ঢাকা, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

পর্তুগালের ভিলা ফ্রাংকা জিরা মেতেছে ষাঁড়ের খেলায়

আবুল হোসেন আসাদ, লিসবন থেকে
১০ জুলাই ২০২৪, বুধবারmzamin

‘বারো মাসে  তের পার্বণ’ কথাটি শুধু বাংলাদেশের বেলায়ই নয়, ৫ হাজার মাইল দূরে আটলান্টিক পাড়ের দেশ পর্তুগালেও চলে। পর্তুগালের রাজধানী লিসবন সেজেছে  রং-বেরংয়ের আলোয়। লিসবনের অদূরে তাগুস নদীর তীরে মনোরম নৈসর্গিক শহরতলী ভিলা ফ্রাংকা জিরা। ভিলা ফ্রাংকা জিরা জুলাই মাস এলেই মেতে ওঠে উৎসবের নানা আয়োজনে, নানান আলোর রঙে। রিভার ক্রুজ, বিভিন্ন রকম মেলা, কনসার্ট ও নানা ফেস্টিভ্যাল লেগেই থাকে ভিলা ফ্রাংকা জিরার নামের সঙ্গে। পর্তুগিজ ভিলা অর্থাৎ সামার সময়ে প্রতিবছর জুলাই মাসের ৫ তারিখ থেকে ৭ তারিখ বিকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ভিলা ফ্রাংকা জিরায় চলে ষাঁড়ের খেলা। খুবই জনপ্রিয় উৎসব এটি। রিবাতেজো কাউবয়ের প্রাচীন  পোশাকের বর্ণিল সাজে  লোকজন এখানে আসে দলে দলে। পর্তুগালের নানা প্রান্ত  থেকে লোকজন জড়ো হয় ভিলা ফ্রাংকা জিরায়, ষাঁড়ের  খেলা দেখার জন্য। পৃথিবীর ৮টি দেশ ফ্রান্স, পর্তুগাল,  স্পেন, ভেনিজুয়েলা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, মেক্সিকো ও পেরুতে ষাঁড়ের লড়াই অত্যন্ত জনপ্রিয়। হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য ষাঁড়ের লড়াইয়ে দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্য প্রাণীগুলোকে হত্যা করা হয়। ষাঁড়কে ক্ষত-বিক্ষতও করা হয়। কিন্তু ভিলা ফ্রাংকা জিরার বর্তমানের ষাঁড়ের  খেলা ষাঁড়ে ষাঁড়ে লড়াই নয়। কিংবা ষাঁড় হত্যাও নয় বরং ষাঁড়ের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব। এ স্রেফ পাগলা ষাঁড়ের সঙ্গে দর্শকের লুকোচুরি খেলা অনেকটা। ভিলা ফ্রাংকা জিরার চধষযধ ইষধহপড় চৎধম্ফধ ফব ঞড়ঁৎড়ং (নঁষষৎরহম) স্টেডিয়াম  থেকে পাগলা ষাঁড় ছেড়ে দেয়া হয়। রেললাইনের পাশঘেঁষা সড়ক দিয়ে ষাঁড় দৌড়াতে থাকে শিং উঁচিয়ে আর দর্শকরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। ষাঁড় দৌড়ানোর পুরো রাস্তায় আগেই বালি দিয়ে ঢাকা  হয়। রাস্তার বালি মেশিন দিয়ে সমভাবে বিছিয়ে দেয়া হয় কার্পেটের মতো করে। ধুলো যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তাই বালুর উপরে হালকা পানিও ছিটানো হয়। দর্শকদের উপভোগের এবং নিরাপত্তার জন্য মোটা মোটা কাঠ দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী  দেয়া