প্রথম পাতা
বেনজীরকে নিয়ে গোপালগঞ্জে যে আলোচনা
মারুফ কিবরিয়া ও শাহীন মুন্সী, গোপালগঞ্জ থেকে
১৪ জুন ২০২৪, শুক্রবারপুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিপুল অবৈধ সম্পদ এবং তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানের বিষয়টি এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। পথঘাট, চায়ের আড্ডা সর্বত্র আলোচনা তাকে নিয়ে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা তার জন্মস্থান গোপালগঞ্জে। জেলা শহর থেকে থানা, ইউনিয়ন এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জেও চলছে নানা কানাঘুষা। গোপালগঞ্জ শহর, কোটালিপাড়াসহ জেলার সর্বত্র সাধারণ মানুষের একটাই প্রশ্ন একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে এত সম্পদের মালিক হলেন কীভাবে বেনজীরের পরিবার! শুধু তাই নয়, তাদের কারও কারও কাছে বিষয়টি অবাক করার মতো।
গোপালগঞ্জ শহরের পাচুড়িয়া এলাকার একটি চায়ের দোকানে দুই বয়োজ্যেষ্ঠ’র মধ্যে আলোচনা চলছিল। বিষয়বস‘ বেনজীর। তাদের একজনের নাম শাহাদাৎ হোসেন। মানবজমিনকে তিনি বলেন, “একজন মানুষের কতো লাগে? আমার ২০ শতক জমি আছে তাতেই খুশি। বেনজীর সাব এত কোটি কোটি টাকার সম্পদ দিয়ে কী করবে? শেখ শাহাবুদ্দিন নামের আরেকজন বলেন, জমিজমা তো নিজের টাকায় কেনে নাই। খবরে দেখছি মানুষের কাছ থেকে জোর করে নিছে। তবে এক পরিবারের জন্য এত কিছু না করলেই পারতো। চার পাঁচজনের সংসারের জন্য সারা দেশে সম্পদ কিনার দরকার ছিল না।” গোপালগঞ্জ শহরের ব্যাংকপাড়া এলাকার বাসিন্দা সৌমিক ঘোষ বলেন, “এরা সম্পদ গড়ে আর গরিব মানুষ না খেয়ে মরে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন সেখানে তার এত কাছের একজন মানুষ কীভাবে এত সম্পদ কেনে?” গোপালগঞ্জ সদরের পাইককান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা শহীদুল্লাহ বলেন, যে দুর্নীতি করবে তাকে শাস্তি পেতে হবে। আমরা তো অবাক। যে লোক দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে, তার এত সম্পদ হয় কীভাবে?
জেলার ডুমরাসুর এলাকার বাসিন্দা জয়দেব সামন্ত বলেন, বেনজীর আহমেদের লোকজন এই রিসোর্ট তৈরির সময় থেকে এখানে যাতায়াত করতো। রিসোর্ট করসে কিন‘ এলাকার কারও কোনো কাজে আসে নাই। গ্রামের বেকার ছেলেরা শহরে যায় কাজ করতে। এখানে এত বড় রিসোর্টের কাজ করে সব বাইরের লোকজন। কোটালিপাড়ার রাধাগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা চন্দ্রনাথ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের জেলার। সে জেলার কেউ এত বড় কর্মকর্তা হয়ে যদি দুর্নীতি করে সেটা আমাদের জন্য খারাপ লাগার ব্যাপার। লজ্জাও লাগবে আমাদের।
বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের এত সম্পদ থাকা এবং দুদক অনুসন্ধান করার বিষয়টি পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি রবীন্দ্রনাথ অধিকারী। তিনি মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে থেকে বেনজীর আহমেদের এভাবে আলোচনায় আসায় পুলিশের ভাবমূর্তির পাশাপাশি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিও নষ্ট করেছেন। আমরা চাই এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
গোপালগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সুশাসনের জন্য প্রচার অভিযান (সুপ্র) গোপালগঞ্জ-এর সাধারণ সম্পাদক মো. মোজাহারুল হক বাবলু বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের এ ধরনের অনিয়ম নতুন কিছু নয়। আমরা আগেও শুনেছি আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে দেশ ও দেশের বাইরে বাড়ি-গাড়িসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়েছেন। তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় বাংলাদেশে দুর্নীতি কমছে না। আমরা চাই এর সুষ্ঠু তদন্ত হোক, দুর্নীতি দমন কমিশন নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে আইনের আওতায় এনে বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করুক।
গোপালগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট নাসিম আহমেদ বলেন, বেনজীর আহমেদ পুলিশের সর্বো”চ পদে থেকে যদি অনিয়ম করে অঢেল সম্পদের মালিক হয় তাহলে বুঝতে হবে তার অধীন কর্মকর্তারাও অনিয়ম করার সুযোগ পেয়েছে। আমার ধারণা, দেশে যদি তার এ পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে বিদেশের বাড়িতেও তার সম্পদ রয়েছে। কেননা, আমরা বাঙালিরা আয়েশি জীবনের আশায় উন্নত কান্ট্রিতে সম্পদ গড়তে পছন্দ করি। দুর্নীতির দমন কমিশনের উচিত শুধু দেশ নয় বিদেশেও বেনজীর আহমেদসহ দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা সকলের সম্পদের অনুসন্ধান করা।
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খাঁন মানবজমিনকে বলেন, তিনি পুলিশের একজন ভালো কর্মকর্তা ছিলেন, তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আমার বলার কিছুই নেই। যদি কেউ দুর্নীতি করে থাকে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর দেখবে। এ বিষয়ে মতামত দেয়ার সুযোগ নেই।
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি রাফিক শরিফ অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ দুর্নীতিগ্রস্ত একটি দল। তারা অবৈধভাবে দীর্ঘ ১৬ বছর রাষ্ট্রক্ষমতা ধরে রেখেছে। বেনজীরের মতন এমন অনৈতিক কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে ক্ষমতায় এসেছে, সেই আওয়ামী লীগ সরকার কীভাবে দুর্নীতি দমন করবে। তারা এখন জনগণের সঙ্গে তামাশা করছে, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, দুর্নীতি উন্নত রাষ্ট্র গড়তে বাধা সৃষ্টি করে। সরকার এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত সকল কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে উন্নত রাষ্ট্র গড়ার স্বার্থে দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনা।
বেনজীরের পার্ক থেকে কম্পিউটার চুরি: পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা গোপালগঞ্জের সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের প্রশাসনিক ভবন থেকে কম্পিউটার চুরির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাতে এই ঘটনা ঘটে। চুরির ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সাভানা রিসোর্টের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। সাভানা পার্কের কম্পিউটার চুরির বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনিচুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সভানা পার্কের এইচআরের কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেছি, আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে চুরি হওয়া কম্পিউটার উদ্ধার করতে সক্ষম হবো।
মামলার সূত্র ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মশিউর রহমানকে সদস্য সচিব করে একটি তদারকি কমিটি গঠন করা হয়। রিসোর্টের মালামাল রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে এই তদারকি কমিটি গঠন করা হয় বলে জানা গেছে। সে সঙ্গে কৃষি কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিত বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)কে আদেশ দেওয়া পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের মতো বর্তমানে পুলিশ ও বিভিন্ন সরকারি প্রশাসনে এবং আওয়ামী লীগে কতজন আছেন যারা ক্ষমতা অপব্যবহার করে নিরীহ মানুষ কে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং চাঁদা বাজী করে অবৈধ উপায়ে অটল ধন-সম্পদের মালিক হয়েছেন তাহা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করে বেনজিরের মতো জনগণের সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা।
চোর,ভাটপার,খুনি,জুলুমবাজ কি অপরাধ নাই তার খাতায় সে কিরে আবার সাহেব হয়? সাহেবেরা কি এমন?
গোপালগঞ্জ থেকে নিয়োগ সরকারি উচ্চ পদস্থ সব কর্মকর্তার বিষয়ে খোঁজ খবর নিলে সবাই কে কমবেশি বেনজির পাওয়া যাবে।
দূর্নীতি দমন কমিশনারের উচিত বেনজিরের অধিনে যে যে পুলিশ অফিসার চাকুরীতে নিয়োজিত ছিল তাদের সবার সম্পদের হিসাব নেওয়া।