ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

মৎস্যচাষিদের প্রণোদনার অর্থ পাচ্ছে কারা?

সিরাজুস সালেকিন
৭ জুলাই ২০২২, বৃহস্পতিবার

সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্টের অধীনে সাতক্ষীরা জেলার চার উপজেলার মৎস্যচাষিদের মাঝে প্রণোদনার অর্থ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ   উঠেছে। প্রণোদনার অর্থ পাওয়ার যোগ্য অনেকের নাম তালিকায় নেই। সাতক্ষীরার বাইরের এলাকার লোককে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আবার প্রকৃত মৎস্যচাষি নন কিন্তু প্রণোদনার অর্থ গ্রহণ করেছেন-এমন ব্যক্তিও রয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, তালিকায় ভুয়া নাম ও মোবাইল নাম্বার বসিয়ে প্রণোদনার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া সাতক্ষীরার তালা, শ্যামনগর, কালীগঞ্জ ও দেবঘাটা উপজেলার মৎস্যচাষিদের একটি তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে প্রণোদনার অর্থ পেতে ভোটার আইডি কার্ড ও ছবি দিয়েছেন। তালিকায় তাদের নাম উঠলেও তাদের ফোনে টাকা পৌঁছেনি।  দেবহাটা উপজেলার চর গ্রামের আফিয়া আক্তার মিরা জানান, তার গ্রামের মেম্বার তার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি নিয়েছেন। 

কিন্তু তিনি কোনো টাকা পয়সা পাননি। তার মতোই টাকা না পেয়েও তালিকায় আছেন কার্তিক চন্দ্র সরকার ও চায়না খাতুন। অন্যদিকে দেখা গেছে, একই গ্রামের সকলে টাকা পেয়েছেন কিন্তু পাশের গ্রামের কেউ টাকা পায়নি।

বিজ্ঞাপন
কিন্তু তালিকায় তাদের নাম উঠেছে। কালিগঞ্জ উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের মৎস্যচাষি আবু মুসা, নুর আলম, প্রশান্ত সরকার, রবীন্দ্রনাথ মৃধা, শ্রীকান্ত, গিয়াস উদ্দিন ছাড়াও নারায়ণপুরের রবিউল, মিন্টু ও আবু সিদ্দিক টাকা পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন। এই উপজেলার মৎস্যচাষি মিন্টু সরকার জানান, তার গ্রামে যারা প্রকৃত মৎস্যচাষি তাদের অনেকে টাকা পেলেও তা পরিমাণে কম পেয়েছেন।  তিনি অন্যদের সঙ্গে টাকা পাবার আশায় ভোটার আইডি কার্ড দিয়েছিলেন কিন্তু টাকা পাননি। পলাশ কাজী নামে এক ব্যক্তিকে এই উপজেলায় মৌতলা এলাকার মৎস্যচাষি হিসেবে দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি সেই এলাকার কেউ নন।

 শ্যামনগর উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার যাওয়াখালি গ্রামের ৪ মৎস্যচাষির নাম তালিকায় আসলেও তারা কেউ টাকা পাননি। তাদের মধ্যে একজন রবীন্দ্রনাথ মৃধা। তার মোবাইলে ফোন করা হলে ফোনের অপর পাশে থাকা ব্যক্তি জানান তার নাম হৃদয়। তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। তিনি মৎস্যচাষি নন। এই গ্রামের মৎস্যচাষি রুহুল আমিন জানান, যাদের কম ক্ষতি হয়েছে তারাই টাকা পেয়েছে কিন্তু যারা প্রকৃত মৎস্যচাষি তারা কেউ টাকা পাননি। এই উপজেলার বেতাগী গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন হালদার জানান, তার গ্রামের মেম্বার তার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফটোকপি নিয়েছিলেন। তার মতো শেখ আল আমিন হোসেনও কাগজপত্র জমা দেন কিন্তু টাকা পাননি। অন্যদিকে তাদের গ্রামে বসবাস করে আলমগীর নামে এক ব্যক্তি যিনি বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করেন। তাকে সেখানকার মৎস্যচাষি দেখিয়ে টাকা পাঠানোর দাবি করা হয়েছে। 

এ ছাড়াও মৎস্যচাষি না হয়েও রথীকান্ত মিস্ত্রি নামে এক ব্যক্তি টাকা পেয়েছেন বলে তালিকায় নাম উঠেছে। উপজেলার তালিকায় যাদবপুর গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ রমিছা বেগম, সাবিনা আক্তারসহ অনেকের নাম-ঠিকানার সত্যতা পাওয়া যায়নি। এই তালিকা ধরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলা হলে তাদের অনেকে জানিয়েছেন, মৎস্য কর্মকর্তারা তাদের নামের তালিকা নিয়ে গেছেন। সেই তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ঢাকা থেকে টাকা পাঠানোর সময় তাদের মোবাইলে কোনো টাকা পাঠানো হয়নি অথচ তাদের নাম ও মোবাইল নাম্বার তালিকায় উঠেছে বলে তারাও বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন?। 

এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুল হক বলেন, প্রণোদনার অর্থ সকল মৎস্যচাষিকে দেয়া হয়নি। এটা মাত্র ১৩ শতাংশ চাষি পেয়েছেন। টাকা সরাসরি ফোনে পাঠানো হয়েছে। প্রকৃত তালিকায় থাকা কেউ যদি অর্থ না পেয়ে থাকে তবে সে অভিযোগ করতে পারে। আমরা এ ধরনের অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ আসলে আমরা তদন্ত করে দেখবো। এদিকে মৎস্য খাতে প্রণোদনার অর্থ বিতরণের অনিয়মের বিষয়ে একাধিক অভিযোগ ইতিমধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে এসেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে তদন্তের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। দুদক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।  

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status