ঢাকা, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ২৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

ভোলায় পর্যটন ঘিরে নানা উদ্যোগ

কাজী সোহাগ, ভোলা থেকে
১১ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার

দ্বীপ জেলা হিসেবে খ্যাত ভোলাকে এবার পর্যটক এলাকা বানানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সমুদ্র তীরবর্তী চরফ্যাশনকে ঘিরে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে।  বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের দ্বীপজেলা এই ভোলা। জেলাটির বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে ছোট-বড় চর। এরমধ্যে আয়তনে বড় এবং একইসঙ্গে ঘুরে দেখার মতো উপজেলাটির নাম চরফ্যাশন। বলা হয়ে থাকে, সবুজ শ্যামলিমায় ভোলা জেলাকে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখতে হলে আসতে হবে চরফ্যাশনে। অর্থাৎ চরফ্যাশনে অবস্থিত সুউচ্চ ১৮ তলা জ্যাকব টাওয়ারে উঠলেই দেখা মিলবে পুরো জেলার। ১০০ টাকার টিকিট কেটে লিফটের সাহায্যে উপরে উঠে সর্বোচ্চ স্থান থেকে চারদিকে তাকানোর সুন্দর সুযোগ রয়েছে। ওখান থেকে যেদিকেই চোখ পড়ে দেখা মিলবে সবুজের সমারোহ। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষকে এখানে ভিড় করতে দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চরফ্যাশনে পর্যটকদের কথা চিন্তা করে তৈরি হয়েছে হোটেল ও রিসোর্ট। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্থানীয়রা জানান, একটি চওড়া এবং সোজা সড়ককে ঘিরে ভোলা জেলা। ভোলা সদর থেকে চরফ্যাশন যেতে ভিন্ন পথের প্রয়োজন পড়ে না।  তারা জানান, উপজেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বেশকিছু চর। আর এসব চর ঘিরেই পর্যটন শিল্প অপার সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছে ভোলাবাসী। যেমন চর কুকরি-মুকরি প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে চমকপ্রদ ও আকর্ষণীয়। ইতিমধ্যে এখানকার জীববৈচিত্র্য ও দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের নজর কাড়তে শুরু করেছে।  চর কুকরি-মুকরিতে রোপণ করা হয়েছে নানা ধরনের গাছ।  এরমধ্যে কেওড়া গাছ বৃহত্তর এলাকা জুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর কৃত্রিম এই বনে ছাড়া হয়েছে বন্য মহিষ, হরিণ ও বানর। আছে গরুও। স্বল্প পরিমাণে আছে বসতি। যাদের প্রায় সবাই মৎস্যজীবী। এলাকাটির বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের সঙ্গে কথা বলে এবং ম্যাপ দেখে জানা গেছে, এটির এক পাশে মেঘনা অন্যপাশে বঙ্গোপসাগরের জলরাশি। লবণাক্ত এবং মিঠাপানির জলের মিশ্রণ চর কুকরি-মুকরিতে জোয়ার-ভাটা খেলা করে। ওখানের ওয়াচ টাওয়ারে তাকালে পুরো বন ও সাগরের সৌন্দর্য অবলোকন করা যায় সহজেই। চরফ্যাশন সদর থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্ব এই চর। স্বল্প খরচে একা বা যৌথভাবে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে স্পিডবোটে গেলে খরচ বাড়লেও দ্রুত পৌঁছে যাওয়া যায়। মাঝেমধ্যে সমুদ্র গর্জন তুললেও বেশির ভাগ সময় জুড়ে থাকে খুব নীরব এবং নিরাপদ। চরফ্যাশনে ব্যক্তিগতভাবে গড়ে ওঠা আরেকটি দর্শনীয় এবং বিনোদন কেন্দ্রের নাম খামারবাড়ি রিসোর্ট। একই উপজেলায় আকর্ষণীয় স্থান হলো ঢাল চরের তারুয়া সমুদ্রসৈকত। এখানে পর্যটকদের চোখে ধরা দেয় লাল কাঁকড়াসহ নানা প্রজাতির অতিথি পাখি। বেতুয়া প্রশান্তি পার্কও দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। মেঘনা নদীর পাড়ে গড়া ওঠা এ পার্কে পর্যটকদের আনাগোনা সব সময় লেগেই থাকে। পর্যটন প্রসঙ্গে এক লিখিত বক্তব্যে ভোলা-৪ আসনের এমপি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন,
