দেশ বিদেশ
ফেরত দিতে হবে বেতন-ভাতা
ছাগলনাইয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান ঘোষণা ছিল অবৈধ
ফেনী প্রতিনিধি
১৮ মে ২০২৪, শনিবারপঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার চেয়ারম্যান ঘোষণা করাকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাঁচ বছর আগে করা পৃথক দু’টি রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল জলীলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। একইসঙ্গে ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত মেজবাউল চেয়ারম্যান হিসেবে যত বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি গ্রহণ করেছেন তা ৩০ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ে ওই সময়ের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী এডভোকেট এএসএম শহিদুল্লাহ মজুমদারের প্রার্থিতা বাতিল বহাল এবং আব্দুল হালিমের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ বলা হয়েছে। আদালতে আব্দুল হালিম ও শহীদ উল্যাহ মজুমদারের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার এসএম কফিল উদ্দিন। সোহেল চৌধুরীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ ও মো. অজি উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বলেন, ২০১৯ সালে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রার্থী আব্দুল হালিম ও শহীদ উল্যাহ মজুমদারের প্রার্থিতা বাতিল করেন। এর ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাগলনাইয়ার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর মধ্যে প্রার্থিতা ফেরত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন বাতিল হওয়া দুই প্রার্থী। একইসঙ্গে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সোহেলকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। ২০১৯ সালেই হাইকোর্ট এসব বিষয়ে রুল জারি করেন। একইসঙ্গে ছাগলনাইয়ার উপজেলা চেয়ারম্যানের গেজেট স্থগিত করেন। পরে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করেছিলেন। তিনি বলেন, মেজবাউল ২০১৯ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও অন্য দুই প্রার্থীর প্রার্থিতা ফিরে পাওয়াসহ জটিলতার কারণে তাকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হিসেবে গেজেট করা হয়নি। তাকে শপথও দেয়া হয়নি। এ সত্ত্বেও ২০১৯ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর থেকে তিনি দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান ঘোষণা এবং ফলাফলের গেজেট ও শপথ ছাড়া তার দায়িত্ব পালন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে এই সময়ে পরিষদের নেয়া সিদ্ধান্ত কার্যক্রম বৈধ বিবেচিত হবে বলে রায়ে এসেছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।চেয়ারম্যান হিসেবে মেসবাউল যে বেতন-ভাতা ও সুবিধা নিয়েছেন ৩৩ লাখ ২৬ হাজার ৬১৯ টাকা। তা রায় পাওয়ার এক মাসের মধ্যে ফেরত দিতে বলেছেন। এই সময়ের মধ্যে ফেরত না দিলে ফেনীর জেলা প্রশাসককে তার থেকে তা আদায় করতে বলেছেন। রায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান জানান, রায়ে বলা হয় এখন নতুন করে ওই নির্বাচনের আইনগত সুযোগ নেই। আগামী ৫ই জুন ছাগলনাইয়ায় ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ আদেশের মাধ্যমে নির্বাচনে আর কোনো বাধা রইলো না। ইতিমধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকরী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ হয়েছে। আগামী ২০শে মে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। তবে এবার দলীয় মৌন সমর্থন না পাওয়ায় বিগত সময়ে ‘চেয়ারম্যান পদে অবৈধ দায়িত্ব পালনকারী’ সেই মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না।