দেশ বিদেশ
বড় ধরনের হুমকিতে দিনাজপুরের লিচুর বাজার
মো. কামারুজ্জামান, দিনাজপুর থেকে
২৩ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার
আর ক’দিন পরেই দিনাজপুরের বাজার ভরে যাবে রসগোল্লা খ্যাত লিচু দিয়ে। তবে সাড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ কোটি টাকা বেচাকেনার বিশাল এই বাজারটি এ বছর বড় ধরনের হুমকিতে পড়ারও আশঙ্কায় রয়েছে। চলমান তাপপ্রবাহের কারণেই মূলত এমনটি হয়েছে। এতে চাষিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বাগানের ছোট ছোট লিচুর গুটি ঝরে ঝরে পড়ছে। শেষ পর্যন্ত লিচু কেমন হবে, আর দাম কেমন পাওয়া যাবে সেটাই এখন বাগানী ও চাষিদের চিন্তা। দিনাজপুর জেলার প্রায় সব উপজেলাতেই কমবেশি লিচুর ফলন হয়। তবে সদর উপজেলার মাশিমপুর, কসবা, আউলিয়াপুর, ঘুঘুডাঙ্গা, মহব্বতপুর, উলিপুর, মোহনপুর, নশিপুর, গাবুরা, মহারাজপুর, বিরল উপজেলার মাধববাটি, বুনিয়াদপুর, রামপুর, রবিপুর, করলা, চিরিরবন্দর উপজেলার উচিতপুর, ফুলপুর, আমবাড়ী, গলাহার, কাদরা, কৃষানবাজার, খানসামা উপজেলার পাকেরহাট, বিরামপুর শিমুলতলী, মামুদপুর ও দুর্গাপুর এলাকায় বেশি ফলন হয়ে থাকে। বিভিন্ন বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, বাগানের প্রতিটি গাছে গাছে ঝুলছে কৃষকের স্বপ্ন। তবে কিছু কিছু লিচুর গুটি প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে ঝলসে কালো হয়ে গেছে। জেলার প্রতিটি এলাকায় এ চিত্র দেখা যায়।
যেভাবে লিচু ফেটে ও ঝলসে যাচ্ছে, তাতে উৎপাদন খরচও উঠবে কিনা সেটিই এখন চিন্তার বিষয় বলে চাষিরা জানিয়েছেন। বাগান মালিকরা জানান, এ বছর প্রথম দিকে সব গাছেই প্রচুর মুকুল এসেছিল। তবে গরমে অনেক গুটি ঝরে গেছে, শেষ সময়ে কিছু আবার ঝলসে গেছে, শুকিয়ে গেছে। ফলে বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্প্রে ও বালাইনাশক স্প্রে করেও কাজ হচ্ছে না। সদর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গা এলাকার ইরফান আলী বলেন, ‘এবার মুকুল এসেছিল বেশি, গুঁটিও ভালো ধরেছিল। কিন্তু টানা খরায় গুটি ঝরে গেছে। এখন আবার ফেটে ঝরে পড়ছে। এক সপ্তাহ ধরে তীব্র গরমে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। একই ধরনের আশঙ্কা আর দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন বিরল উপজেলার বুনিয়াদপুর এলাকার বাগানী বাবুল আক্তার।
তিনি বলেন, ‘এবার লিচুর অবস্থা ভালো না। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমন হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এবার গাছে লিচু টিকবে কিনা তা নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় আছি।’ দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, দিনাজপুরে এ বছর লিচু আবাদের জমি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর আবাদ হয়েছে পাঁচ হাজার ৮৭৮ হেক্টর জমিতে। আর গত বছর ৫ হাজার ৭৭১ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নূরুজ্জামান বলেন, এবার লিচুর ফলন তুলনামূলক ভালো হয়েছে। তাপপ্রবাহের কারণে কিছু লিচু ঝরে পড়লেও খুব বেশি ক্ষতি হবে না। কৃষি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দিয়ে চলেছেন। এ ব্যাপারে কৃষিবিদ রুহুল আমীন জানান, শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা ঠিক রাখতে পারলে ভালো ফলন ঘরে তোলা সম্ভব হবে। সঙ্গে বাজার মনিটরিংয়ের মধ্যদিয়ে চাষিদের ন্যায্যমূল্য দিতে পারলে ক্ষতির আশঙ্কাও কেটে যাবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নজর দেয়া খুব প্রয়োজন।