উপকূলে ‘বাংলার বালিদ্বীপ’ গড়ে তোলা হচ্ছে। আমেরিকার স্ট্যাচু অব লিবার্টি, প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, লন্ডনের বিগ বেন, মালয়েশিয়ার টুইন টাওয়ার কিংবা দিল্লির ইন্ডিয়া গেট। এক একটি স্থাপনা এক একটি শহর বা দেশকে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি। তেমনি দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশনে নির্মিত হয়েছে আইকনিক ‘জ্যাকব টাওয়ার’। উপমহাদেশের সর্বোচ্চ এই ওয়াচ টাওয়ার ইতিমধ্যেই বাংলার আইফেল টাওয়ার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ২০১৮ সালের ২৪শে জানুয়ারি ‘জ্যাকব টাওয়ার’ উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ। এমপি জ্যাকব ‘জ্যাকব টাওয়ার’ ও ‘কুইন আইল্যান্ড অব কুকরী- মুকরী’কে ঘিরে দেশ-বিদেশের পর্যটকদেরকে আকৃষ্ট করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যার মধ্যে আরও রয়েছেÑ বরিশাল বিভাগের মধ্যে অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ‘চরফ্যাশন শেখ রাসেল শিশু ও বিনোদন পার্ক’ নির্মাণ। চরফ্যাশনে দৃষ্টিনন্দন ফ্যাশন স্কয়ার ও পানির ফোয়ারা নির্মাণ। কুকরী-মুকরী ইউনিয়নে ইকো-পার্ক ও হরিণ প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন। কুকরী-মুকরীতে পর্যটকদের জন্য আধুনিক অবকাশযাপন কেন্দ্র নির্মাণ। কুকরী-মুকরীতে কোস্টাল রেডিও স্টেশন ও লাইটিং হাউজ নির্মাণ। মনপুরায় আধুনিক অডিটোরিয়াম নির্মাণ। বেতুয়া লঞ্চঘাটে মেঘনা নদীর তীরে প্রশান্তি পার্ক নির্মাণ। যা ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ ছাড়া ভোলাকে পর্যটনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে চরফ্যাশন উপজেলার ভূখণ্ডের সবগুলো গ্রাম জুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা পাকা সড়কগুলো একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। মনপুরায় প্রায় ১শ’ ৫০ কি.মি আরসিসি পাকা রাস্তাসহ চরফ্যাশন ও মনপুরায় নির্মিত হয়েছে প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার পাকা রাস্তা এবং প্রায় ২শ’ ব্রিজ-কালভার্ট। এসব পাকা সড়কে প্রয়োজন মতো ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ফলে সড়কের সঙ্গে সড়কগুলো সংযুক্ত হয়েছে। প্রায় সাড়ে ১৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে চরফ্যাশন-মনপুরার সড়ক যোগাযোগে এ যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়েছে। চরফ্যাশনের  সহ-কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সালেক মূহিদ জানান, মানুষ একসময় উন্নয়নে পিছিয়ে থাকলেও এখন উন্নয়নের হাওয়া লেগেছে কমবেশি সবখানে। মানুষের জীবনযাত্রায় এসেছে পরিবর্তন। ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে গতিশীল। শিক্ষার আলো, বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। রাস্তাঘাটের চেহারায়ও লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। চরফ্যাশনের মতো একটি সম্ভাবনাময় উপজেলা পর্যটন খাতকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাবে- এটাই প্রত্যাশা।

 

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status