ঢাকা, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

লাশের জন্য অপেক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার
২৩ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবারmzamin

নির্বাক সানজিদা আক্তার। কাঁদতেও পারছিলেন না। শুকিয়ে গেছে তার চোখের পানি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন বড় ভাই মনির হোসেন (২৮)-এর মরদেহ নেয়ার জন্য। ময়নাতদন্তের জন্য তার ভাইয়ের লাশ রাখা মর্গে। ভাইয়ের মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গেছেন তিনি। চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় শুক্রবার পুলিশের গুলিতে নিহত হন মনির হোসেন। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে মনির ছিলেন সবার বড়। তার আয়ে চলতো পুরো পরিবারটি। বাড়িতে মনিরের বয়স্ক বাবা-মা আছেন। অসুস্থ থাকায় বাবা কোনো কাজ করতে পারেন না। সোমবার মর্গের সামনে মনিরের লাশ গ্রহণ করতে অপেক্ষায় ছিলেন আরও বেশ কয়েকজন স্বজন। 
শুধু নিহত মনিরের স্বজনেরাই নন, সহিংসতার ঘটনায় নিহতদের অনেক স্বজনের ভিড় দেখা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে। তাদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে মর্গ এলাকার পরিবেশ। নিহতদের লাশ গ্রহণ করতে দুই-দিন ধরে অপেক্ষায় আছেন স্বজনরা। সরজমিন দেখা যায় কেউ ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ নিয়ে এম্বুলেন্সে ছুটছেন, আবার কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রিয়জনের মরদেহের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। 
৩৬ বছর বয়সী মো. রাজু সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শুক্রবার বিকালে শনিরআখড়া এলাকায় তিনি বুকে গুলিবিদ্ধ হন। তার স্বজনরা জানান, বাজার করতে তিনি বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। পরে সড়কে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। সেখান থেকে হাসপাতালে নেয়া হয়। গতকাল তার স্বজনেরা লাশের অপেক্ষায় ছিলেন মর্গের সামনে। 
নিহত মনির হোসেনের বোন সানজিদা আক্তার বলেন, চল্লিশ বছর ধরে আমরা ঢাকার ভাটারা থানা এলাকায় থাকি। এখানে সবাই আমাদের  চেনে। আমাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের ঝালকাঠি। শুক্রবার ভাইয়া দুপুরের দিকে বের হন। এবং তিনি বাসা থেকে বের হওয়ার আগে বলে যান, একটা পাসপোর্ট ফটোকপি করতে যাচ্ছি। এখানে গলিতে তেমন কোনো ফটোকপির দোকান নেই, যা আছে সেগুলো মেইন রাস্তার দিকে। তিনি একটি এজেন্সিতে কাজ করতেন। বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ করে ওই এজেন্সি। কিন্তু বাইরে বের হয়ে ভাইয়া আর বাসায় ফিরে আসেননি। ওই দিন বিকালের দিকে তিনি পুলিশের গুলিতে আহত হন। তাকে তার পরিচিতরা প্রথমে এম জেড মেডিকেলে নেন। সেখান থেকে চিকিৎসকরা ঢাকা মেডিকেলে পাঠায়। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেয়ার পরে ভাইয়াকে ভর্তি করে নেয়া হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে আমরা রামপুরা পর্যন্ত যাই। কিন্তু এই গোলাগুলির মধ্যে ভয়ে কোনো রাস্তা চিনতে পারছিলাম না। যে রাস্তায় যাই মনে হয়েছিল গুলি খেতে হবে। পরে কয়েকবার চেষ্টা করেও পারিনি রাতে হাসপাতালে যেতে। এভাবে আমাদের নির্ঘুম কেটে যায় সারারাত। পরে শনিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেলে এসে দেখি ভাইয়া মারা গেছেন। 
তিনি বলেন, ভাইয়ার রক্তের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এই গোলাগুলির কারণে চাইলেও কেউ রক্ত দিতে আসতে পারেনি। আমরা চেয়েছিলাম ভাইয়া তো এমনিতেই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছে তার আর ময়নাতদন্ত করা না হোক। কিন্তু শাহবাগ থানা থেকে অনুমতি দিলেও ভাটারা থানা থেকে অনুমতি দেয়নি। যেন ময়নাতদন্ত না হয় তার জন্য দু’দিন ধরে সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি; শেষ পর্যন্ত ময়নাতদন্ত করতে হয়েছে। 
তিনি বলেন, আমার ভাইয়ার আয়ে সংসার চলতো। বাড়িতে বাবা-মা দুজনে অসুস্থ। এখন আমরা কীভাবে কী করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার ভাইয়া তো কোনো রাজনীতি করতো না। এখন ভয়ে কিছু বলতেও পারছি না, কার কাছে বিচার চাইবো আমরা। ভাইয়ার দাফনের জন্য আজিমপুর, ভাটারা, বাঁশতলাসহ তিনটা কবরস্থানে গিয়েছি। কোথাও দাফন করতে দেয়নি। অনেক চেষ্টা করেছিলাম পারিনি। এই বিপদের সময় কেউ হেল্প করতেও আসেনি ভয়ে। কবরস্থান থেকে বলা হয়, তারা এই আন্দোলনের কোনো লাশই দাফন করছে না। 
ঢাকায় লাশ দাফনের সুযোগ না পাওয়ায় মনিরের লাশ বরিশালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান তার বোন। 
 

পাঠকের মতামত

ভাইয়ার দাফনের জন্য আজিমপুর, ভাটারা, বাঁশতলাসহ তিনটা কবরস্থানে গিয়েছি। কোথাও দাফন করতে দেয়নি। অনেক চেষ্টা করেছিলাম পারিনি। এই বিপদের সময় কেউ হেল্প করতেও আসেনি ভয়ে। কবরস্থান থেকে বলা হয়, তারা এই আন্দোলনের কোনো লাশই দাফন করছে না। ------ কারন সে রাজাকার, যদিও তার জন্ম ৯০ এর পরে। সেলুকাস ! কি বিচিত্র এই দেশ ! !

parvez
২৪ জুলাই ২০২৪, বুধবার, ১:৪৯ অপরাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status