দেশ বিদেশ
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে মজুত সংকট
স্টাফ রিপোর্টার
২৪ জুন ২০২৪, সোমবারপরিবার পরিকল্পনা সেবার মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিশ্চিত, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমিয়ে আনতে কাজ করছে সরকার। সেই আলোকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এই খাতে ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা নতুন অর্থবছরেও অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মজুত সংকটে ভুগছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। সংস্থাটিতে প্রয়োজনীয় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে প্রান্তিক এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী বিতরণে বেগ পেতে হচ্ছে। জেলার এক কর্মকর্তা জানান, গত ৪ মাস ধরে কর্মীদের কাছে কোনো ইনজেকশন ও কনডম নেই। খাবার বড়িও প্রায় মজুতশূন্য। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী যথাযথভাবে বিতরণ করা না গেলে, এর প্রভাব হয়তো তাৎক্ষণিক বোঝা যায় না। কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব যেমনÑ অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু এবং জনসংখ্যাও কাক্সিক্ষত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। অর্থাৎ টিএফআর বৃদ্ধি পাবে।
সূত্রমতে, দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী কনডম, খাবার বড়ি, ইঞ্জেকশনসহ মা ও শিশু স্বাস্থ্য ওষুধ সামগ্রীর মজুত শূন্যের কোঠায় রয়েছে।
মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। আট মাস ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবার ওষুধ সামগ্রীর মজুত শূন্যতার বিষয় দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবার ওষুধ সামগ্রী যথাযথভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সরবরাহ করতে না পারায় অধিদপ্তরের মাঠ কর্মীদের মধ্যেও হতাশা বিরাজ করছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সমূহের মধ্যে জনপ্রিয় খাবার বড়ি (তৃতীয় প্রজন্ম)। সারা দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহীতার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ দম্পতি এ পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। অধিদপ্তরের সাপ্লাই চেইন এর তথ্যমতে প্রতিমাসে খাবার বড়ির চাহিদা ৬ মিলিয়ন সাইকেলের বেশি। খাবার বড়ি এর বর্তমান মজুত মাত্র ৬.৭ মিলিয়ন সাইকেল। বর্তমান যে মজুত আছে, তা দিয়ে ১.৩ মাস চলবে। এরইমধ্যে ২৮৭টি উপজেলায় মজুতশূন্য হয়েছে। এছাড়া ১২৭ উপজেলায় যেকোনো সময় খাবার বড়ি মজুতশূন্য হবে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, যে কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মজুত ৬ মাসের নিচে নামলেই বিক্ষিপ্তভাবে মজুতশূন্যতা দেখা দেয়। যেমনÑ কনডম ২৩টি উপজেলা স্টোরে মজুত শেষ, ৮৭টি উপজেলা স্টোরে মজুত শেষ পর্যায়ে। দেশের প্রায়ই সব পরিবার পরিকল্পনা স্টোরে (৪৯৫ উপজেলা) জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ইনজেকশন নেই। প্রতিমাসে প্রায় ৯ লাখ ভায়াল এর উপরে ইনজেকশনের চাহিদা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ক্রয়ের বিষয়ে দায়িত্ব প্রাপ্তদের উদাসীনতা রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বর্তমান সরকারের অত্যন্ত সফল একটি কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করে দেশে ও বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা, তা চিহ্নিত করে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি রাখে।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) আবদুস সালাম খান বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর বেশকিছু পণ্য আমাদের হাতে এসেছে। সরবরাহ শুরু হলে সংকট কমতে শুরু করবে। তিনি আরও বলেন, কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হবে। এছাড়া রেভিনিউ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। সবমিলিয়ে আশাকরি দ্রুতই এ সংকটের সমাধান হবে। পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (উপকরণ ও সরবরাহ) মতিউর রহমান বলেন, ৪৫ মিলিয়ন সাইকেল খাবার বড়ি ক্রয়ের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। যা মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই, আশাকরি জুন মাসের মধ্যেই সংকট কেটে যাবে।