ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

বড় গরুতে চোখ বেশি, বিক্রি ছোট গরু

পিয়াস সরকার
৭ জুলাই ২০২২, বৃহস্পতিবার
mzamin

রাজধানীর গাবতলীর পশুর হাটে ঢুকতেই দেখা মেলে গরু কিনে ফিরছেন ইকবাল আহমেদ। সকলের একটাই প্রশ্ন দাম কত? বিক্রেতা পিকআপে উঠিয়ে দিতে যাচ্ছেন, আর ক্রেতা বলছেন ৭৩ হাজার টাকা। অনেকেই বলেন, জিতছেন ভাই। হাঁকডাকে জমজমাট গাবতলী হাট। কিন্তু ক্রেতারা আসছেন ঢিমেতালে। যাচাই করছেন দাম। কিন্তু কিনছেন কমই। ক্রেতারা বলছেন, দাম যাচাই পর্ব চলছে। আর বিক্রেতাদের আশা শুক্রবার ও শনিবার বিক্রি হবে অধিকাংশ গরু। ঈদের দু’ একদিন আগে কিনবেন  কোরবানির পশু।

বিজ্ঞাপন
সারি সারি সাজানো গরু। ক্রেতারা খুব একটা দাম বলছেন না আর বিক্রেতারাও কমাচ্ছেন না দাম। গরু ছাড়াও আছে ছাগল, মহিষ ও উট। বুধবার সরজমিন গাবতলীর হাটে দেখা যায়, বড় গরু দেখতে ভিড় করছেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। তবে কেনার জন্য ছোট গরুর চাাহিদা বেশি। আবার মাঝারি গরুও বিক্রি হচ্ছে বেশ। বাজারে ১০ লাখ বা তার বেশি দামের গরু রয়েছে অনেক। তবে ক্রেতারা হাঁকছেন না আশানুরূপ দাম। পাবনা থেকে সাতটি গরু নিয়ে এসেছেন মোশারফ মিয়া। তার পালিত গরু দু’টি আর বাকিগুলো কেনা। 

তিনি দুইদিন ধরে হাটে বসে থাকলেও গাঁটে গুঁজতে পারেননি কোনো টাকা। সাতটি গরুর মধ্যে ‘কিং’-এর দাম হাঁকছেন ১২ লাখ টাকা। ২টি গরুর দাম আড়াই থেকে তিন লাখ। আর বাকি গরুগুলোর দাম চাচ্ছেন এক লাখ টাকা। মোশারফ বলেন, কিং’র দাম চাই ১২ লাখ টাকা। সর্বোচ্চ ছয় লাখ টাকা বলছে। এই দামে বেচলে আমার লস হইবো। তয় আশা করি এই সাতটা গরু বিক্রি হইবো। ছোট যে চারটা গরু আছে ৭০ হাজার পর্যন্ত কইছে। আরেকটু বাড়াইলেই দিয়া দিমু। কিন্তু আমার চিন্তা কিং’রে নিয়া। এই গরু ফিরা নিয়া গেলে বহুত লস হইয়া যাইব। তবে ক্রেতারা অতিরিক্ত দামের অভিযোগ করেন। শামসুল ইসলাম হাটে ঘুরে ঘুরে গরু দেখছিলেন। তিনি বলেন, এর আগের ঈদে যে গরুর দাম ছিল ৫০ হাজার টাকা সে গরু এবার ৭০ হাজার টাকা বললেও দিচ্ছে না। আরেক ক্রেতা ইয়ামিন মোল্লা বলেন, আমরা সাতজন মিলে একটা গরু কোরাবনি দেবো। 

আমাদের বাজেট এক লাখ টাকা। কিন্তু যে গরুর দাম ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ছিল গত ঈদে। সেটা এবার এক লাখ টাকাতেও মিলছে না। তবে বিক্রেতারা বলছেন, আগের থেকে পালন ব্যয়. পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়াতেই বাধ্য হয়ে বেশি দাম হাঁকছেন তারা। গাবতলীর পশ্চিম কোনায় দেখা যায় প্রচুর মানুষের ভিড়। রাজা বাবু ও খানবাহাদুর নামে দু’টি গরু দেখছেন সবাই। তুলছেন ছবিও। দু’টি গরুর মাথার ওপরে ঘুরছে দু’টি টেবিল ফ্যান। দু’টি গরুর দামই হাঁকা হচ্ছে ১৫ লাখ করে। মালিক সাইদুর রহমান বলেন, মানুষতো শুধু ছবিই  তোলে। কেনে আর কই। এই দুইটা গরুর পিছনে আমার প্রতিদিন খরচ হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা। গরু দুইটা নড়াইল থেকে ঢাকায় আনতে খরচ হইছে ১২ হাজার টাকা। সেদিন এক লোক আসলো, সাত-আটজন নিয়ে। দাম জিগাইলো ১৫ লাখ কইলাম। আমারে কয় দুইটা ১৫ লাখ। আমার কান্না আসছে শুনে। শেষে দুইটা ১৬ লাখ বলছে। কিন্তু দেই নাই। কিন্তু এখনতো দেখি ৫ লাখ ৬ লাখ বলে। মিরপুর-২ থেকে ব্যবসায়ী ইকরামুল ইসলাম এসেছেন গরু কিনতে। কোরবানির পাশাপাশি কিনবেন মানতের গরু। সকাল থেকেই শুধু দেখেই যাচ্ছেন গরু। 

