ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

নয়া দৃশ্যপট

স্টাফ রিপোর্টার
৩ আগস্ট ২০২৪, শনিবারmzamin

এ এক নয়া দৃশ্যপট। জনতার ঢেউ বাঁধ ভেঙেছে। আছে হামলা-মামলা, গুম গ্রেপ্তারের ভয়। কিন্তু কোনো বাধাই থামাতে পারছে না জনস্রোত। বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ করছেন প্রতিবাদ, নেমে এসেছেন সড়কে। ছাত্র-জনতার হত্যার বিচার  চান তারা। চোখে তাদের রুদ্রমূর্তি। গতকাল ছুটির দিনেও সর্বত্র হয়েছে প্রতিবাদ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণমিছিল কর্মসূচি পালনে সকালেই আবতাবনগর ও উত্তরায় শিক্ষার্থীরা নেমেছিলেন প্রতিবাদ জানাতে। ছিলেন অভিভাবকরাও। জুমার নামাজের পর প্রতিবাদের স্রোত বেড়ে যায় কয়েকগুণ। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নেমে পড়েন তারা। বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন সাইন্সল্যাব মোড়, শাহবাগ, পল্টন, ইসিবি চত্বর, মিরপুর-১০ এ। উত্তরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। গুলিবিদ্ধ হন কয়েকজন। জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে মিছিল যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। শিক্ষার্থী-জনতার এই মিছিল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। দাবি তোলা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের। এ ছাড়াও দেশ জুড়ে হয়েছে গণমিছিল। এ সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে হবিগঞ্জ ও খুলনায় একজন করে ২ জন নিহত হন। লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় আহত হন অন্তত ১৫ জন। সিলেট, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, ফেনীসহ কয়েক স্থানে হয়েছে সংঘর্ষ-সংঘাত। এভাবে দেশ জুড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে গতকাল ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি পালিত হয়। 

বৃষ্টিতে ভিজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-মিছিল: গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা গণমিছিল ও বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীদের গণমিছিলটি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে থেকে শুরু হয়ে রামপুরা ব্রিজ ঘুরে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে যায়। সেখান থেকে আবারো রামপুরা ব্রিজ হয়ে দুপুর ১২টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে গিয়ে শেষ হয়। গণমিছিলের সামনে ও পেছনে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যও ছিলেন। 

আন্দোলনকারীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘আবু সাঈদ মরলো কেন প্রশাসন জবাব দে’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এরপর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শতাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পোশাক পরিহিত অনেকেই বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ ও মিছিল করেন। এখানেই অনেকেই ছিলেন স্কুলের শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে ছিলেন অভিভাবকরাও।

শহীদ মিনারে জনসমুদ্র: গণগ্রেপ্তার বন্ধ, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, আটক শিক্ষার্থী-জনতার মুক্তি, কারফিউ প্রত্যাহার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া ও অসংখ্য শিক্ষার্থী জনতাকে হত্যার দায়ে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষক-জনতার ডাকা ‘দ্রোহযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে এই যাত্রায় হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। যাত্রাটি বেলা সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হয়। এর আগে তারা অবস্থান নিয়ে পথ নাটক প্রদর্শন এবং গান পরিবেশন করেন। গানের মাঝে মাঝে বক্তব্যে রাখেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, সংস্কৃতিকর্মী, বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরপর মিছিল দোয়েল চত্বর, টিএসসি হয়ে শহীদ মিনার যায়। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে শহীদ মিনার এলাকা। সরজমিন দেখা গেছে, বেলা ২টা থেকেই আন্দোলনকারীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। একে একে মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। বিপুল পরিমাণ আন্দোলনকারীদের এই মিছিলের ধ্বনিতে প্রকম্পিত হতে থাকে প্রেস ক্লাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শহীদ মিনার এলাকা।

শহীদ মিনারে জাতীয় ও লাল পতাকা এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান, ব্যানার নিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। মূল ব্যানারে লেখা ছিল, ‘এই বিস্তর শ্মশান আমার দেশ না, এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না। এ সময় ‘রক্তের দাগ দিচ্ছে ডাক স্বৈরাচার নিপাত যাক’, ‘ দফা এক দাবি এক সরকারের পদত্যাগ,’ ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, শেখ হাসিনা জবাব দে’, ‘আমার ভাই কবরে খুনি কেন বাইরে’, ‘তোর কোটা তুই নে, আমার ভাই ফেরত দে’, ‘দিয়েছি তো রক্ত আরও দেবো রক্ত, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই, ‘লাঠি, গুলি, টিয়ারগ্যাস জবাব দিবে বাংলাদেশ, ‘যেখানে গুলি সেখানেই লড়াই, বিভিন্ন স্লোগানে শহীদ মিনার প্রকম্পিত করে তোলেন তারা। সেখানে তারা পথ নাটকও প্রদর্শন করেন।

