বাংলারজমিন
যশোরের রাজপথ ছাত্র-জনতার দখলে
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে
৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবারযশোরের রাজপথ ছাত্র-জনতার দখলে। নিজেদের জানমাল রক্ষার্থে নির্বিকার পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা। গতকাল সকাল থেকে মিছিলের শহরে পরিণত হয় যশোর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে দেশব্যাপী চলা অসহযোগ আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে পুরো শহর। এই অসহযোগ আন্দোলনকে সর্বাত্মক রূপ দিতে শহরের সব ধরনের দোকানপাঠ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সকল প্রকারের স্বল্প ও দূরপাল্লার যানবাহনের চলাচল বন্ধ ছিল। যশোরের ১৮টি রুটে চলাচল করেনি কোনো যাত্রীবাহী বাস। টার্মিনাল ছাড়েনি কোনো ট্রাক ও ট্যাঙ্কলরি। ফুয়েল পাম্পগুলো বন্ধ করে কর্মচারীরা ছাত্র আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছে। বন্ধ রয়েছে সব সিনেমা হল ও ফাস্টফুডের দোকান। সকালে কাঁচা বাজার খুললেও বেলা ১২টা থেকে সবকিছু বন্ধ করে দেয় ব্যবসায়ীরা। কেবল মাত্র ফার্মেসি ও খাবার হোটেল ছাড়া যশোর শহরের সব দোকানপাঠ বন্ধ রয়েছে।
সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা। আন্দোলন বেগবান করতে সকাল ১১টায় শহরের চাঁচড়া মোড় থেকে মনিহার পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পূর্ব ঘোষিত এই অসহযোগ আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে যোগ দিতে বিভিন্ন দিক থেকে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা চাঁচড়া মোড়ে জড়ো হতে থাকে। বেলা ১১টা থেকে সমাবেশ স্থলে চলে প্রতিবাদী গান, কবিতা ও বক্তৃতা। বেলা ১২টায় শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। মিছিলটি চাঁচড়া মোড় থেকে শুরু হয়ে রেলগেট, মুজিব সড়ক, প্রেস ক্লাব, পোস্ট অফিস পাড়া, এমএম আলী রোড, মাইকপট্টি, পাইপপট্টি, টিএন্ডটি কলোনি, রেল রোড, চৌরাস্তা, আরএন রোড হয়ে শহরের মনিহার চত্বরে পৌঁছায় দুপুর পৌনে ২টায়। প্রচণ্ড রৌদ্র উপেক্ষা করে মিছিল চলাকালে চাঁচড়া থেকে মনিহার পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে শত শত সাধারণ মা বোনেরা আন্দোলনরত ছাত্র জনতাকে দুই হাত নেড়ে অভিবাদন জানান এবং বাড়ি থেকে পানিসহ বিভিন্ন প্রকারের শুকনো খাবার এনে আন্দোলনকারীদের হাতে দিয়ে তাদের প্রতি সর্বস্তরের জনগণের সমর্থন প্রকাশ করেন। দীর্ঘ ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মিছিলে কমপক্ষে ১০-১৫ হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে কয়েক হাজার অভিভাবক অংশগ্রহণ করেন। মিছিলটি মনিহার চত্বরে পৌঁছে প্রায় একঘণ্টা সেখানে অবস্থান করার পর আন্দোলনকারীরা নিজ নিজ বাড়ি ঘরে ফিরে যায়। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এবং শান্তিপূর্ণ এই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতি সহর্মিতা প্রদর্শন করে জেলা পুলিশ প্রশাসন ও বিজিবির সদস্যরা কোনো প্রকার বাধা বা উস্কানি প্রদান করেননি। এমনকি যশোর চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ি ও যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার প্রধান ফটক বন্ধ করে থানা অভ্যন্তরে অবস্থান করে পুলিশের সদস্যরা হাত নেড়ে মিছিলকারীদের প্রতি তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করেন। অনেক পুলিশ সদস্য প্রাচীরের ওপর দিয়ে হাত বাড়িয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হাতে গোলাপ ফুল দিয়ে তাদের সাফল্য কামনা করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই গণবিস্ফোরণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আমরা নিজেদেরকে গণধিকৃত, জনরোষের শিকারে পরিণত করতে পারি না। ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আমরা পারিবারিক ভাবে নানা রকম হেনস্তার শিকার হচ্ছি। আমাদের ছেলেমেয়েরাও ছাত্র। তারাও এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমরা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে আমাদের ছেলেমেয়ে ও তাদের মায়েরা আমাদের ঘৃণা করবে। আমরা রাষ্ট্রের চাকরি করি। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়। আমরা সেই জনগণের সঙ্গে আর বেঈমানি করতে পারছি না।