হয়। সেই বেষ্টনীর মাঝে লোক চলাচলের ছোট ফাঁকাও রাখা হয়। রাস্তার আশপাশের দোকান, বাসাবাড়ি বা অফিসের  গ্লাসগুলো বোর্ড দিয়ে ঢেকে  দেয়া হয়। রং-বেরঙের আলোক সজ্জাও করা হয় সারা রাস্তার দু’পাশ জুড়ে। আয়োজক কমিটি ষাঁড়  দৌড়ের রাস্তার দু’পাশের  উপরে কিছু দূর পর ছোট  ছোট সাউন্ড বক্স লাগিয়ে দেয় রাত-দিন তাতে পর্তুগিজ সুরেলা মিউজিক ও গান বাজতে থাকে। গ্রীষ্মের পড়ন্ত বিকালে ষাঁড় রাস্তায় ছাড়া হয়। পাগলা ষাঁড়ের সামনে নানা রকম কাপড় ধরে ষাঁড়কে গুঁতো দেয়ার জন্য উত্তেজিত করা হয়। ষাঁড় গুঁতো দিতে চাইলে দর্শক  দৌড়ে পালায়। ষাঁড় গুঁতো  দেয়ার জন্য ধেয়ে যায় আর দর্শকরা পালায়। এভাবে চলতে থাকে। ষাঁড় যদি কাউকে গুঁতো দিয়েই দেয় তবে সেই ব্যক্তি আঘাতের অংশ সবাইকে দেখিয়ে এবং নিজেকে হিরো হিসেবে প্রচার করে। ভিলা ফ্রাংকা জিরার  কোনো কোনো বাড়ি সাজানো হয় বড়দিনের উৎসবের মতো করে রং-বেরংয়ের কাগজ ও কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে। সুদৃশ্য  স্টেজের মতো রূপ দেয়া হয় বাড়ির। ষাঁড়ের ছবি সংবলিত ব্যানার বাড়ির সামনে টানিয়ে ষাঁড়কে পর্তুগিজ শব্দ ‘অস আমিগোস’ অর্থাৎ ‘আমাদের বন্ধু’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাড়িগুলো দেখলেই যে   কেউ বুঝতে পারে এ বাড়ির মালিকের ষাঁড় রয়েছে।  ষাঁড়ের মালিকদের স্থানীয়   লোকজন খুব  সম্মান করে ও মর্যাদা দেয়। প্রতিটি ষাঁড় আবার একজন নয় কয়েকজন মিলে লালনপালন করে।  খেলার ষাঁড় লালনপালন করাও বেশ ব্যয়বহুল। পর্তুগিজ সোসাইটিতে অনেকের মান-মর্যাদা আবার নির্ভর করে এই খেলার ষাঁড়ের উপর। খেলার ষাঁড়গুলো হয় কালো তেল কুচকুচে। ষাঁড়ের গলার অংশ  বেশ মোটা। পা খাটো এবং  দেহ শক্তিশালী। শিংগুলো বড় এবং সামনের দিকে আগানো ও বাঁকানো। ষাঁড় খেলা শুরুর আগে ভিলা ফ্রাংকা জিরায় রীতিমতো শোভাযাত্রা বের হয়। ঘোড় সওয়ারী থেকে শুরু করে নানান বাহারি আয়োজন থাকে শোভাযাত্রায়। ষাঁড় খেলা শেষ হবার পর সন্ধ্যায় শুরু হয় কনসার্ট। গানে গানে হৈ-হুল্লোড় আর মদপানে পর্তুগিজবাসী মেতে ওঠে রাতের উৎসবে। ষাঁড়  খেলাকে উপলক্ষ করে কারও কারও গলায় ফিতা ঝুলতে থাকে। ষাঁড় খেলায় অংশ নিতে আসা অতিথিদের পানীয় পান, খাবার দাবার, কনসার্ট, নৃত্য গান আর হইচইতে উৎসবমুখর সারা ভিলা ফ্রাংকা জিরা। ৩ দিনব্যাপী চলা শেষ ষাঁড় খেলাটি প্রতি বছরের মতো এবারও ৭ই জুলাই  শুরু হয়ে চলে ৯ই জুলাই পর্যন্ত। 
 

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status