খেলা
এখনই ঢাকায় ফিরছেন না বাংলাদেশের তিন কর্মকর্তা
সামন হোসেন প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে
৭ আগস্ট ২০২৪, বুধবারব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে গতকাল দ্বিতীয় ধাপে প্যারিস ছাড়ার কথা ছিলো বাংলাদেশের চার অ্যাথলেট। স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান প্যারিস থেকে সরাসরি লন্ডনের বিমান ধরেছেন। সাঁতারু সামিউর রহমান রাফি ও সোনিয়া খাতুন এবং আরচার সাগর ইসলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা ছিলো। সময় মতো প্যারিসের সারদে গল বিমান বন্দরে হাজিরও হয়েছিলেন। বডিং করিয়ে জানতে পারেন দোহা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের কোন বিমান ঢাকা যাচ্ছে না। এ কারনে তাদের আবার ফিরতে হয়েছে গেমস ভিলেজে। তাদের দুই একদিনের মধ্যে ঢাকা ফেরার কথা হয়েছে। তারা ফিরলেও এখনই দেশে ফিরছেন না বাংলাদেশের তিন কর্মকর্তা। সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এম বি সাইফ মোল্লা এবং অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রকিব মন্টু দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণেই প্যারিসে আরও কিছুদিন থাকতে চান। শেখ কামালের বন্ধু পরিচয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের মহাসচিবের দায়িত্ব আসা সৈয়দ শাহেদ রেজাও এখনই দেশে ফিরছেন না বলে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র। শেখ কামালের পদক নিতে দেশে ফেরত যাওয়া বাংলাদেশ কন্টিজেন্টের সেফ দ্য মিশন অপু নিরাপদ আশ্রয়ে আবারো আসতে পারেন প্যারিসে।
দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতা অপব্যবহার করে সাঁতার ফেডারেশনের দায়িত্বে আছেন এম বি সাইফ। সাংগঠনিক কোনো দক্ষতা আর সাঁতারের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও গোপালগঞ্জ কোটায় ২০১৭ সালে সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হন সাইফ। খেলাধুলাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ধীরে ধীরে জায়গা করেনে ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থায়। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থারও সাধারণ সম্পাদক। জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনেও। আট বছরে বিরাট সংগঠক বনে গেলেও তার সময়কালে উঠে আসেনি বলার মতো একজন সাঁতারু। অথচ সুবিধাভোগী এক কোচের ওপর ভর করেই তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশ-বিদেশে। সাঁতার দলের প্রতিটি বিদেশ সফরে সঙ্গি হয়েছেন তিনি। তার সময়কালে সাঁতারে বসাতে পারেননি একটি ইলেকট্রনিক্স স্কোর বোর্ড। তার স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে সাবেকরা সাঁতারে আসা ছেড়ে দিয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যহার করে এতটাই অপকর্ম করেছেন যে দেশে পট পরিবর্তনের পর ঢুকতেই সাহস পাচ্ছেন না। তাইতো গতকালের টিকিট বাতিল করে আপাতত প্যারিসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার সঙ্গে আছেন অ্যাথলেটিক্সকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া আব্দুল রকিব মন্টু। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য পদ ব্যবহার করে ফেডারেশনে চালাতেন একচ্ছত্র আধিপত্য। এক ইমরানুর রহমানের ওপর ভর করেই চালাতেন অ্যাথলেটিক্স।
অন্য অ্যাথলেটদের বঞ্চিত ইমরানকে সকল আন্তর্জাতিক ইভেন্টে পাঠিয়ে সঙ্গি হতেন তিনি। তার দুই মেয়াদের সময়কালে সাবেক কৃতী অ্যাথলেটদের ফেডারেশন ছাড়া করেছেন। ফেডারেশনের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদ খান চৌধুরী বলেন, ২০১৭ সালে আমরাই মন্টুকে ফেডারেশনে এনেছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে আমিসহ তোফাজ্জল হোসেন, শামীমা সাত্তার মিমু, মাহবুবা ইকবাল বেলি, মিলজার হোসেন, আমিনুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, মুজিবুর রহমান মল্লিক, নজির আহমেদ, মোহাম্মদ ইয়াহিয়ার মতো সাবেক কৃতী অ্যাথলেটদের ফেডারেশন ছাড়া করেছেন। যাদের নিয়ে ফেডারেশন চালাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগ অ্যাথলেট কিংবা সংগঠক না।’ মন্টুর দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির কারণে অ্যাথলেটিক্সের দৈন্যদশা আরও প্রকট হয়েছে জানিয়ে ফেডারেশনের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, দেশে পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শোনা যাচ্ছে মন্টু আর দেশে ফিরবেন না। তাই তো চুরি আড়াল করতে গতকাল ড্রাইভারকে পাঠিয়ে ফেডারেশন থেকে সকল কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেছেন। অথচ তার সময়ে অ্যাথলেটিক্সে ৮ কোটি ও
১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি ট্যালেন্ট হান্ট হয়েছে। তারও কোনো হিসাব নেই।’ মন্টুও ওপর ক্ষুব্ধ বর্তমান সময়ের ক্রীড়াবিদরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অ্যাথলেট বলেন, আমাদের নানাভাবে বঞ্চিত করেছেন মন্টু সাহেব। আমাদের স্পন্সের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমরা উনাকে ছাড়বো না।’ এসব আঁচ করতে পেরেই প্যারিসে আরও কিছুদিন থাকবেন মন্টু। শোনা যাচ্ছে এখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র হয়ে যুক্তরাজ্য পাড়ি জমাবেন বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের এই সাধারণ সম্পাদক। তবে পরিস্থিতি শান্ত হলে দেশে ফিরবেন অলিম্পিকের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা। দেশে ফিরলেও শেখ কামালের বন্ধু পরিচয়ে ক্রীড়াঙ্গণে দীর্ঘদিন দাবরিয়ে বেড়ানো এই কর্মকর্তা অলিম্পিকের দায়িত্বে কতোদিন থাকেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।
চোরগুলো নেই এমন একটি জায়গা ও কি অবশিষ্ট আছে !!!