ঢাকা, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫ রজব ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

পুলিশের মানসিক স্বাস্থ্যে কাউন্সেলিং নেই

৫ বছরে অপঘাতে ২২ জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার
১৬ জুন ২০২৪, রবিবারmzamin

ঝুঁকি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করলেও পুলিশ সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাউন্সেলিং এর কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে বিশাল এই বাহিনীর কেউ কাজের চাপ বা অন্য কোনো কারণে হতাশাগ্রস্ত হলে তার নিজ উদ্যোগেই প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হয়। হতাশা বা নানা কারণে অপঘাতে গত ৫ বছরে অন্তত ২২ জন পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর তথ্য মিলেছে। তাদের অনেকে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

এদের মধ্যে প্রত্যেকেই বিভিন্ন কারণে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০২২ সালের ২১শে জুলাই নিজের রাইফেলের গুলিতে মেহেরপুরে পুলিশ সদস্য সাইফুল ইসলাম আত্মহত্যা করেছেন। তার স্ত্রী জানিয়েছেন, কর্মব্যস্ততার কারণে দীর্ঘদিন পারিবারিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকায় ও সাক্ষাৎ না হওয়ায় হতাশ ছিলেন তিনি। ১৫ই জুলাই রাঙ্গামাটিতে নিজের বন্দুকের গুলিতে পুলিশ সদস্য কাইয়ুম সরকার আত্মহত্যা করেন। তিনিও নানাবিধ পারিবারিক অশান্তিতে ভুগছিলেন। ২১শে মার্চ সদ্য ৩৭তম আউটসাইড ক্যাডেট হিসেবে এসআই হয়ে পুলিশে আসা হাসান আলী পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য মানসিকভাবে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তিনি পাবনার আতাইকুলা থানার ছাদে উঠে নিজ মাথায় গুলি করলে মৃত্যু হয় তার। ২০২০ সালের ৬ই মার্চ বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সের ব্যারাকের ছাদে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন পুলিশ কনস্টেবল হৃদয় দাস। চারটি ঘটনার মধ্যেই দেখা গেছে এসব পুলিশ সদস্য মানসিক অশান্তি, পারিবারিক ঝামেলা ও পারিবারিক দূরত্বজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল, এই ৩ বছরে বাংলাদেশ পুলিশের মোট ১৮ জন সদস্য আত্মহত্যা করেছেন বলে গণমাধ্যম প্রতিবেদনগুলো বলছে। এই ১৮ জন সদস্যের সবাই কনস্টেবল ও এসআই পদমর্যাদার। 

বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের মতে, বর্তমানে মোট সদস্য সংখ্যা দুই লাখের বেশি। এরমধ্যে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সরাসরি মাঠপর্যায়ে কাজ করেন। দেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এই বাহিনীর জনবল পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে একটানা দায়িত্ব পালনে বাধ্য হন পুলিশ সদস্যরা। অনেকেই প্রয়োজনের সময় ছুটি পান না। নানা কারণে পারিবারিক চাপসহ ব্যক্তিগত সমস্যার মধ্যেও দায়িত্ব পালন করেন তারা। এর ফলে কারও কারও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে যথাসময়ে কাউন্সিলিং বা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো সম্ভব। জানা গেছে, চাকরিতে যোগদানের শুরুতে পুলিশ সদস্যদের সারদায় মৌলিক প্রশিক্ষণের সময় ‘স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কোর্স’ করানো হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পুলিশের কাঠামোতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো কাউন্সিলিং বা চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। যা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত পুলিশ সদস্যদের আরও বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ২০২০ সালের পুলিশের পরিচালিত জরিপে বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে হতাশার চিত্র উঠে এসেছে। জরিপে অংশ নেয়া পুলিশ সদস্যরা সময়মতো ছুটি না পাওয়া, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা, শ্রেণি বৈষম্য, পরিবারকে সময় দিতে না পারা, ঊর্ধ্বতনদের বাজে ব্যবহারসহ নানা বিষয় উঠে আসে। এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ মানবজমিনকে বলেন, আগে একটি প্রচলন ছিল লাইনে দাঁড়ালেই পুলিশে চাকরি হয়েছে। বর্তমানে কিন্তু অনেক যাচাই-বাছাই করে পুলিশের চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হয়। সম্প্রতি বারিধারায় যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এক্ষেত্রে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য যদি মানসিকভাবে স্বাভাবিক না থাকেন তাকে যারা ডিউটি বণ্টন করেছেন তারা কিন্তু এই দায় এড়াতে পারেন না। পুলিশের মানসিক স্ট্রেস বা স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা যদি এ বিষয়ে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে দেখবো এদিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। পুলিশের চাকরি আর অন্য ১০টা সাধারণ চাকরি একরকম না। এখানে তার শারীরিক এবং মানসিক যে অবস্থা সেটা উন্নত বিশ্বে যেভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হয় আমাদের দেশে কিন্তু এখনো এটা হয়। একজন পুলিশ সদস্য মানসিক-শারীরিকভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম কি না সেটা আমরা দেখি না। এক্ষেত্রে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোর কারণ ধরে সমস্যার মূল উৎস খুঁজে বের করার পাশাপাশি সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। 

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, পুলিশ বাহিনীর মাঠ পর্যায়ে কাজের চাপ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আচরণগত দূরত্ব, প্রমোশন বঞ্চনা, সমান সুযোগ না পাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় একত্রিত হয়ে কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটে। যেটাতে পরবর্তী সময়ে আমরা যতটা নজর দেই এটা যদি এর আগে দেয়া হয় তাহলে এ ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে। তাদের জন্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর মানসিক কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা থাকতে হবে। চাকরির শুরুতে ৬ মাস কিংবা ১ বছর একটি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হলো এর পর স্ট্রেস ম্যানেজম্যান্ট সেখানো হচ্ছে না। এর দায় কিন্তু বাহিনী, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কারোর এড়ানোর সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Hamdard

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status