যাত্রার শুরুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, এখন দাবি একটাই- এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে আনতে হবে। সরকারের কাছে কোনো কিছু চাওয়ার নেই। তবে অনেক বিচার বকেয়া রয়েছে। ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের’ বিচার করতে হবে। আর এখন প্রধান এজেন্ডা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তর কীভাবে হবে।

দ্রোহযাত্রায় অংশ নেন জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- সি আর আবরার, আসিফ নজরুল, শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ, সামিনা লুৎফা, উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা, লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সিপিবি’র সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রমুখ।

দ্রোহযাত্রায় ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম। তিনি বলেন, রোববারের মধ্যে কারফিউ প্রত্যাহার করতে হবে, সব গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে, বর্তমান সরকারকে শিক্ষার্থী-জনতা হত্যার দায়ে পদত্যাগ করতে হবে। এই দাবিগুলো যদি রোববারের মধ্যে পূরণ না হয় তাহলে সে দিন বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে গণমিছিল শুরু হবে।

উত্তাল সায়েন্সল্যাব-শাহবাগ: কোটা সংস্কার কর্মসূচির প্ল্যাটফরম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব ও শাহবাগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। ৯ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনকারীরা সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর আবারো সায়েন্সল্যাব মোড়ে গিয়ে নিজেদের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এ সময় প্রশাসন ও সরকারবিরোধী নানা স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।   

সরজমিন দেখা যায়, গতকাল সকাল থেকেই ধানমণ্ডি-২, সায়েন্সল্যাব, সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ এলাকায় ছিল ব্যাপক পুলিশি উপস্থিতি। তাদের সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরাও। এর মাঝেই পূর্ব ষোষিত কর্মসূচি সফল করতে গতকাল দুপুর ১টার পর থেকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে জড়ো হতে থাকেন ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, ধানমণ্ডি আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। কিছু সময়ের মধ্যেই শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ একে একে এলাকাটিতে কয়েকশ’ মানুষের জমায়েত হয়ে যায়। এ সময় তারা এলিফ্যান্ট রোডের মাথায় (ফুট ওভার ব্রিজের নিচে) অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের জমায়েত বাড়লে পুলিশ একপর্যায়ে এলিফ্যান্ট রোডের বাইতুল মামুর জামে মসজিদের সামনের ফুটপাথে অবস্থান নেন। আর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা নিউমার্কেটের গাউছিয়া এলাকায় সরে যান। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই দুপুর পৌনে দুইটার দিকে তারা সকলে একত্রিত হয়ে গণমিছিল শুরু করেন। মিছিলটি কিছুদূর এগিয়ে আবারো সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান করে। আমার ভাই কবরে-পুলিশ কেন বাইরে, ভুয়া ভুয়া, পুলিশ ভুয়াসহ বিভিন্ন স্লোগান দেয় তারা। বেলা তিনটার পর আন্দোলনকারীদের একটি পক্ষ তাদের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। কিন্তু এরপরও রাস্তা ছাড়তে রাজি হয়নি বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। তারা বিকাল ৪টা ১২ মিনিটে সায়েন্সল্যাব মোড় ছেড়ে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে রওনা করেন। তাদের পেছন পেছন পুলিশও অগ্রসর হয়। এ সময় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। কিছু সময়ের জন্য শাহবাগ এলাকা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শাহবাগে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা অবস্থানের পর আবারো তারা ফিরে আসেন সায়েন্সল্যাব মোড়ে। সেখানে অবস্থান নিয়ে আবারো তারা সরকার ও প্রশাসনবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।  বিকাল পাঁচটার পর সেখান থেকে তারা তাদের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করে যার যার গন্তব্যে ফিরে যান।

কওমি মাদ্রাসাছাত্র ঐক্য ও সাধারণ মুসল্লিদের প্রতিবাদ: কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে হত্যা ও বর্বর হামলার প্রতিবাদে এবং নিহতদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসাছাত্র ঐক্য ও সাধারণ মুসল্লিরা। শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের সিঁড়িতে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান নিয়ে শত শত ছাত্র ও মুসল্লিরা মিছিল বের করেন। মিছিলটি পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন, শাহবাগ হয়ে আবারো প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