আর ক্রেতা কম থাকায় রীতিমতো শুরু হয় ডাকাডাকি। তিনি হাটের এমাথা থেকে ওমাথা শুধুই দাম জিজ্ঞাসা করে গেলেন। তার ছেলে পছন্দের গরুর ছবি তুলে রাখছেন। তবে দাম শুধু শুনেই গেলেন। কোনো দাম বললেন না। এরপর কিছু সময় বিশ্রামের পর সড়কের ধারে বসলেন চায়ের দোকানে। তার সঙ্গে রয়েছেন আরও চারজন। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলেন। এরপর শুরু করলেন পছন্দের গরুর দামাদামি। দু’টি গরু কিনেন এক লাখ ও এক লাখ ১০ হাজার টাকায়। আর একটি কিনলেন ৮৫ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, এবারের গরুর দাম বেশি। এক লাখ করে কেনা গরু দেখিয়ে বললেন, এর আগের ঈদে এই গরু পাওয়া গেছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। আর ৮৫ হাজার টাকার গরুটি এবার নিতে হয়েছে ২০ হাজার টাকা বেশিতে। হাটে বেশ সতর্ক ব্যবসায়ীরা। তারা বেশ সময় নিয়ে গুনে নিলেন টাকা। একই টাকা গুনে আবার আরেকজন ব্যবসায়ী ফের পরখ করায় ব্যস্ত। কথা হয় গরু ব্যবসায়ী সবুজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি এসেছেন কুষ্টিয়া থেকে। তিন ব্যবসায়ী নিয়ে এসেছেন ২৩টি গরু। বিক্রি হয়েছে তাদের ১৫টি গরু। সবুজ মিয়া বলেন, ছোট গরু বিক্রি হচ্ছে।

 মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে এক লোকই নিয়ে গেছে চারটা গরু। তিনি গরুর দামে সন্তুষ্ট। তিনি জানান, ২০২০ সালে গরু আটকে রেখে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা লোকসান গুনেছিলেন। তাই এবার আগে-ভাগেই লাভ হলেই ছেড়ে দিচ্ছেন। তবে সাড়ে তিন লাখের গরু আছে দু’টি। এগুলো নিয়ে চিন্তায় আছেন তিনি। ছাগলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা নাই বললেই চলে। তবে ছাগল রয়েছে প্রচুর। ইব্রাহীমের সাভারে আছে ছাগলের খামার। তিনি নিয়ে এসেছেন ২৮টি ছাগল। ইতিমধ্যে বিক্রি হয়েছে ছয়টি ছাগল। তিনি বলেন, ছাগলের ক্রেতা সাধারণ হাটে কম হয়। মানুষ অলিতে গলিতেই কেনে। অনেকেই আমাদের কাছ থেকে কিনে বিক্রি করে। এবারের ছাগলের দাম ভালো। ছোট ছাগল বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ছয় হাজার টাকা থেকে আট হাজার টাকায়। আগের অভিজ্ঞতা বলে, ছাগল মানুষ কেনে ঈদের আগের দিন বেশি। তাই আশা করছি সব বিক্রি হবে। 

বাজারে রয়েছে জাল টাকা পরীক্ষার মেশিন। চালান কাটার সময় এই টাকা মেশিনে পরখ করে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন বিক্রেতারা। আর পশু চিকিৎসকও কয়েকজনকে দেখা যায়   ঘোরাঘুরি করতে। সাব্বির রহমান নামে এক পশু চিকিৎসক বলেন, আমরা হাটেই থাকি। কেউ চাইলে আমাদের দিয়ে কোরবানির পশু দেখাতে পারেন। ৫০০ টাকার বিনিময়ে গরুর রক্ত পরীক্ষা, হৃদস্পন্দন পরিমাপ, লালা ইত্যাদি পরীক্ষা করে জানিয়ে দেই গরু কতটা সুস্থ কিংবা ইনজেকশন পুশ করা কিনা।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status