ভারত
ভোট চলাকালীন কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে চলল গুলি, শোনা গেলো বোমার শব্দও
সেবন্তী ভট্টাচার্য্য , কলকাতা থেকে
(৭ মাস আগে) ২০ মে ২০২৪, সোমবার, ৪:৪৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৯:৩০ পূর্বাহ্ন
সোমবার পঞ্চম দফার ভোটে বেলা বাড়ার পরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার লিলুয়ার বজরঙবলী মার্কেট সংলগ্ন এলাকা। বুথের বাইরে বোমা-গুলির শব্দ শোনা গিয়েছে বলে অভিযোগ। এরপরই বুথ ছেড়ে কার্যত পালিয়ে যান ভোটাররা। থমথমে হয়ে যায় গোটা এলাকা। পাশাপাশি ডন বসকো গভর্নমেন্ট কোয়ার্টারে বুথের বাইরে গুলি ও বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে । এই ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। পরে বিশাল বাহিনী ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে, যদিও তা অস্বীকার করেছে তারা।
শুধু হাওড়া নয়, টুকরো টুকরো অশান্তির ছবি এদিন দেখা গিয়েছে গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে। ব্যারাকপুর, হুগলি সহ একাধিক জায়গায় মারধর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ভোটের দিন কার্যত রণদেহী মেজাজে দেখা গেল লকেট চট্টোপাধ্যায়কে। বিজেপির দাবি, ভুয়া এজেন্ট ধরেছেন লকেট। ধনিয়াখালির দশঘড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনা। লকেট বলেন, সব ওসি, ডিএমের সই জাল করে কার্ড বানিয়ে এনেছে। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
তিনটি বুথে ঢুকে ভোটার সহায়তা কেন্দ্রে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন কর্মীকে সরিয়ে দেন লকেট। ভোটার সহায়তা কেন্দ্র থেকে বার করে দেন আসা কর্মীদের। এদিকে এরইমধ্যে এই ধনিয়াখালিতেই তৃণমূলের বিক্ষোভেরও মুখে পড়তে হয় লকেটকে। তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক অসীমা পাত্র বলেন, “ওনারা তো ডাকাত। এখানে এসে নাটক করছেন কেন? ভালভাবে ভোট হচ্ছে দেখে এসেছেন ঝামেলা করতে। এতদিনে একবারও আসেননি।”
ধুন্ধুমার কাণ্ড দেখা যায় উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়ে। বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়, ভাঙচুর করা হয় তার গাড়ি। অভিযোগ শাসকদলের লোকজন বুথ জ্যাম করে ভোট করাচ্ছিলেন। এই নিয়ে অভিযোগ পেতেই সংশ্লিষ্ট বুথে যাচ্ছিলেন কৌস্তভ। এরপর তিনি পৌঁছতেই তাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। বুথে ঢুকতে গেলে তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। অপরদিকে, ব্যারাকপুরের অর্জুন সিংয়ের গড়ে এই ঘটনা ঘটায় বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং বলেন, “ওরা যা করার করছে। আমরাও যা করার করছি।”
এই ঘটনায় ‘অ্যাকশন টেকেন’ রিপোর্ট চেয়েছে কমিশন। ভোট দিতে যাওয়ার পথে বিজেপি কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হলেন তৃণমূল নেতা। বাড়ি থেকে বেরুনোর সময় মারধরের অভিযোগ ওঠে তাকে। শুধু তাই নয়, মেরে তার পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে গেরুয়া শিবির। আহত তৃণমূল নেতার নাম তাপস বেড়া। তিনি তারকেশ্বর রামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫৬ নম্বর বুথের তৃণমূলের বুথ সভাপতি। তাপসবাবুর দাবি, এ দিন সকালে তিনি ভোট দিতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় আরামবাগ লোকসভার বিজেপি প্রার্থী অরূপ কান্তি দিগরের গাড়ি যাচ্ছিল। হঠাৎই তাকে দেখে গাড়ি থামিয়ে দেন। এরপর গাড়ি থেকে বেশ কয়েকজন বিজেপির স্থানীয় কর্মী নেমে তাকে বেধড়ক মারধর করেন।
পঞ্চম দফায় সকাল থেকেই নির্বিঘ্নে ভোট হচ্ছিল বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে। হঠাৎই প্রবল জোরে হাওয়া বইতে থাকে। শুরু হয় বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি। মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে পড়ে বাগদার মশ্যমপুর ভোট কেন্দ্রের আশেপাশের অস্থায়ী ছাউনি ও রাজনৈতিক দলের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন প্রবল বেগে হাওয়া বইতে থাকে। ঝড়ের দাপটে ভোট কেন্দ্র ছেড়ে যে যার মত দৌড়ে পালান। কিছু ভোটার ভোট কেন্দ্রের মধ্যে আশ্রয় নেন। পাশাপাশি গাইঘাটার ঝাউডাঙ্গা পঞ্চায়েতের আংরায়েলের ২১৭ নম্বর বুথে প্রবল ঝড় বৃষ্টির কারণে ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায় ।বিদ্যুৎ বিভ্রাটের একাধিক অভিযোগ নিয়ে কার্যত জেরবার হতে হয় নির্বাচন কমিশনকে ।