প্রথম পাতা
ডামি প্রার্থীর সংকটে আছি
স্টাফ রিপোর্টার
১১ জুন ২০২৪, মঙ্গলবারডামি প্রার্থী নিয়ে নির্বাচন কমিশনও সংকটে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সোমবার নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত ‘আরএফইডি টক’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ডামি বলে কোনো প্রার্থী আমাদের কাছে নেই। কিন্তু বাস্তবে আছে। ডামি প্রার্থীর সংকটে আমরাও আছি। তিনি বলেন, একটি শক্তিশালী পার্টি আরও চারজনকে ডামি প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়। ডামি প্রার্থীরা দেখা যাচ্ছে ১৯ ভোট, ২৩ ভোট কিংবা ৯৭ ভোট পায়। অথচ প্রত্যেকেই পোলিং এজেন্ট পায়। সেই পোলিং এজেন্টগুলোকে আবার কিনে ফেলা হচ্ছে। ভেতরে একটি সংঘবদ্ধ শক্তি ক্রিয়েট করার চেষ্টা করছে। এটাও একটি সংকট। আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, প্রকাশ্যে কোনো দলীয় প্রধান ডামি প্রার্থী ঘোষণা দেননি। যদি কোনো দলের পক্ষ থেকে ডামি প্রার্থী ঘোষণা দেয়া হয় তাহলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেটি আমরা বিবেচনা করবো।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পাঁচ মাস পার হয়ে গেলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধের জমাট বরফ এখনো গলেনি। সার্বিক পরিবেশ এখনো পুরোপুরি অনুকূল হয়ে ওঠেনি। তবুও আমি আশাবাদী সংকট নিরসন হবে। দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিআই) ঠিক বলেছে জানিয়ে সিইসি বলেন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) একটা নিজস্ব ধাঁচ আছে- এগুলো (নির্বাচন) বিশ্লেষণ করার। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিগত নির্বাচনটা খুবই প্রসিড হয়নি। সেদিক থেকে এনডিআই যা বলেছে ঠিক বলেছে, আমি বলবো।
৭ই জানুয়ারির ভোট, উপজেলা ভোট অংশগ্রহণমূলক না হওয়ার কারণ শাসকদলের নিয়ন্ত্রণ, না কি বিরোধী দলের ভোট বর্জন-এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা জানি আপনারাও জানেন, দেশের সার্বিক পরিবেশ অনুকূলে ছিল না। বিতর্কটা এখনো বহাল আছে যে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার। এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায় রয়েছে, নানা বিষয়ে রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে দেশের অন্যতম একটা প্রধান দল বলে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো না এবং না করে থাকে। এতে প্রত্যাশিত যে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, তার ঘাটতি ছিল। যেকোনো কারণেই হোক উভয়পক্ষ অনড় ছিল তাদের দাবি নিয়ে। যে কারণে একটি বড় দল অংশগ্রহণ করেনি। সেটা আমাদের বিষয় নয়। আমাদের কোনো ঘাটতি ছিল না, আমরা আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছিলাম।
নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংকট প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকেই সংলাপের মধ্যদিয়ে এর সমাধান করতে হবে। পরাজয় মেনে নিয়ে বিজয়ী দলকে অভিনন্দন জানানোর মাধ্যমে একটি সুস্থ নির্বাচনী সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। আর যারা নির্বাচিত হবেন তারা সেবার মনোভাব নিয়ে জনগণের কাছে গেলে সংস্কৃতিতে বড় ধরনের একটি পরিবর্তন হবে। সংলাপের প্রয়োজন, এর উদ্যোগ কে নেবে-এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলবো না। আমাদের দেশের যারা বিশিষ্টজন আছেন, তারা আমাদের চেয়ে ভালো বোঝেন-কীভাবে সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে।
ভোটের পরিবেশ তৈরি করতে পারেননি, এ দায় আপনাদের ওপর দেয়া হয়- এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী-এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ নির্বাচন করা। ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়। নির্বাচন কমিশনের একটি কাজ হচ্ছে তফসিল ঘোষণা করা। এরপর একটা সময় আছে যখন প্রতীক বরাদ্দ করা হয়, তখন বলে দেয় তোমরা প্রচারণা করো। প্রচারণাটা কিন্তু সিইসি মাঠে গিয়ে করেন না। যারা পার্টি তারাই করেন। তাদের দক্ষতা প্রচারণা ও দক্ষতার উপর নির্ভরশীল করবে ভোটার উপস্থিতি। ভোটার উপস্থিতি পুরোপুরি নির্ভর করে প্রার্থীর ওপর। ভোটার উপস্থিতির হার কতো হবে, তার দায় আমরা নিতে পারবো না। মনে রাখতে হবে নির্বাচনটা রাজনীতি নয়। নির্বাচন কমিশন একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে।