সরজমিন দেখা গেছে, ছাত্র ও মুসল্লিরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে টিএসসি’র দিকে যেতে চাইলে শাহবাগ জাদুঘরের সামনে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেন। সেখানে তারা ৫ থেকে ৭ মিনিট অপেক্ষা করে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। সেখানে প্রায় ১০ মিনিট অপেক্ষা করে মিছিল সহকারে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ করেন। এরমধ্যে হাইকোর্ট ও জাদুঘরের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন তারা।

ইসিবি চত্বর ও মিরপুরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি বাস্তাবায়নে রাজধানীর ইসিবি চত্বর ও মিরপুর-১০ এ বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৫টার দিকে কয়েকশ’ আন্দোলনকারী এই দুই এলাকায় একত্র হয়ে বিক্ষোভ করেন। দুপুর ৩টা থেকে জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনকরীরা। এখানে বিক্ষোভ হলেও সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। এ ছাড়াও বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য উপস্থিত ছিলেন। 

শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদ ও সরকারের পতন চায় উদীচী: কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। গতকাল সকাল ১১টার পর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই সাংস্কৃতিক সমাবেশে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের হারিয়েছি, বন্ধুদের হারিয়েছি। ছিল ছাত্রদের কোটা আন্দোলন কিন্তু এখন তা বাংলার মানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। যা কিছু ঘটেছে তার দায় সরকার এড়াতে পারে না।

সহ-সভাপতি জামশেদ আনোয়ার বলেন, যারা যৌক্তিক কোটা আন্দোলনের সঙ্গে ছিল সরকার তাদের বিভিন্ন তকমা দিয়েছে। অথচ কোটি কোটি টাকা লুট, হত্যা, গুম করা হচ্ছে সরকারের অধীনে, তাদের বিচার নেই। আমরা অনতিবিলম্বে এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন চাই। প্রতিটি জায়গায় নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর যেভাবে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ সময় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগরের সভাপতি ইকবাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আসিফ নূরসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।প্রতিটি বু

বুলেটের বিচার চাইলেন মেডিকেল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা: গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ও এ নিয়ে সৃষ্ট সংঘর্ষে শিক্ষার্থী ও জনসাধারণ হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশে বলা হয়, আমরা প্রতিটি বুলেটের বিচার চাই, প্রতিটি হত্যার বিচার চাই।’

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে এই সমাবেশে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুর শাকুর খান বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বৃদ্ধদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার শিক্ষা দিয়েছে। সারা পৃথিবীর ইতিহাসে আছে, আন্দোলন যখন চলে, ষড়যন্ত্রও তখন চলে। দিনে দিনে দেনা হয়েছে অনেক। এ দেনা শোধ করে আগামীতে সুন্দর স্বাধীন বাংলাদেশ, যেখানে নিপীড়ন থাকবে না। আগামীতে আমরা দেখবো, স্বাধীন দেশের সাধারণ নাগরিকের মতো এ দেশের মানুষ কথা বলতে পারবে। তিনি বলেন, ট্যাক্সের টাকায় কেনা গুলিতে শিক্ষার্থী ও জনতা গুলিবিদ্ধ, মৃত। সারা সমাজ ক্ষতবিক্ষত। সমগ্র জাতি আজ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে দিন অতিবাহিত করছে। আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সমাবেশে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। এরপর তারা একটি মিছিল বের করেন।

সরকারের পদত্যাগ দাবি নিপীড়নবিরোধী শিল্পী সমাজের: গতকাল সকাল ১১টার দিকে ‘গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পী সমাজ’ আন্দোলনে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত, বিচার ও হত্যার দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগের দাবি করেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে দৃশ্যশিল্পী, আলোকচিত্রশিল্পী, পারফরম্যান্সশিল্পী, সংগীতশিল্পী, কবি, লেখক, গবেষক, স্থপতি, শিল্প সংগঠকসহ সাধারণ নাগরিকরা অংশ নেন। শিল্পীরা হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য নিয়ে দীর্ঘ ক্যানভাসে লাল রঙের প্রতিবাদী চিত্র অঙ্কন করেন। তারা ‘আস্থা-অনাস্থা’ নামের একটি বেদনাবিধুর আবেগময় পারফরম্যান্স আর্ট পরিবেশন করেন। আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য ‘জনতায় আস্থা, স্বৈরাচারে অনাস্থা’ এই স্লোগানসহ ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ এমন স্লোগান দেয়া হয়।
এ সময় বেসরকারি সংস্থা ব্রতী ও উত্তরসূরির কর্ণধার শারমিন মুর্শিদ বলেন, এই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আমাদের সাহসী হতে শিখিয়েছে। ন্যায়সংগত অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের এই আত্মদান যেন বৃথা না যায়, সে কারণে সর্বস্তরের মানুষকে পথে নামতে হবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। লেখক রেহেনুমা আহমেদ বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঠিক সংখ্যা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। বিভিন্নভাবে ২১২ জনের মৃত্যুর কথা জানা গেছে। তবে প্রকৃতপক্ষে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। 

