দেশ বিদেশ
ফ্রান্সে নির্বাচন
বদলে যাবে ইউরোপের রাজনৈতিক দৃশ্যপট
মানবজমিন ডেস্ক
৮ জুলাই ২০২৪, সোমবার![mzamin](uploads/news/main/117634_bod.webp)
জাতীয় নির্বাচনে দৃশ্যত ফ্রান্সে উগ্র ডানপন্থিরা ক্ষমতার খুব কাছাকাছি। গতকাল সেখানে নির্বাচনের পর ফলাফলের জন্য অপেক্ষায় সবাই। কিন্তু চূড়ান্ত ফল পাওয়ার আগেই জনমত জরিপ বলে দিয়েছে, মেরি লা পেন এবং বার্ডোর ন্যাশনাল র্যালি অন্য যেকোনো রাজনৈতিক দলের চেয়ে বেশি আসন পেতে চলেছে। যদি সেটাই হয়, তাহলে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের স্বপ্নভঙ্গ করে নতুন সরকার গঠনের সম্ভাবনা মেরি লা পেনের। এমন হলে ফ্রান্সে এক দশকের যে রীতি তা তছনছ হয়ে যাবে। এ দেশটি হলো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একটি মূল দেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছাইভষ্ম থেকে জন্ম হয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের। প্রথমে যুদ্ধকালীন শত্রু- ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে একটি শান্তি বিষয়ক প্রকল্প ছিল এটি। পরে তা সম্প্রসারিত হয়ে রূপ নেয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে। ফলে ফ্রান্সের রাজনীতি, নির্বাচন পুরো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে প্রভাবিত করতে পারে। এ জন্য ব্রাসেলস, ইউরোপের সরকারগুলো তীক্ষè নজর রাখছে ফ্রান্সের দিকে। এ নিয়ে অনলাইন বিবিসি একটি বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছে।
বলা হয়েছে, মেরি লা পেন ও জর্ডান বারডেলার দল ন্যাশনাল র্যালি বিস্ময়কর ফল দেখানোর পর বলা হচ্ছে ন্যাশনাল র্যালির সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সম্ভব অথবা সম্ভব না। রোববারের দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচনে ন্যাশনাল র্যালিকে পরাজিত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ফ্রান্সের মধ্য ও বামপন্থি দলগুলো। তারা একজন মাত্র প্রার্থী রেখে বাকিদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু এই নির্বাচনের প্রভাব সিসমিক বা কম্পন সৃষ্টি করবে। তাতে ন্যাশনাল র্যালি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাক বা না পাক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমপন্থি দলটির তরুণ প্রেসিডেন্ট জর্ডান বারডেলা ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী হোন বা না হোন- নির্বাচন সেখানে কম্পন সৃষ্টি করবে। এর আগে ইউরোপের রাজনীতির বাইরে ছিটকে পড়েছিল উগ্র ডানপন্থি দলগুলো। জার্মানির নাৎসিদের পরাজিত করতে নরম্যান্ডিতে মিত্রদের অবস্থানকে ডি-ডে হিসেবে অভিহিত করা হয়। এর ৮০তম বর্ষ উদ্যাপনের জন্য গত মাসে ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলে সমবেত হয়েছিলেন বিশ্ব নেতারা। কিন্তু বর্তমানে নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও ফিনল্যান্ড সহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অনেক দেশে জোট সরকারের অংশীদার ‘উগ্র ডানপন্থি’, ‘কট্টর ডানপন্থি’ অথবা ‘জনপ্রিয় জাতীয়তাবাদীরা’। এই দলগুলোর পক্ষে সাফাই গাওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ঘন ঘন তাদের নীতি পরিবর্তন হয়। দেশ থেকে দেশে তা ভিন্ন ভিন্ন। তাদেরকে নর্মালাইজেশন বা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আনা পুরোপুরি নতুন ঘটনা নয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে মধ্য-ডানপন্থি রাজনীতিক ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনি এমন প্রথম নেতা ছিলেন। তিনি এতে নিমজ্জিত হয়েছেন। ১৯৯৪ সালে তিনি ফ্যাসিস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক গ্রুপ মুভিমেন্টো সোশ্যালে ইতালিয়ানো’র সঙ্গে সরকার গঠন করেছিলেন।
