শেষের পাতা
সিলেটের সীমান্তবর্তী ৩ উপজেলায় ভিন্ন চিত্র
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২২ মে ২০২৪, বুধবারকেন্দ্রের বাইরে জটলা, ভেতরে ভোটারের সরব উপস্থিতি। এমন দৃশ্য এখন আর সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফার উপজেলা নির্বাচনে সিলেটের সীমান্তবর্তী তিন উপজেলার ভোটে স্বল্পসংখ্যক হলেও ভোটারের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। এতে খুশি প্রার্থীরা। প্রতীক ছাড়া ভোট হওয়ার কারণে ভোটাররা কেন্দ্রে আসছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রাও। ভোট শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে জৈন্তাপুরের লামাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে কিছুসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এ কেন্দ্রে উপস্থিত থাকা উপজেলার বাসিন্দা ও সেভ দ্য হেরিটেজ বাংলাদেশ’র সভাপতি আব্দুল হাই আল হাদি মানবজমিনকে জানিয়েছেন- তিনি উপজেলার দরবস্ত, নিজপাঠ, জৈন্তাপুর ইউনিয়নের ১০ থেকে ১২টি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। প্রতিটি কেন্দ্রেই দেখেছেন অল্প হলেও ভোটারের উপস্থিতি ছিল। তিনি জানান, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা গ্রহণযোগ্য হওয়ার কারণে এবং ভোটের পরিবেশ স্বাভাবিক থাকায় ভোটাররা কেন্দ্রে এসেছেন। অথচ এই ভোটাররা নিকট অতীতের জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে আসেননি। অনেক কেন্দ্রে সকালে নারী ভোটার ও বিকালে পুরুষ ভোটারের উপস্থিতি ছিল বলে জানান তিনি। জৈন্তাপুরের মানিকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, প্রখর রোদে বোরকা পরে মহিলা ভোটাররা দাঁড়িয়ে আছেন লাইনে। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন গাছের ছায়ায়। সকালের দিকে ওই কেন্দ্রে মহিলা ভোটারের উপস্থিতি বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। দুপুরে একই দৃশ্য দেখা গেছে সেন্ট্রাল জৈন্তাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে। বেলা ১টার দিকে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জানালেন ৪০ শতাংশ ভোট তার কেন্দ্রে পড়েছে। বিকালের দিকে পুরুষ ভোটাররা বেশি আসবেন বলে জানান তিনি। জৈন্তাপুর দারুচ্ছন্নাহ মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রের বাইরে দুপুরের দিকে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। চেয়ারম্যান প্রার্থী এম লিয়াকত আলী ও আব্দুল গফ্ফার খরুর সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়ায় টহলে থাকা পুলিশ ও র্যাবের টিম এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। অভিযোগ পেয়ে সেখানে যান জৈন্তাপুর থানার ইউএনও উম্মে সালিক রুমিয়াও। চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল গফ্ফার চৌধুরী খসরু মানবজমিনকে জানিয়েছেন- দারুচ্ছন্নাহ ও গুচ্ছ গ্রাম কেন্দ্রে জোরপূর্বক টেবিল কাস্টিংয়ের চেষ্টা করা হয়েছিল। আমরা অভিযোগ দেয়ার পর নির্বাচনী কর্মকর্তারা এবং র্যাব ও পুলিশের কয়েকটি টিম সেখানে গিয়েছেন। ভোটারের উপস্থিতির ব্যাপারে তিনি বলেন- অনুমতি নিয়ে প্রার্থীরা ভোটারদের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে। প্রতিদ্বন্দ্বী থাকায় ভোটাররাও কেন্দ্রে এসে ভোট দিয়েছেন। এদিকে, সকাল ১১টার দিকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে চিকনাগুল ইউনিয়নের শাহজালাল (র.) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ৫ জন এজেন্টকে আটক করা হয়। একই সময় ফতেপুর ইউনিয়নের শিকারখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র হতে হাতের আঙ্গুলে কালি ব্যবহারে বাঁধা দেয়ার কারণে প্রার্থীর সমর্থককে পুলিশ আটক করেন। দুই জায়গা থেকে আটককৃত ৬ জনকে জৈন্তাপুর থানায় নিয়ে যান ভ্রাম্যমান স্ট্রাইকিং ফোর্সের কর্মকর্তারা। বেলা ২টা পর্যন্ত উপজেলার নিজপাট ইউনিয়ন ৪০ শতাংশ, জৈন্তাপুর ইউনিয়নে ৪০ শতাংশ, চারিকাটা ইউনিয়নে ৩০ শতাংশ, দরবস্ত ইউনিয়নে ৪৫ শতাংশ ফতেপুর ইউনিয়নে ২০ শতাংশ এবং চিকনাগুল ইউনিয়নে ১৫ শতাংশ ভোট কাস্টিং হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। কয়েকটি ইউনিয়নে কেন্দ্রে ভোটার আসার কারণ উল্লেখ করে তারা জানিয়েছেন; প্রতিদ্বন্ধিতা থাকার কারণে ভোটাররা এসেছেন। প্রার্থীরা ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পেরেছেন বলে মনে করেন তারা। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শামীম আহমদের বাড়ি পাড়ুয়া গ্রামে। বেলা আড়াইটার দিকে তার কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে আরেক প্রার্থী মজির উদ্দিন জাল ভোটের অভিযোগ তুলেন। এ সময় শামীম আহমদের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ও র্যাব গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে সেখানে যান প্রার্থী শামীম আহমদ। এতে প্রায় এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় ভোটাররা কেন্দ্র ছেড়ে চলে যায়। পরে চেয়ারম্যান প্রার্থী মজির উদ্দিন মানবজমিনকে জানান, জাল ভোটের অভিযোগ দেয়ায় প্রতিপক্ষরা উত্তেজনা সৃষ্টি করে। প্রশাসন গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে। তিনি বলেন, প্রার্থীর কেন্দ্রে অনিয়মের বিষয়টি কোনো ভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে; চেয়ারম্যান প্রার্থী শামীম আহমদের ভাই বিলাল আহমদ পাল্টা অভিযোগ করে বলেন; কোনো জাল ভোট ছিল না। কেন্দ্রে গোলযোগ করতে অযথা অভিযোগ তোলা হয়েছিল। তবে- সকাল থেকে কোম্পানীগঞ্জ থানা সদর, পুর্ণাচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুকেরবাজার শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় সহ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে; প্রতিটি কেন্দ্রে লাইনে ১৫-২০ জন ভোটারের উপস্থিতি ছিলো।