ঢাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবার, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ নেতাদের বাসায় আগুন, নিহত ৪

স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে
৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবার

কিশোরগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যাপক  সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ত্রিমুখী এই সংঘর্ষকে ঘিরে জেলা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, শহরের পুরান থানা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর এবং জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। থানায় হামলা ও ভাঙচুরের চেষ্টা হয়েছে। রোববার জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে এসব হামলা, অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অঞ্জনা বেগম (৩৫) নামে এক নারীসহ অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে নারীসহ দু’জন দগ্ধ হয়ে এবং একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের নাম মবিন (৩৫) এবং দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া আরেক জনের পরিচয় প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া রুবেল আব্দুল্লাহ (৩২) নামে এক যুবক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অন্যদিকে এসব ঘটনায় অন্তত দুই শতাধিক আহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তাদের মধ্যে পুলিশ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও আন্দোলনকারীরা রয়েছেন। এদিকে নিহতদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের সময় দুইজন দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এই দুইজনের একজন অঞ্জনা বেগম। তিনি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল গ্রামের আলম মিয়ার স্ত্রী। অন্যদিকে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় শহরের শহীদী মসজিদ এলাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রুবেল আব্দুল্লাহ নামে এক যুবক মারা গেছেন বলে জানা গেছে।

 তিনি জেলার তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের চরতালজাঙ্গা গ্রামের আজহারুল ইসলামের ছেলে। রুবেল আব্দুল্লাহর বোন সুমাইয়া বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। অন্যদিকে নিহত মবিন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াইলের বাসিন্দা। তিনি যুবলীগ নেতা বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
একাধিক সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিকে ঘিরে রোববার সকাল থেকে শহরের পুরান থানা মোড়ে জমায়েত হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে সেখানে কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা জমায়েত হন। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগ অফিস এলাকায় জড়ো হতে থাকেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকাল ১১টার দিকে সেখান থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী পুরান থানা অভিমুখে রওয়ানা দেন। অন্যদিকে পুরান থানা এলাকা থেকে আন্দোলনকারীরা গৌরাঙ্গবাজার মোড় অভিমুখে রওয়ানা হন। গৌরাঙ্গবাজার মোড় এলাকায় উভয়পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে চলে এলে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের প্রতিরক্ষা ভেঙে গেলে রাজপথ দখলে নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় শহরের পুরান থানা এলাকা থেকে শুরু করে স্টেশন রোডের জেলা আওয়ামী লীগ অফিস পর্যন্ত সড়ক আন্দোলনকারীরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।

 একপর্যায়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা ছাড়াও কার্যালয়ের সামনে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রধান সড়ক দখলে রেখে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। হাজার হাজার ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো শহর। একপর্যায়ে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলাকারীরা বাসার গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে বহুতল ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের লেলিহান শিখা ভবনটিতে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তবে এর আগেই ভবনটিতে থাকা গাড়ি ও মোটরসাইকেলসহ ভবনটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন গুরুতর দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে একজন নারীসহ দুইজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। এদিকে বেলা ১টার দিকে আন্দোলনকারীদের দমনে অ্যাকশনে নামে পুলিশ। তারা আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এর জবাবে ইটপাটকেল ছোড়ে আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গুলি, সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে কেঁপে ওঠে শহর। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে।

এদিকে জেলা শহরের বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা নিতে যাওয়া আহতদের ভিড় দেখা গেছে। আহত আন্দোলনকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন। কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপ-পরিচালক) আকরাম উল্লাহ জানান, অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মারা যাওয়া ২ জনের লাশ হাসপাতালে রয়েছে। তাদের মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন পুরুষ (৫০) ও আরেকজন মহিলা (৩৫)। মহিলার নাম অঞ্জনা বেগম। এ ছাড়া পুরুষের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। হাসপাতালটিতে ২৫ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে ও ১৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া উন্নত চিকিৎসার জন্য ২ জনকে অন্যত্র রেফার্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে বিকাল ৪টায় কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন জানান, হাসপাতালে নিহত একজনের লাশ রয়েছে। তার নাম মবিন। এখানে মোট ৬৫ জন চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তাদের মধ্যে ১৬ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status