জনগণ বা ভোটারদের আস্থা কোন পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইসি’র যে সুযোগ ছিল, ইসি’র যে কাজগুলো করতে হবে এটার একটি রুটিন আছে, সেগুলো করে থাকি। এ ছাড়া ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য আমরা নানান রকম প্রচারণা করছি। একটি নির্বাচনের রাজনীতিবিদ ও প্রার্থীদের মধ্যে যে গণসংযোগ, আমি কিন্তু এবার তার কমতি দেখেছি। আমি বলবো নির্বাচনের সঙ্গে রাজনৈতিক পরিবেশটা যদি অনুকূল হয়ে ওঠে তাহলে মানুষের আগ্রহ আরও বাড়তে পারে।
সিইসি আরও বলেন, আমরা নির্বাচনটাকে নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করার চেষ্টা করছি কিনা, জনগণ তা দেখছে। আমরা কোনো রকম অসততার আশ্রয় গ্রহণ করিনি। কোনো রকম পক্ষপাতমূলক আচরণ করিনি এবং আমরা সব থেকে দায়িত্ব পালন করেছি। তাহলে জনগণের আস্থা না থাকলেও আস্থা হওয়া উচিত। আর আস্থা জিনিসটা একদিনে গড়ে ওঠে না। ক্রমান্বয়ে তা পরিণত হতে পারে। আমরা যে নির্বাচনটা করেছি, এতে জনগণের মধ্যে আস্থা অতীতের সীমিত পরিসরে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ সহিংসতা কম হয়েছে, ভোট জালিয়াতি কম হয়েছে, কারচুপি কম হয়েছে। ম্যানুপুলেশনের অভিযোগ উঠেনি।
ইভিএম সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রযুক্তির দিক দিয়ে আমাদের এগোতে হবে। আমার বিশ্বাস ছিল ভূত আছে- এভাবে বা ওভাবে দিলে ভোট চলে যায় অন্য জায়গাতে। দীর্ঘ দুই বছর ধরে এটি নিয়ে কাজ করছি। ইভিএম প্রযুক্তিতে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। ইভিএম কিন্তু ডেমোক্রেসিকে এগিয়ে নিতে অনেক বেশি সহায়ক হবে। ইভিএম কী হবে আমি জানি না। তবে আমার এবং আমার সহকর্মীদের সুপারিশ থাকবে ইভিএমের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে দেওয়া জনগণের আস্থা ইভিএমের ওপর ফিরিয়ে আনা।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদে ভোট পড়েছে ৩৬.৪৫ শতাংশ: ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ পাঁচ ধাপে সার্বিকভাবে ৩৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন সিইসি। তিনি বলেন, চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন করার কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে পাঁচ ধাপে শেষ করতে হয়েছে। শেষ ধাপে ভোট পড়েছে ৪২ শতাংশের মতো। আর সার্বিকভাবে ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। দেশের ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে পাঁচ ধাপে ৪৬৯টিতে নির্বাচন শেষ হয়েছে। এবার প্রতিটি জেলায় তিনটি বা চারটি ধাপে ভোট হয়েছে। এজন্য প্রশাসনে কর্মকর্তাদের জন্য সহজ হয়েছে। স্বস্তিদায়কও হয়েছে। অবশিষ্ট উপজেলাগুলো আইনি জটিলতা ও মেয়াদ পূর্তি না হওয়ায় পরবর্তীতে নির্বাচন হবে।
আজিজ আহমেদের ভাইদের এনআইডি জালিয়াতি তদন্তে কমিটি: মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের পরিবারের সদস্যদের জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত কিনা, তা যাচাই করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যিনি এই কাজটা করছেন তিনি অপরাধ করছেন। কোনো না কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে এই অপরাধ করার সুযোগটা সে (আজিজ) পেয়েছে। কিন্তু তিনি যে নির্মোহ ব্যক্তিত্ব, আমরা তো সেটা বলছি না। কোনো সাফাই করি না। তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি হয়েছে। সিইসি বলেন, এখনো কতো (এনআইডি) বেআইনিভাবে আছে সেটা তো আমরা জানি না। যেটা আমাদের জানানো হবে, যেমন আজিজ সাহেবের বিষয়টা আমরা জেনেছি। হারিছ চৌধুরীও বোধ হয় করেছিলেন। একটা সিস্টেমে যদি ৯৯ ভাগ লোক সুবিধা পেয়ে থাকে, ১ শতাংশ লোক এর অপব্যবহার করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা সিস্টেমটাকে বর্জন করতে পারবো না। ভবিষ্যতে যেন এমন না হতে পারে, এ রকম কোনো সিস্টেম করবেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এটা আমেরিকাও পারছে না।