দেশ বিদেশ
আনার হত্যা
আলামত উদ্ধারে গ্যাস বাবুকে নিয়ে অভিযানের নির্দেশ
স্টাফ রিপোর্টার
২৫ জুন ২০২৪, মঙ্গলবারএমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে নিয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলো উদ্ধারে ঝিনাইদহে অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এ অভিযানে একজন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকবেন। একই সঙ্গে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে গ্যাস বাবুকে ঝিনাইদহ কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহর আদালত জামিন ও রিমান্ড নামঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক।
গতকাল দুপুরে গ্যাস বাবুকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাকে ডকে (লোহার খাঁচায়) তোলা হয়। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। এসময় তিনি উল্লেখ করেন, ভিকটিম আনোয়ারুল আজিম আনারকে প্রলুব্ধ করে অপহরণ ও হত্যার মূল ঘাতক শিমুল ভূঁইয়ার জব্দকৃত মুঠোফোন পর্যালোচনায় দেখা যায়, শিমুল গত ১৫ই মে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে আসেন। এরপর তিনি ১৬ই মে গ্যাস বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সময় তাদের আনারকে অপহরণ ও হত্যা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা হয়। ১৭ই মে দু’জনে ফরিদপুরের ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে শিমুলের গাড়ির মধ্যে সাক্ষাৎ করেন। হত্যা সংক্রান্ত ছবি ও টাকা-পয়সার লেনদেনের বিষয়ে গোপন মিটিং করেন তারা। এ ছাড়া ১৭ই মে থেকে ১৯শে মে রাত পর্যন্ত শিমুলের সঙ্গে বাবুর হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ, এসএমএস আদান-প্রদান ও আনারকে অপহরণে টাকা পয়সার লেনদেনের বিষয়ে বিস্তারিত কথা হয়। প্রাথমিক জবানবন্দিতে গ্যাস বাবু এগুলো স্বীকার করেন।
শিমুলের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা মুঠোফোনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে গ্যাস বাবু জানায়, তার ফোনগুলো হারিয়ে গেছে। এই বিষয়ে বাবু থানায় জিডিও করেছে। এরপর গত ১৪ই জুন মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে ১৬৪ ধারা মোতাবেক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে গ্যাস বাবু জানায়, শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা তিনটি মুঠোফোনের মধ্যে দু’টি গাঙ্গুলী হোটেলের পেছনের পুকুরে এবং অন্যটি স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশের পুকুরের পানিতে ফেলেন তিনি। রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ওই ফোনগুলোয় এমপি আনারের অপহরণ ও হত্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকায় সেগুলো প্রয়োজন। এমন অবস্থায় ফোনগুলো উদ্ধারে গ্যাস বাবুর ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।
শুনানি শেষে বিচারক তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে গ্যাস বাবুকে ঝিনাইদহ কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়। বাবুর ব্যবহৃত তিনটি মুঠোফোন উদ্ধারে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ডিবিকে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে ১৪ই জুন ৭ দিনের রিমান্ড চলাকালীন বাবুকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। বাবু ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম তার জবানবন্দি রেকর্ড করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশনা দেন। আনার হত্যায় সংশ্লিষ্ট থাকা সন্দেহে ১৩ই জুন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তার রিমান্ডের ৩ দিনের মাথায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে মিন্টুর থেকে এই হত্যার কোনো তথ্য বের করতে পারেনি পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তার প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে গেছেন মিন্টু। বলেছেন, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। ডিজিটাল প্রমাণাদি তার সামনে হাজির করলেও কিছুই স্বীকার করেননি তিনি। ডিজিটাল এভিডেন্সে মিন্টুর সঙ্গে আরও দু’জন প্রভাবশালী রাজনীতিকের নাম এসেছে বলে জানা যায়।