ষোলো আনা
মোগো বাড়ি বরিশাল
জিন্নাত আরা জশোয়া
৯ জুলাই ২০২২, শনিবারছবি- জীবন আহমেদ
ঈদ এলেই বাড়ি ফেরার প্রহর গোণা। তবে বাড়ি যাবার ভোগান্তির কথা ভাবতেই মধুর অপেক্ষা রূপ নেয় উৎকণ্ঠায়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হতো দক্ষিণবঙ্গের মানুষদের। হয় দীর্ঘ সময় পদ্মা পার হয়ে ওপারে যাওয়ার অপেক্ষা, আর না হয় টইটুম্বুর লঞ্চের দৃশ্য দেখে ঘাট থেকে ফিরে যাওয়া। যদিও এসবই এখন অতীত। প্রথমবারের মতো দক্ষিণবঙ্গের মানুষ স্বপ্ন নিয়ে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরছেন।
‘মোগো বাড়ি বরিশাল’, দক্ষিণবঙ্গের মানুষ হওয়ায় এর আগে ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি নেহাত কম পোহাতে হয়নি। কখনো মাওয়া পার হওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েছি আবার কখনো ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে করে বাড়ি ফিরেছি। আমি একবার ৯ ঘণ্টা ফেরির জন্য অপেক্ষা করেছি। হয়ে পড়েছিলাম অসুস্থ। ঝুঁকির চিন্তা করে পরিবার ছেড়ে শহরে একা ঈদ উদ্যাপনও করেছি কয়েকবার।
তবে এবার আর পদ্মাকে সর্বনাশা বলে গালি দিতে দিতে পদ্মা পার হচ্ছি না। এবার পদ্মার সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে ঘরে ফিরছি। শুধু আমি নই, দক্ষিণবঙ্গের মানুষের মুখে যেমন নির্বিঘ্নে ঘরে ফেরার আনন্দ, তেমনই স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হওয়ার আনন্দ। কয়েক ঘণ্টার কষ্ট কেবল ৬ থেকে ৭ মিনিটেই শেষ। পদ্মা সেতু যে শুধু ঈদের আনন্দের মাত্রা বাড়িয়েছে তা নয়, সারা বছরের শত প্রতিকূলতা, ঝামেলা থেকে মুক্তি দিয়েছে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে একটি লেখা পড়েছিলাম, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে ‘পদ্মা সেতু’ হচ্ছে জেল জীবনের অবসান হওয়ার মতো। সেই মুক্তির স্বাদ যে কতো সুন্দর হতে পারে তা বুঝতে পারলাম ঈদে ঘরে ফিরে। এইতো গেল ঈদেও কত যুদ্ধ করে ঘরে ফিরতে হলো, কেটে গেল গোটা একটা দিন। আর এবার মাত্র ৬ ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। ‘খ্যাতার গাট্টি’ নিয়ে লঞ্চে কিংবা দীর্ঘ সময় ফেরির অপেক্ষা করতে হয়নি এবার। এই প্রথমবার যেন কয়েকগুণ বেশি আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরলো।