বাংলারজমিন
মোংলা থানার ওসি’র অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন
বাগেরহাট প্রতিনিধি
২৫ মে ২০২৪, শনিবার
বাগেরহাটের মোংলা থানার ওসির অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। ধর্ষণচেষ্টা, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা না নিয়ে উল্টো ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করার অভিযোগ তুলে গতকাল সকালে বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সামনে ভুক্তভোগী মোংলা উপজেলাবাসীর ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার, নাসিমা বেগমসহ অনেকে বক্তব্য দেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ন্যায় বিচারের জন্য মানুষ পুলিশের কাছে যায়। কিন্তু ধর্ষণচেষ্টা, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা না নিয়ে মোংলা থানার ওসি কে এম আজিজুল ইসলাম সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। গত ৯ই মার্চ বাড়িতে কেউ না থাকায় জলিল মাতুব্বর (৪৫) ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে। আমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে পালিয়ে যায় জলিল মাতুব্বর। ঘটনার আধা ঘণ্টা পরেই জলিল মাতুব্বর ও ছেলে আমির মাতুব্বরসহ ৭/৮ জন সন্ত্রাসী দলবদ্ধ হয়ে আমার বাড়িতে প্রবেশ করে ঘরের চালসহ ভেতরের মালামাল ভাঙচুর করে। তারা আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।
পরে ৯৯৯ এ ফোন করলে মোংলা থানার এসআই রমজানসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আমাকে উদ্ধার করে। পুলিশ ও স্থানীয়রা আমাকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মোংলা হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেদিনই ধর্ষণচেষ্টা ও হামলার মামলা নিয়ে মোংলা থানায় যায় আমার পরিবারের সদস্যরা। মোংলা থানার ওসি কেএম আজিজুল ইসলাম মামলা না নিয়ে থানা থেকে বের করে দেন। পরে একাধিকবার মামলার জন্য মোংলা থানায় গেলেও ওসি বিষয়টি আমলে নেয়নি। এমতাবস্থায় আমি নিরুপায় হয়ে বাগেরহাট পুলিশ সুপার মহোদয়ের শরণাপন্ন হই। এ ঘটনায় মোংলা থানার ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে বলেন- তুই কতো মামলা খেতে পারিস আমি ডোজে ডোজে তোকে দিবো। পরে ৩১শে মার্চ খুলনা সিটি মেয়রের লিখিত সুপারিশ নিয়ে গেলে অভিযোগ রাখে পুলিশ। তারপর দেড় মাস পার হলেও মামলাটি নথিভুক্ত করেনি পুলিশ। এখন আমাদের মামলা না নিয়ে মোংলা থানার ওসি আজিজুল ইসলামের হস্তক্ষেপে আমি ও আমার স্বামী মিজানুর রহমান, বোন পারভিন বেগম, ভগ্নিপতি কাওসার আকন, খালাতো ভাই শিমুল ও পারভেজকে জড়িয়্ েআদালতে মানব পাচারসহ ৪টি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। আমরা বাড়িতে যেতে পারি না, অত্যন্ত অসহায় জীবনযাপন করছি। এই ওসি আজিজের অত্যাচার ও মামলার ভয়ে ২১টি পরিবার বাড়িতে বসবাস করতে পারছে না। তারা মোংলা থানার ওসি কেএম আজিুল ইসলামের দ্রুত অপসারণ দাবি করেন। এ ছাড়া মোংলা থানার ওসি কেএম আজিজুল ইসলান নানা অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয় মানববন্ধনে।
এ বিষয়ে মোংলা থানার ওসি কেএম আজিজুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি তার জানা নেই। আর মারামারির ঘটনায় থানা থেকে বের করে দেয়া হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, এজাহারের সঙ্গে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। পরে তারা আর আসেননি। এজন্য ওই মামলাও নেয়া হয়নি, তবে অভিযোগটি তদন্ত দেয়া হয়েছে।
তবে হামলার শিকার শিশু মো. ওমরের (৭) মা হাফিজা বেগম বলেন, ওসি মিথ্যা বলেছেন। মামলা করতে এজাহারে যাবতীয় সব কাগজপত্র নেয়া হলেও ওসি কেএম আজিজুল ইসলাম থানা থেকে তাদের বের করে দেন।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আবুল হাসনাত খান বলেন, বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যেসব অভিযোগে ওসি মামলা নেয়নি, সেই অভিযোগগুলোর কপি তার ওয়াটসঅ্যাপে দিতে বলেন তিনি।