শেষের পাতা
সিলেটে ছাত্রলীগ কর্মীদের মহড়া শাবিতে অবরোধ
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৭ জুলাই ২০২৪, বুধবারকোটা সংস্কার আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিকে ঘিরে মঙ্গলবার দিনভর সিলেটে উত্তেজনা বিরাজ করে। বিকালে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কামরান চত্বর এলাকায় অবস্থান নিলে ছাত্রলীগ ধাওয়া করে। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে; ছাত্রলীগ কর্মীরা হাতে থাকা রামদা, লোহার রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে তাদেরকে পিটিয়েছে। পরে তারা কুদরতউল্লাহ মসজিদের ভেতর থেকে চলে যান। এ ঘটনার পর ছাত্রলীগ কর্মীরা নগরে সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে। বিকাল ৩টার দিকে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ কর্মীরা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এসে অবস্থান নেন। জেলা ও নগর ছাত্রলীগের চার নেতার নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে জামায়াত ও শিবিরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় খবর আসে নগরের কোর্ট পয়েন্ট ও কামরান চত্বর এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন।
এ খবরে শহীদ মিনার এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সশস্ত্র অবস্থায় ছাত্রলীগ কর্মীরা মিছিল নিয়ে কোর্ট পয়েন্টে যায়। ওই সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনে ৭০ থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী কামরান চত্বরে অবস্থান করছিলেন। ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয়। এতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কয়েকজনকে এ সময় মারধর করা হয়। পরে ছাত্রলীগ কর্মীরা মিছিল নিয়ে ফের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় চলে আসেন। তবে ধাওয়ার সময় কোর্ট পয়েন্ট, কামরান চত্বর, সুরমা পয়েন্ট, বন্দরবাজার এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। ওই সব এলাকায় যানবাহন চলাচল কমে আসে। ছাত্রলীগ কর্মীরা সরে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। শহীদ মিনার এলাকায় ছাত্রলীগের অবস্থানের সময় নগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীদারের নেতৃত্বে যুবলীগের নেতাকর্মীরা চৌহাট্টা থেকে আম্বরখানা পর্যন্ত মিছিল করেন। একপর্যায়ে তারা চৌহাট্টা এলাকায় ঘণ্টাখানেক অবস্থান করেন। বিকালে নগরের এই অবস্থায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়। এদিকে; বিকাল ৩টার দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে জড়ো হয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ কর্মীরা গোলচত্বর এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় জামায়াত ও শিবিরের বিরুদ্ধে সেøাগান দেয়। পরে সমাবেশ করে তারা শাহপরান হলের দিকে চলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ছিল বিকাল ৪টায়। ছাত্রলীগ কর্মীরা চলে যাওয়ার পর বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর এলাকায় অবস্থান করতে থাকেন। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বাইরে থেকে ক্যাম্পাসে এসে ঢুকছিলেন। এ সময়বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র দেখে ভেতরে ঢুকতে দেয়ায় কয়েকশ’ শিক্ষার্থীর জটলা বাধে মূল ফটকে। একপর্যায়ে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীরা লাঠিসোটা হাতে নিয়ে জোরপূর্বক ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হাজারো শিক্ষার্থী অবস্থান নেন ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে।
এ সময় তারা কোটা সংস্কারের পক্ষে স্লোগান দেন। তাদের অবস্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের প্রভোস্টরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। শিক্ষার্থীরা এ সময় অভিযোগ করে জানায়; কোটা সংস্কার আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। অনেককেই নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ কারণে শিক্ষার্থীরা হলে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসেও তাদের ওপর চোখ রাঙানি রয়েছে। এই অবস্থায় ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানান তারা। বলেন; ১৪ই জুলাই রাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের ওপর হামলা করেছে। এই হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন রহস্যময় নীরবতা পালন করছে। জবাবে প্রভোস্ট বডির সদস্যরা শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেন- ক্যাম্পাসে যাতে নিরাপত্তা থাকে সে ব্যাপারে তারা সচেষ্ট রয়েছেন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। বলেন- হলে কোনো সমস্যা হলে এর দায়ভার তারা নেবেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধান করতে তারা সচেষ্ট রয়েছেন। একইসঙ্গে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ ভাবে কর্মসূচি পালনের জন্য আহ্বান জানান প্রভোস্ট বডির সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করে বিকাল সোয়া ৫টার দিকে প্রধান ফটকে এসে অবস্থান নেয়। হাজারো শিক্ষার্থী অবস্থান নেয়ার কারণে ফটকের সামনে থাকা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে কোটা সংস্কারের পক্ষে স্লোগান দেয়।
এ সময় নগর পুলিশের শতাধিক সদস্য অদূরে দাঁড়িয়ে থাকে। পুলিশকে বাইরে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। তবে; শিক্ষার্থীরা ফটক ছাড়া অন্য কোথাও অবস্থান না করার কারণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। প্রায় দেড় ঘণ্টা অবস্থানের পর সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা সমাবেশ শেষ করে কর্মসূচির সমাপ্ত করে। এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব সমাবেশে জানান- কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচিতে পুলিশ ও ছাত্রলীগ হামলা করার সাহস কোথায় পেলো। হামলা ও মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের দমানো যাবে না বলে জানান তিনি। ভার্চ্যুয়ালি পরবর্তীতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়ে তিনি দিনের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। সকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের পক্ষে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরাও সেখানে অবস্থান নিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে ওসমানীর ক্যাম্পাসেও সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল।