক থেকে প্রায় সমান দূরত্ব। একেক দেশের খাদ্যাভ্যাস একেক রকম। তাই সুবিশাল ডাইনিংয়েও রয়েছে আসিয়ান, সাউথ এশিয়ান, আফ্রিকান, ভেজ-নন ভেজ নানা ব্লক। আছে মুসলিমদের জন্য হালাল কর্নার। অ্যাথলেট, কোচ, কর্মকর্তাদের আবাসন ও খাবারের ব্যয়ের কিছু অংশ সেই দেশের অলিম্পিক কমিটিকে বহন করতে হয়। গেমস শুরুর কয়েক মাস আগেই ভিলেজ ফি পরিশোধ করা হয়। অতিথিদের ডাইনিং আপ্যায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট অলিম্পিক কমিটিকে একদিন আগে বুকিং ও অর্থ পরিশোধ করতে হয়। সুবিশাল ভিলেজে রয়েছে রিক্রিয়েশন ব্যবস্থাও। খেলোয়াড়, কোচদের চাপ কাটানোর জন্য রয়েছে গেমিং জোন। সেখানে নানা ধরনের গেমের ব্যবস্থা রয়েছে। গেমসে একইদিন অনেক ভেন্যুতে অনেক খেলা চলে। ভিলেজে থাকা অনেক অ্যাথলেট-কোচ নিজেদের খেলা ও অনুশীলনের জন্য অন্য খেলায় যেতে পারেন না খুব একটা। তাই ভিলেজে কয়েকটি জায়ান্ট স্ক্রিন রয়েছে। শুয়ে, বসে খেলা দেখেন অনেকেই। আইওসির অফিসিয়াল পার্টনার স্যামসাং। ভিলেজে স্যামসাংয়ের সুভ্যেনির শপ রয়েছে। সেই শপে ক্যাপ, কি রিং, টি-শার্ট, মগ, ব্যাগ থেকে গেমসের সকল সুভ্যেনির রয়েছে। অ্যাথলেট ও দর্শনার্থী যে কেউ সেই শপ থেকে সুভ্যেনির কিনতে পারেন। অফিসিয়াল সুভ্যেনির শপ ও ভিলেজের মধ্যে হওয়ায় দাম একটু চড়া।
প্যারিস অলিম্পিক ও প্যারা অলিম্পিককে সামনে রেখেই তৈরি করা হয়েছে এই গেমস ভিলেজ। ১০০টির অধিক ভবন রয়েছে গেমস ভিলেছে। যা এরিমধ্যে বিক্রি করেছে দিয়েছে ফ্রান্স সরকার। যা আসর শেষে বুঝে নিবেন ক্রেতারা। আগামী ১১ই আগস্ট পর্দা নামবে অলিম্পিকের। ২৮শে আগস্ট শুরু হবে প্যারা অলিম্পিক, যা শেষ হবে ৮ই সেপ্টেম্বর।