এর ছয় বছর পর অস্ট্রিয়ার রক্ষণশীলরা উগ্র ডানপন্থি ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করে। ওই সময় এ ঘটনায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এতটাই ক্ষিপ্ত হয়েছিল যে, তারা বেশ কয়েক মাস অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ ব্লক করে রাখে। যুদ্ধপরবর্তী রাজনৈতিক শিষ্টাচার এটাই নির্দেশ করে যে, মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের সময়ে আগ্রাসী রাষ্ট্র বা বিপজ্জনক গ্রুপ থেকে দূরত্ব রাখতে হবে। ইউরোপিয়ান সরকারগুলোকে উগ্র চরমপন্থিদের থেকে দূরে রাখার জন্য এমন ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়। এক্ষেত্রে সার্বিকভাবে ফরাসি চর্চাটি স্বীকৃত হতে পারে, যা আপনাকে এমন একটি সেন্স দেবে যে, ফ্রান্সে কতো মানুষ এর প্রত্যাশা করেন।
২০০২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেশ কিছু ফরাসি ভোটার তাদের নাকের সামনে এক টুকরো কাপড় ঝুলিয়ে দেন ভোট দেয়ার সময়। এর মধ্যদিয়ে তারা বোঝাতে চান যে, শুধু উগ্র ডানপন্থিদের দূরে রাখার জন্য তারা এমন প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন, যাকে তারা মোটেও পছন্দ করেন না। এই উগ্র ডানপন্থিদের অনেক বছর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মেরি লা পেনের পিতা। তার সঙ্গে ছিলেন নাৎসী নেতৃত্বাধীন ওয়াফেন এসএস ইউনিটের ফরাসি কিছু সদস্য। ২০২৪ সাল এবং মেরি লা পেনের উচ্চাকাক্সক্ষাকে সামনে রেখে ১০ বছর ধরে তার পিতার দলকে তৈরি করা হয়েছে। এর নাম পাল্টে দেয়া হয়েছে। এর নামের সঙ্গে যে ভাবমূর্তি আছে তা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে তারা সফলতার কাছাকাছি। রোববারের নির্বাচনে ফ্রান্সের মধ্য-ডানপন্থি লেস রিপাবলিকানস চুক্তি করেছে মেরি লা পেনের ন্যাশনাল র্যালি। এই চুক্তির অধীনে সুনির্দিষ্ট কিছু আসনে একে অন্যের বিরুদ্ধে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একে ফরাসি রাজনীতির জন্য এক ভূমিকম্প বলে মনে করা হচ্ছে।
মেরি লা পেনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাকে যারা সমর্থন করেছেন তারা এখন আর স্বীকার করতে বিব্রত বোধ করছেন না। ফলে ন্যাশনাল র্যালিকে এখন আর চরমপন্থি প্রতিবাদী আন্দোলন হিসেবে দেখা হয় না। অনেকের মতে, তারা বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়। অন্য দলগুলোর চেয়ে অর্থনৈতিক ভালো ব্যবস্থাপনার জন্য ন্যাশনাল র্যালিকে ভোটাররা বেশি পছন্দ করে। বিশেষ করে দরিদ্রদের সরকারি অর্থায়নের ক্ষেত্রে। এমনটা বলা হয়েছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের জন্য করা ইপসোসের এক জরিপে। তবে ন্যাশনাল র্যালির সরকার পরিচালনায় কোনো অভিজ্ঞতা নেই। একই রকম যুক্তি দেখা যাচ্ছে ইতালির রোমে। প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি একসময় ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসক ব্রুনিতো মুসোলিনির প্রশংসা করতেন। মেলোনির ব্রাদার্স অব ইতালি পার্টি পোস্ট-ফ্যাসিস্ট সংযোগ আছে। কিন্তু তিনি এখন ইউরোপে সবচেয়ে স্থিতিশীল সরকারগুলোর একটির প্রধান। ডাচ্ সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন যেন একই রকম উদাহরণ হতে চলেছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নেদারল্যান্ডসের নির্বাচনের দিকে দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে। সেখানে অভিবাসনবিরোধী রাজনীতিক গার্ট উইল্ডার্সকে নিয়মিত ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্য দিতে দেখা যেতো।
পাঠকের মতামত
এসব খবর কোথায় পান আপনারা সাংবাদিকরা? ফ্রান্সের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ লে প্যান বিরোধী আর ভোটে জিতেছে বামপন্থিরা । ফ্রান্সের ৪০ বছরের ইতিহাসে সর্বাধিক মানুষ এবার ভোট দিতে গিয়েছিল বলেই এই ফলাফল সম্ভব হয়েছে ।ইউরোপের রাজনীতি ও সমাজ নিয়ে কোন ধারণা ছাড়াই কেবল অন্য সংবাদ মাধ্যম থেকে অনুবাদ করে সংবাদ সৃষ্টি করলে এমন খবরের জন্ম দেওয়া যায় ।