বাংলারজমিন
কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন, ৪ সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবারবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদফা দাবি আদায়ে ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে কুষ্টিয়া শহর। বিক্ষোভকারীরা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসের গ্লাস (জানালা) ভাঙচুর, অফিসের সামনের চেয়ারে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর ও তাতে আগুন দেয়। এ ছাড়াও ট্রাফিক অফিস, জেলা পরিষদ চত্বরে ভাঙচুর ও মহাসড়কসহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে ৪ সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
গতকাল সকাল ১১টার দিকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের চৌড়হাঁস এলাকায় জড়ো হতে থাকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ, রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। মুহূর্তেই হাজার হাজার আন্দোলনকারী সেখানে উপস্থিত হলে জনসমুদ্রে পরিণত হয় চৌড়হাঁস মোড়। এ সময় সরকারবিরোধী মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে কুষ্টিয়া শহর। সেখানে পুলিশের উপস্থিতি দেখে আন্দোলনকারীরা তাদের ওপর ধাওয়া দিলে পুলিশ সেখান থেকে পিছু হটে। একপর্যায়ে সেখান থেকে বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে শহরের মজমপুর গেটের দিকে আসতে থাকে আন্দোলনকারীরা। সেসময় আন্দোলনকারীদের দখলে থাকে কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ মহাসড়কের প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা। শহরের মজমপুর মোড়ে ট্রাফিক অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা মূল শহর এনএস রোডে ঢুকে পড়ে। শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করে তাতে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। তারপর সেখান থেকে বিক্ষোভকারীরা জেলা পরিষদ চত্বরে ভাঙচুর চালিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে পালিয়ে যায় অবস্থানরত নেতাকর্মীরা। সেখানে বিক্ষোভকারীরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের গ্লাস ও চত্বরে থাকা চেয়ার ভাঙচুর চালাতে থাকে। সে সময় অফিসের চারিদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের খুঁজতে থাকে তারা।
পরে কার্যালয় চত্বরে রাখা শতাধিক চেয়ারে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এরপর বিক্ষোভকারীরা থানার দিকে চলে যায়। থানার সামনে পৌঁছালে সেখানে স্লোগান দিয়ে থানার ভেতরে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। সেখান থেকে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাস, একাত্তর টিভির শাহীন আলী ও তাদের ক্যামেরা পারসন গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর আন্দোলনকারীরা জিলা স্কুলের সামনে অবস’ান নিলে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর আন্দোলনকারীরা শহরের মোড়ে মোড়ে ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে অবস্থান নেয়। পুলিশের টিয়ারশেল ও গুলির শব্দে আতঙ্কিত হয় শহরের সাধারণ মানুষ। সে সময়ের রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষের দেখা মেলেনি। চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাস বলেন, আমি ও আমার ক্যামেরাম্যানসহ কয়েকজন সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়েছি। ক্যামেরা পারসন শরীরের বেশ কয়েক জায়গায় ছররা গুলি ঢুকে আছে। আমরা স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছি। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা তাপস কুমার বলেন, এখন পর্যন্ত ২৫ জন আহত আন্দোলনকারী হসপিটালে এসেছে। তাদের সকলের গায়ে রাবার বুলেট লেগেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছিল। একইভাবে শহরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। এ সময় পুলিশের গুলি অব্যাহত ছিল। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্ত নাথ মুঠোফোনে বলেন, আমরা এখনো মাঠে আছি। এখন কথা বলার সময় নেই বলে লাইনটি কেটে দেন।