ঢাকা, ১৯ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

ভয়ঙ্কর প্রতারক জাহিদুল

হাসান পিন্টু, লালমোহন (ভোলা) থেকে
১৪ জুলাই ২০২৪, রবিবারmzamin

সরকারি কর্ম-কমিশনসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকাদের ১৭ জনের মধ্যে একজনের বাড়ি ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায়। এই ১৭ জন এরইমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের একজন জাহিদুল ইসলাম। তিনি প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে প্রতারণা করেছেন নিজ এলাকার   চাকরিপ্রত্যাশী অনেকের সঙ্গে। জাহিদুলের গ্রেপ্তারের খবরে তার এলাকার প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে আনন্দের পাশাপাশি ক্ষোভও দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তজুমদ্দিন উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চর কোড়ালমারা ইয়াসিনগঞ্জ বাজার সংলগ্ন আব্দুল মান্নান মাস্টার বাড়ির আব্দুল লতিফের ছেলে জাহিদুল ইসলাম। চার বোন এবং তিন ভাইয়ের মধ্যে জাহিদুল সবার ছোট। ছোটবেলায় জাহিদুল প্রথমে লালমোহন উপজেলার রায়চাঁদ এলাকার একটি মাদ্রাসায় হাফেজি পড়েছেন। পারিবারিক নানা সমস্যার কারণে হাফেজি পড়াশুনা শেষ করতে পারেননি। পরে লালমোহনের ডাওরি মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও লালমোহন ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন। বর্তমানে লালমোহন কামিল মাদ্রাসাতেই ফাজিল তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত জাহিদুল ইসলাম। পড়ালেখায় ডিগ্রি না থাকলেও প্রতারণায় হয়ে গেছেন সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী।

তার বড় বোন মায়ানূর বেগম বলেন, জাহিদুল আমার ছোট ভাই। পড়াশুনা করার জন্য দুই বছর আগে তাকে ঢাকায় পাঠাই। সে ঢাকার মিরপুরে থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি ছোট-খাটো ব্যবসা করতো বলে জানতাম। কিছুদিন আগে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি আমার ছোট ভাই জাহিদুল প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকায় গ্রেপ্তার হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, জাহিদুল ইসলাম এলাকায় জুয়েল নামে পরিচিত। দুই বছর ধরে পরীক্ষায় পাস ও চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্ন সময় এলাকার মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। বাড়িঘরের অবস্থা নাজুক হলেও এলাকায় জাহিদুলের চলাফেরা ছিল রাজকীয়। তার কথায় সহজেই মন গলে যেত যে কারও। এই সুযোগে তিনি পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়া ও চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এলাকার অনেক চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে। এমনকি তার আত্মীয়-স্বজনও জাহিদুলের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পায়নি। প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর এক বছর ধরে ঠিকমতো এলাকায় আসেনি জাহিদুল।
মো. শাহাবুদ্দিন নামে জাহিদুলের এক প্রতিবেশী বলেন, জাহিদুল ইসলাম ওরফে জুয়েল চাকরি দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জিপিএ-৫ পাইয়ে দেয়ার কথা বলেও টাকা নিয়েছে। তাই তার গ্রেপ্তারে এলাকার অনেকেই আনন্দিত। জাহিদুলের প্রতারণার শিকার হয়ে আবুল কাশেম নামে এক ভুক্তভোগী মামলাও করেছেন। 
স্থানীয় কয়েকজন জানান, জাহিদুল এক বছর আগেও এলাকার মানুষজনকে চাকরি দেয়ার নাম করে টাকা নিয়েছেন। চাকরি দিতে না পেরে তিনি এলাকা থেকে উধাও হয়ে যান। এখন আর জাহিদুল ইসলাম বাড়িতেও আসেন না। জাহিদুলের প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে লালমোহন ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন বলেন, জাহিদুল আমাদের মাদ্রাসার ছাত্র তা আগে জানা ছিল না। যদি ছাত্র হয়ে থাকেও তাহলে সে নিয়মিত না। কেবল পরীক্ষার সময় এসে হয়তো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতো। জাহিদুল ইসলাম যদি প্রশ্নফাঁসের মতো জঘন্যতম কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে আমি তার সর্বোচ্চ কঠিন শাস্তি কামনা করছি।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status