এ ছাড়াও আরও বক্তব্য রাখেন- কবি সাখাওয়াত টিপু, শিল্পী সুমনা সোমা, শিল্পী মোস্তফা জামান প্রমুখ। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন- আলোকচিত্রী ইমতিয়াজ আলম বেগ, শিল্পী শেহজাদ চৌধুরী, আমিরুল রাজীব, চিত্রশিল্পী কাজী তাহসিন আগাজ অপূর্ব, নুজহাত তাবাসসুম আনন, অসিত রায়, সংগীতশিল্পী বিথী ঘোষ, কৃষ্ণকলি, আলোকচিত্রশিল্পী মেহবুবা মাহজাবীন হাসান, আর্কাইভিস্ট রীশাম শাহাব, কবি শাওন চিশতি প্রমুখ।

শিল্পী সমাজ তিনটি দাবি জানান। এগুলো হলো- গণগ্রেপ্তার ও গণমামলা বন্ধ করে অবিলম্বে আটককৃত ছাত্র-জনতাকে মুক্তি দেয়া, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার দলীয় গুণ্ডাবাহিনী মুক্ত করা এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ। এরপর তারা সাতমসজিদ সড়ক হয়ে শোভাযাত্রা করে ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কে গিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন। সভা শেষে শনিবার বিকাল ৩টায় ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরে সংগীতশিল্পীদের আয়োজনে প্রতিবাদী সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

‘ন্যায্য দাবির কথা বললেই গুলি করা হচ্ছে’: কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের গুলি করে হত্যা এবং গণগ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তারা বলেন, দেশে একটা ভয়ের রাজত্ব কায়েম করছে। মানুষের জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই। ন্যায্য দাবির কথা বললেই গুলি করা হচ্ছে।
গতকাল বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজধানীর বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এ নিন্দা জানান। এ সময় স্বাধীন বাংলাদেশে এটা মোটেও কাম্য নয় জানিয়ে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, দেশের মানুষ মহা আতঙ্কে দিন পার করছে। যাকে-তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ঘরে ঘুমাতে পারছে না। অবিলম্বে সব হত্যার বিচার এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

পাঠকের মতামত

স্বৈরাচার রিরোধী এ আন্দোলন !

Farid
৩ আগস্ট ২০২৪, শনিবার, ২:২৩ অপরাহ্ন

ছাত্র জনতার বিজয় হবে, ইনশাআল্লাহ

Arifur Rahman
৩ আগস্ট ২০২৪, শনিবার, ১২:২৬ অপরাহ্ন

স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর ও। একটি নিরাপদ বাংলাদেশ চাই, বলতে হচ্ছে।

Md. Symun Hossain
৩ আগস্ট ২০২৪, শনিবার, ১২:২২ অপরাহ্ন

ইংরেজি লেখা ব্যানার বেশী ব্যবহার করুন।

parvez
৩ আগস্ট ২০২৪, শনিবার, ১২:০৬ অপরাহ্ন

ইনশাআল্লাহ বিজয়ী আসবে...

hakimmdlokman
৩ আগস্ট ২০২৪, শনিবার, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন

Allah is real justice.Allah help them.

M A Rahim
৩ আগস্ট ২০২৪, শনিবার, ৯:৪৮ পূর্বাহ্ন

এটা কেবল শুরু আমরা আর হারবোনা এই ধরনের সম্মিলিত অন্দোলন আগে কখনো দেখিনি অনেক ভালোবাসা প্রীতি ও অভিনন্দন প্রিয় সহযুদ্ধাদের প্রতিটি রক্ত বিন্দুর হিসাব দিতে হবে অন্যথায় কোনো সমঝোতা নয়।

Rashedul Hasan
৩ আগস্ট ২০২৪, শনিবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন

ছাত্র জনতার বিজয় হবে, ইনশাআল্লাহ

Minir
৩ আগস্ট ২০২৪, শনিবার, ৮:১২ পূর্বাহ্ন

৭১ দেখিনি,দেখছি ২০২৪, জেগেছে বাংলা, জেগেছে বিশ্ব বিবেক, জাগ্রত হয়নি শুধু নির্লজ্জ কিছু মানুষ এর বিবেক,,,

H M MAHFUJUR RAHMAN
৩ আগস্ট ২০২৪, শনিবার, ৫:৩৬ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status