বিশ্বজমিন
ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকিতে ম্যাক্রন!
মানবজমিন ডেস্ক
২১ জুন ২০২৪, শুক্রবার
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের সিদ্ধান্তে আগামী ৩০শে জুন ফ্রান্সে প্রথম দফার জাতীয় নির্বাচন। এরপর দ্বিতীয় দফার নির্বাচন হবে ৭ই জুলাই। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বীরা এবং মিত্ররা বেপরোয়া জুয়ায় মেতেছেন। অনলাইন বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এই খেলায় রাজনৈতিক ক্ষমতা চলে যেতে পারে উগ্র ডানপন্থিদের হাতে। যদি তা-ই হয়, তাহলে দেশটিতে অভিবাসন নীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে। কারণ, উগ্র ডানপন্থিরা তীব্রভাবে অভিবাসী বিরোধী। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন ফ্রান্সের রাজনীতি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবেন। কিন্তু জনমত বলছে, সেটা নাও ঘটতে পারে। ইউরোপিয়ান নির্বাচনে ইমানুয়েল ম্যাক্রনের জোট রিনিউ’কে পরাজিত করে জর্ডান বারডেলা এবং মেরি লা পেনের উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল র্যালি (এনআর) পার্টি। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন টিভিতে উপস্থিত হন। ঘোষণা দেন, যা ঘটে গেছে তাকে কিছু ঘটেনি বলে তিনি বলবেন না। নির্বাচনে ন্যাশনাল র্যালি শতকরা ৩১.৪ ভাগ ভোট পায়। অন্যদিকে ম্যাক্রনের দল পায় শতকরা মাত্র ১৪.৬ ভাগ ভোট। ম্যাক্রন বলেন, ফরাসি জনগণ এবং রাজনীতিকদের এখনই সময়, যারা নিজেদেরকে উগ্রপন্থি হিসেবে মনে করেন না, তাদের সামনে একটি নতুন জোট গড়ার। ২০২২ সালের জুনে সর্বশেষ ন্যাশনাল এসেম্বলি নির্বাচন হয়েছে। ফলে নতুন করে এই নির্বাচন ডাকার কোনো প্রয়োজন তার ছিল না। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২৭ সালে। ম্যাক্রন মনে করেন, আগাম নির্বাচন আহ্বান করা সবচেয়ে দায়িত্বশীলের মতো কাজ।
দৃশ্যত কয়েক মাস ধরে নির্বাচন আহ্বানের ভাবনা পেয়ে বসেছিল ম্যাক্রনকে। কিন্তু ২৬শে জুলাই থেকে ১১ই আগস্ট পর্যন্ত প্যারিস অলিম্পিক গেমস। এ নিয়ে ফ্রান্স খুব ব্যতিব্যস্ত। ২০২২ সালের জুনে ন্যাশনাল এসেম্বলিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিতে ব্যর্থ হন তিনি। তারপর থেকেই সামনে যে জট লেগেছিল তা পরিষ্কার করতে চেয়েছেন তিনি। আইন পাস করা হয়ে পড়ে মাথাব্যথার কারণ। ভোট ছাড়াই তিনি পেনশন সংস্কারে হাত দেন, যখন ন্যাশনাল র্যালির সমর্থন পাওয়ার জন্য তাকে অভিবাসন বিষয়ক আইনকে আরও কঠোর করার প্রয়োজন। এসব মিলে তিনি ফ্রান্সের রাজনীতিকে টালমাটাল পরিস্থিতিতে ফেলেছেন বলে বিবিসি লিখেছে। ম্যাক্রনের জোট রেনেসাঁর মধ্যপন্থি হরাইজন্স এবং মো-ডেম তৃতীয় অবস্থানে চলে এসেছে। ম্যাক্রন আশা করছেন তিনি মধ্য বামপন্থিদের আকর্ষণ করতে পারবেন।
সোশ্যালিস্টরা গ্রিন্স, উগ্র-বামপন্থি ফ্রান্স আনবোউড (্এলএফআই) এবং কমিউনিস্টদের নিয়ে গঠন করেছে একটি নিউ পপুলার ফ্রন্ট। অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লা মেরি বলেন, এই সিদ্ধান্ত আমাদের দেশের, ফরাসি জনগণ সবাইকে উদ্বিগ্ন করেছে। কখনো তাদেরকে ক্রোধান্বিত করেছে।
বিবিসি লিখেছে, প্রথমবারের মতো ফ্রান্সে ক্ষমতায় আসতে পারে ন্যাশনাল র্যালি। এর নেতৃত্বে আছেন ২৮ বছর বয়সী জর্ডান বারডেলা এবং পার্লামেন্টারিয়ান মেরি লা পেন। এর মধ্যে মেরি লা পেন তিনবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে প্রতিবারই হেরেছেন। কিন্তু প্রতিবারই তিনি ভোট পেয়েছেন বেশি। এখন জনমত বলছে, মেরি লা পেনের দল ফ্রান্সে সবচেয়ে বড় দল হয়ে উঠতে পারে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে।
ফ্রান্সের ন্যাশনাল এসেম্বলিতে আসন আছে মোট ৫৭৭টি। এর মধ্যে ১৩টি আছে ওভারসিজ ডিস্ট্রিক্ট এবং ১১টি আসন প্রবাসী ফরাসিদের প্রতিনিধিত্ব করে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে একটি দলকে কমপক্ষে ২৮৯টি আসন পেতে হবে। বিদায়ী পার্লামেন্টে ম্যাক্রনের জোটের আসন ছিল মাত্র ২৫০টি। ফলে কোনো আইন পাস করতে গিয়ে তাকে প্রতিবারই অন্য কোনো দলের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। প্রথম দফার ভোটে যেসব প্রার্থী শতকরা ১২.৫ ভাগ ভোট পেতে ব্যর্থ হবেন, তারা বাদ পড়ে যাবেন। অন্যদিকে যেসব প্রার্থী শতকরা ৫০ ভাগ ভোট পাবেন, মোট ভোটারের কমপক্ষে এক চতুর্থাংশ ভোট দেবেনÑ সেই প্রার্থী স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিজয়ী হবেন। তবে এমন ঘটনা ঘটে অল্প কিছু আসনে। এরপর যেসব প্রার্থী বাকি থাকবেন তাদের মধ্যে দ্বিতীয় দফার ভোট হবে। কখনো তা দু’জন, কখনো তিনজন আবার কখনো চারজন প্রার্থীর মধ্যে এই প্রতিযোগিতা হয় এক একটি আসনে। প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের বিজয় থামিয়ে দিতে একজন মিত্রকে সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে কিছু প্রার্থী ৭ই জুলাই দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে সমর্থন দিয়ে সরে যেতে পারেন।