খেলা
ট্র্যাকে হতাশ করে বোমা ফাটালেন ইমরানুর
সামন হোসেন, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে
৪ আগস্ট ২০২৪, রবিবারইনজুরি গোপন করে অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন ইমরানুর রহমান। প্যারিসের স্তাদে দ্য ফ্রান্সে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট শেষে নিজেই দিলেন এমন তথ্য। জানালেন তলপেটের পেশির ইনজুরির কারণে মার্চ থেকে অনুশীলনের বাইরে ছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের ডাক্তার তাকে দ্রুত অপরারেশনের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু ফেডারেশনের অনুরোধে ইনজেকশন নিয়ে অনুশীলন করেছেন। মাত্র তিন সপ্তাহের অনুশীলনে অংশ নিয়েছেন অলিম্পিকে। এ কারণেই হিটে আট জনের মধ্যে ষষ্ঠ হয়েছেন তিনি। দৌড় শেষ করেছেন ১০.৭৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে। যদিও বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রকিব মন্টু। ইমরানুর রহমানের ইনজুরির বিষয়টি জানতে চাইলে উল্টো সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের সেফ দ্য মিশন ইন্তেখাবুল হামিদ অপু। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা শুধু নেগেটিভ নিয়ে থাকেন। ইমরানুর ইতিহাস গড়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছেন। আর আপনারা আছেন এসব নিয়ে। পাশে দাঁড়িয়ে বিষয়টিতে সায় দেন ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রকিব মন্টু। তারা জানেনই না ইমরানুর রহমান ৪৫ জনের মধ্যে ২৫তম হয়ে ইভেন্ট শেষ করেছেন। প্যারিসের মূল শহর থেকে একটু বাইরে সেন্ট ডেনিসের স্তাদে দ্য ফ্রান্সে হচ্ছে অ্যাথলেটিক্স। সকাল থেকে এখানে অনুষ্ঠিত হয় হাইজাম্প, ডিসকাস থ্রো ও ১০০ মিটার স্প্রিন্টের প্রাথমিক পর্ব। বাছাই পর্ব দেখতেই স্টেডিয়ামের বাইরে লম্বা লাইন। গ্যালারিও প্রায় পরিপূর্ণ। প্রতিটি ইভেন্টেই তারা চিৎকার করে উৎসাহ দিচ্ছেন অ্যাথলেটদের। ট্রাক অ্যান্ড ফিল্ডের মূল আকর্ষণ ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ইমরানুরের ইভেন্ট ছিল গতকাল স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায়। স্তাদে দ্য ফ্রান্সের ট্রাকে ছয় নম্বরে হিটে নিজের সেরা টাইমিং করতে পারলেই ইতিহাসে নাম লেখাতেন দেশের দ্রুততম মানব। দৌড়াতেন দ্বিতীয় রাউন্ডে। সেটা পারলেন না ইমরানুর। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা দূরের কথা, নিজের সেরা টাইমিংয়ের কাছাকাছিও দৌড়াতে পারেননি তিনি। ১০.৭৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে ৪৫ প্রতিযোগীর মধ্যে হলেন ২৫তম। অথচ তার ক্যারিয়ার বেস্ট ১০.১১ সেকেন্ড। ট্র্যাকে হতাশ করে মিক্সড জোনে ইমরানুর বলেন, ‘আমি আসলে ফিট না। পায়ে ব্যাথা এ কারণে বেস্টটা দিতে পারেনি।’ আগের দিন মিডিয়া ভিলেজে অলিম্পিকে নামার রোমাঞ্চের কথা বলেছিলেন ইমরানুর রহমান। সেখানে এক দিনের ব্যবধানেই বললেন ফিট না। এ কারণ জানতে চাইলে শুরুতে অফ দ্য রেকর্ডে বলেন, মার্চ থেকে আমি ইনজুরিতে আছি। আমার পায়ের টিস্যু ছিড়ে গেছে। ডাক্তার আমাকে সার্জারি করাতে বলেছে। আমি মন্টু (ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক) স্যারকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু তিনি বলেছেন তোমার নাম চলে এসেছে। এখন বাদ দেয়ার সুযোগ নাই। তোমাকে খেলতে হবে। বাধ্য হয়েই সবকিছু মেনে নিয়ে আমি খেলেছি। কোনো নেতিবাচক কথা বলিনি।’ এতোবড় সত্য গোপন করে জাতির সঙ্গে প্রত্যারণা কেন করেলেন, জানতে চাইলে এই স্প্রিন্টার বলেন, ফেডারেশনকে জানিয়েছি। বলেছি আমার জায়গায় অন্যকাউকে নিতে, তারা সেটা করেনি। এখন এই প্রশ্ন আপনারা ফেডারেশনকে করতে পারেন।’ ইনজুরিটা কতোটা পিড়া দিয়েছে সেটা জানিয়ে ইমরানুর বলেন, ‘ট্র্যাকে দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়েছে আমি ১০০ মিটার শেষ করতে পারবো তো। কারণ, এই বছর এটাই আমার প্রথম ১০০ মিটার দৌড় ছিল।’ বিষয়টি সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ইমরান মিথ্যা বলছে। সে কখনও তার ইনজুরির কথা আমাদের বলেনি। সে বললে বিকল্প ছিল, আমরা তাদের সুযোগ দিতে পারতাম।’ এসবের বাইরে অ্যাথলেটিক্সে মন্টুর জ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। হিটে আট জনের মধ্যে ষষ্ঠ হয়ে দৌড় শেষ করেন ইমরানুর রহমান। বাদ পরে চলে যান মিক্সডজোনে। সেখানে ইমরানুর দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এরপর চলে যান ডোপ টেস্টে। দ্বিতীয় রাউন্ডে কোয়ালিফাই করলে কখনই ইমরানুর মিক্সডজোনে আসতেন না। ডোপটেস্টেও তাকে নেয়া হতো না। অথচ নিয়ম না জেনেই মন্টু আর সেফ দ্য মিশন অপু সাংবাদিকদের সঙ্গে চিৎকার করে বলতে থাকেন ইমরানুর দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে গেছে। এই যদি হয় কর্মকর্তাদের অবস্থা, তাহলে অ্যাথলেটদের কাছে এরচেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় কিভাবে।