অনলাইন
ইন্টারনেটবিহীন তথ্যহীনতা এবং....
আব্দুল কাইয়ুম
(৬ মাস আগে) ২৩ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:০৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ২:২৫ অপরাহ্ন

অবাধ তথ্যপ্রবাহের এই যুগে তথ্যহীনতার আঁধারে ডুবে আছে গোটা দেশ। জনজীবন যেন স্থবির। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছে সাধারণ জনগণ। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কোন পথে যাচ্ছে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। ইন্টারনেটের কল্যাণেই গোটা বিশ্বকে একটি গ্রামের সঙ্গে তুলনা করা যায়। তবে বর্তমানে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় যেন গোটা বিশ্ব থেকেই বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ। যেহেতু আমাদের বৈশ্বিকভাবে একটি সমৃদ্ধশালী জনগোষ্ঠী হয়ে ওঠার প্রবণতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখে সে পথে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে অনেকটাই থমকে দাঁড়িয়েছে। দেশের সকল মানুষ গোটা বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেশের কোথায় কখন কী ঘটছে আমরা ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে তা মুহূর্তের মধ্যেই জানতে পারতাম। তবে এখন ইন্টারনেট সেবা সচল না থাকায় আমরা যেন তথ্যের আঁধারে তলিয়ে গেছি। কোনো কিছুই আমাদের জানার সুযোগ হচ্ছে না। পত্র-পত্রিকা এবং দেশের স্যাটেলাইট চ্যানেলে যেটুকু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেটুকুই আমাদের ভরসা। তবে এ বিষয়েও আমরা সন্দিহান যে দেশের গণমাধ্যমগুলো কি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সবিস্তারে জনগণকে জানাতে পারছে?
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি হুট করেই এমন হয়নি। আমরা সবাই অবগত কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ এমন বিপর্যয়ের তোপে পড়েছে। আমরা দেখেছি কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশের সকল শিক্ষার্থী কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছে। জানা মতে স্বাধীনতার পর থেকে দেশে এত বড় ছাত্র আন্দোলন হয়নি যেখানে এত শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে। গণমাধ্যমের সর্বশেষ তথ্যমতে চলমান পরিস্থিতিতে প্রায় দুশতাধিক নিহত হয়েছেন। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কীভাবে রক্তাক্তের পর্যায়ে পৌঁছালো। কেন এতগুলো জীবন ঝরে পড়লো। বিশেষ করে স্যাটেলাইট টেলিভিশনের পর্দায় আমরা রংপুরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের নিহত হওয়ার যে চিত্র দেখেছি সেটা মেনে নেয়া যায় না। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ওই করুণ মৃত্যুর পরই ছাত্র আন্দোলন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সরকার চাইলেই কি এই পরিস্থিতি এড়াতে পারতো না? কোটা বিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকারকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ছাত্রদের সমস্যা সমাধানের পথ তৈরির আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু সরকারের তখন এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়নি। দেশের এতগুলো প্রাণহানি ঘটার পর, রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পর সরকার কোটা সংস্কারের দাবি পূরণে যেভাবে ত্বরিত আগানোর চেষ্টা করছে। দেশে কর্মসংস্থানের যে সংকট তা নিরসনে দেশে ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসার প্রসারে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় তা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমরা জানি হয়তো আবারো দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে কিন্তু গত কিছুদিন সেবাটি বন্ধ থাকার কারণে এই খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যে ক্ষতিসাধিত হয়েছে তার দায় কী রাষ্ট্র বহন করবে?
এ ছাড়া গত কয়েকদিনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকা এবং দেশে কারফিউর ফলে দেশের সার্বিক অর্থনীতি প্রায় থমকে গিয়েছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ। একধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে মানুষ। আয় রোজগার বন্ধ। পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি না হলে শ্রমজীবী মানুষের সঙ্কট আরও তীব্র হবে।
পাঠকের মতামত
১৮ জুলাই রাত থেকে অন্তর্জাল বিহীন এক অস্বাভাবিক জীবনে প্রবেশ ঘটে বাংলাদেশের জনগণের! অন্তর্জাল বিচ্ছিন্ন হয়ে জনগণ আটকে পড়ে এমন এক জালে যাতে তাদের দমবন্ধ হাঁসফাঁস অবস্থায় পতিত হতে হয়। এ এক অসহনীয়, অস্থির পরিস্থিতি!!