বাংলারজমিন
নিজেদের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেডে আহত পুলিশ আসামি হলেন শিক্ষার্থীরা
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
৩১ জুলাই ২০২৪, বুধবারসোমবার চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের চেষ্টা করেন কয়েকশ’ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ছিলেন বিভিন্ন স্কুল- কলেজের ছাত্রী। একপর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সে সময় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দুইজন পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হন। এদের মধ্যে এক পুলিশ সদস্যের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতে চোখে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন একজন উপ-পরিদর্শক। ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজও এসেছে গণমাধ্যমে। তবে মোশাররফ হোসেন নামে ওই পুলিশ কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের ছোড়া ককটেলে আহত হয়েছেন উল্লেখ করে বিস্ফোরক আইনে মামলা করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৩০শে জুলাই) কোতোয়ালি থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলার ভিত্তিতে এরমধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরজমিন জানা যায়, সোমবার বিকাল ৩টার দিকে জামাল খান প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশের ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তবে সেখানে সকাল থেকেই বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেন। দুপুরে বিজিবি ও সেনাসদস্যরা সেখানে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে সেখানে সমাবেশ করতে না পেরে পার্শ্ববর্তী চেরাগী মোড় এলাকায় জড়ো হতে থাকেন তারা। এ সময় পুলিশ দুই শিক্ষার্থীকে আটক করে প্রিজন ভ্যানে তোলার চেষ্টা করেন। সে সময় শিক্ষার্থীরা ভ্যান ঘেরাও করেন, অনেকে গাড়ির সামনে বসে পড়েন। একপর্যায়ে পুলিশ প্রিজন ভ্যানটি নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীরা কিছুটা দূরে গিয়ে কদম মোবারক মসজিদের সামনের সড়কে বসে পড়েন। তাদের অধিকাংশই ছিলেন নারী শিক্ষার্থী। জানা যায়, সে সময় কদম মোবারক মসজিদের সামনে বসে পড়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। তাদেরকে ঘিরে সেখানে দাঁড়ান পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কিছু সাংবাদিক। এ সময় হঠাৎ চেরাগী পাহাড় প্রান্ত থেকে পুলিশ সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সেই অবস্থান লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। পাশাপাশি তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। এ সময় শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি থাকা তিন পুলিশ সদস্য মাথায় ও চোখে গুরুতর আঘাত পান। আহত হন তিন সংবাদকর্মীও।
আহত পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- সিএমপি কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্তী, এসআই মোশাররফ হোসেন ও এসআই মেহেদী হাসান শুভ। আহত সাংবাদিকরা হলেন- নিউজ টোয়েন্টিফোরের ক্যামেরা পারসন আবু জাবেদ, ডেইলি স্টারের ফটো করেসপন্ডেন্ট রাজীব রায়হান ও বণিক বার্তার আজিম অনন। এদের মধ্যে কোতোয়ালি থানার এসআই মোশাররফ হোসেন চোখে মারাত্মকভাবে আহত হন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তবে পুলিশের দাবি, শিক্ষার্থীদের ককটেলের আঘাতে এসব পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় মঙ্গলবার দায়েরকৃত মামলায়ও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন সাংবাদিকের জানান, টিয়ারশেলের পাশাপাশি বিকাল চারটার দিকে চেরাগী পাহাড়ের দিক থেকে এক পুলিশ সদস্য প্রথমে একটি সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে। সেটি বিস্ফোরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পর মুহূর্তে আরেকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। ওই সময় গ্রেনেডটি এসআই মোশাররফ হোসেনসহ পুলিশ সদস্য ও কর্তব্যরত সাংবাদিকদের সামনে বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তেই হেলমেট পরা অবস্থায় এসআই মোশাররফকে রক্তাক্ত হয়ে হেলমেট খুলে ফেলতে দেখা যায়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘পুলিশ নারী শিক্ষার্থীদের অবস্থান লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এ সময় নিজেদের সাউন্ড গ্রেনেডে নিজেরাই আহত হয়েছেন। আর এখন শিক্ষার্থীদের ককটেলের আঘাতে তারা আহত হয়েছেন উল্লেখ করে মামলা করেছে। বিষয়টি আসলে হাস্যকর।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম ওবায়দুল হক মানবজমিনকে বলেন, সোমবার চেরাগী পাহাড় মোড়ে শিক্ষার্থীদের আড়ালে নাশকতাকারীরা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এই ঘটনায় ৩০০-৪০০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা কোনো ককটেল ছোড়েননি ও পুলিশ সদস্যের সাউন্ড গ্রেনেডে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে- ‘এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই অভিযোগ সত্য নয়। সব যাছাই- বাছাই করেই মামলা রুজু হয়েছে।’
একই কথা বললেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র এডিসি তারেক আজিজ। তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশ সদস্যের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। সেই ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে ২০ জনকে আটক করা হয়েছিল। পরে যাচাই-বাছাই করে ১৬ জনকে পরিবারের সদস্যদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ওই ঘটনায় বিস্ফোরণ ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলায় এ পর্যন্ত ৩৩টি মামলা হয়েছে। আর আটক হয়েছেন ১০৬৬ জন। এরমধ্যে মহানগরে ২২টি মামলায় আটক করা হয়েছে ৫৬৬ জনকে। আর উপজেলায় ১১টি মামলায় ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটককৃতদের অধিকাংশই বিএনপি -জামায়াতের নেতাকর্মী। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মহানগরে ৩৪ জন ও উপজেলায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সত্যিই কি সত্য উঠে গেছে।