খেলা
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজের দায়িত্বে ‘উধাও’ আম্পায়ার
স্পোর্টস ডেস্ক
(৭ মাস আগে) ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৬:২৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৫:৪৫ অপরাহ্ন
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অন্যতম স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। আইসিসির সহযোগী সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে এটিই হতে চলেছে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ। আগামীকাল হিউস্টনের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে হবে প্রথম টি-টোয়েন্টি। এই সিরিজে আম্পায়ারিং করবেন সামির বান্দেকার, জারমেইন লিন্ডো, আদিত্য গাজ্জার, বিজয়া মাল্লেলা। এদের মধ্যে সামির এক বিশেষ কারণে আলোচিত নাম। একবার মাঠ থেকে ‘উধাও’ হয়েছিলেন তিনি!
এই সিরিজে ৪ জনই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও কেউ সেখানে জন্ম নেননি। বান্দেকার, গাজ্জার ও মাল্লেলা ভারতীয় বংশোদ্ভূত আর লিন্ডো জ্যামাইকান। এদের মধ্যে সামিরই অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে এগিয়ে। তবে প্রায় দেড় যুগ আগের এক ঘটনায় ফের আলোচনায় উঠে এসেছেন তিনি।
ঘটনাটা ২০০৬ সালের। ওই বছরের ৪ই ডিসেম্বর ফিরোজ শাহ কোটলায় (বর্তমান নাম অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম) রঞ্জি ট্রফি ম্যাচের শেষ দিনে মুখোমুখি হয় দিল্লি আর উত্তর প্রদেশ। বৃষ্টির কারণে কারণে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন মিলিয়ে প্রায় ৬৮ ওভারের মতো নষ্ট হয়। এতে ম্যাচটি নিশ্চিত ড্রয়ের দিকে এগোচ্ছিল।
তবে শেষ দিনে দিল্লি চেয়েছিল যতক্ষণ সম্ভব ব্যাটিং করতে। দিল্লির সেই সময়ের ওপেনার ও বর্তমান ধারাভাষ্যকার আকাশ চোপড়া ৬৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। প্রথম ইনিংসে ১৫০ রান করা আকাশ দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরির দিকেই এগোচ্ছিলেন। সেদিন খেলেছিলেন বিরাট কোহলিও। ১৩ রানে অপরাজিত থাকা কোহলিরই শেষ দিনে আকাশের সঙ্গে ব্যাটিং শুরুর করার কথা ছিল।
কিন্তু শেষদিন সকাল ৯টায় ঘন কুয়াশার জন্য সৃষ্ট আলোকস্বল্পতাকে কারণ দেখিয়ে খেলা শুরুর সময় পিছিয়ে দেন মাঠের দুই আম্পায়ার ইভাতুরি শিবরাম ও সামির বান্দেকার। এরপর বেলা ১১টার আগে রোদ উঠে, কুয়াশাও কেটে যায়।
আবহাওয়া ভালো দেখে দুই দল গা গরম করা শুরু করে। কারণ স্বাভাবিকভাবে তখন খেলা শুরু হওয়ার কথা। তবে এরপরই ঘটে আশ্চর্যজনক ঘটনা। আচমকাই সবাই খেয়াল করে আম্পায়ার সামির বান্দেকার ও ম্যাচ রেফারি সম্বরন ব্যানার্জি মাঠে নেই। স্টেডিয়ামের সব জায়গায় খুঁজেও তাদের পাওয়া গেলো না। অথচ তখন দুই দলই মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত।
এর প্রায় ঘণ্টা খানেক পর মাঠে হাজির হন সামির ও সম্বরন। মাঠে এসেই মধ্যাহ্নভোজ বিরতির ঘোষণা দেন তারা। এর আগে এতক্ষণ কোথায় ছিলেন সেসব প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি দুজনে। মধ্যাহ্নভোজের সময় আবার আবহাওয়ার অবনতি হয়। আকাশে মেঘ হলে দেখা দেয় আলোকস্বল্পতা। এরপর তড়িঘড়ি করে দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন সম্বরণ ও সামির। ফলে ম্যাচটি ড্র হয়। অথচ তখনও বাকি দুই সেশন।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, দিনের খেলা বাতিল ঘোষণার কিছুক্ষণ পর আবার রোদ ওঠে। তখন দুই দলের কোচই খেলা আবার শুরু করার অনুরোধ জানান। কিন্তু একবার খেলা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার খেলা আর শুরু করা যায় না।
সম্প্রতি প্রায় ১৮ বছর আগের সেই ঘটনা নিয়ে দিল্লির সে সময়ের কোচ চেতন চৌহান ও উত্তর প্রদেশের কোচ রাজিন্দার সিং ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, ‘আমরা খেলতে নামার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু তাঁরা (ম্যাচ অফিশিয়ালরা) কেন খেলা শুরু করেননি, এ ব্যাপারে আমাদের কোনো ধারণা নেই।’
ম্যাচ শেষে অফিশিয়ালদের বিরুদ্ধে দিল্লি অ্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (ডিডিসিএ) কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দেয় দুই দল। এরপর জেরার মুখে ম্যাচ রেফারি দাবি করেন, তিনি টয়লেটে ছিলেন।
এরপর হিন্দুস্তান টাইমস এ বিষয়ে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখান থেকে জানা যায়, ফিরোজ শাহ কোটলার অদূরে সেন্ট স্টিফেনস গ্রাউন্ডে বেঙ্গল ও পাঞ্জাব অনূর্ধ্ব-২২ দলের খেলা চলছিল। ম্যাচ রেফারি সম্বরন ব্যানার্জি বাঙালি হওয়ায় বেঙ্গলের খেলা দেখতে চলে যান সেখানে। তবে একাই যেতে চাননি তিনি, সে কারণে সামির বান্দেকারকে সঙ্গে নেন।
ওই ম্যাচে বিরতির সময় তারা ফিরোজ শাহ কোটলায় ফিরে এসে দিল্লি-উত্তর প্রদেশের ম্যাচে মধ্যাহ্নভোজ বিরতির ঘোষণা দেন। এই ঘটনার পর দ্রুতই ভারত ত্যাগ করেন সামির। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিয়ে আমেরিকান অঞ্চলে আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর ম্যাচে আম্পায়ারিং করতে শুরু করেন।
১৯৯৭ সালে মেয়েদের একটি ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় সামিরের। তিন সংস্করণ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪টি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন তিনি। ৫৯ বছর বয়সী বান্দেকারই এখন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে অভিজ্ঞ আম্পায়ার। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ও শেষ ম্যাচে মাঠে আম্পায়ারিং করবেন তিনি।