শেষের পাতা
মৌলভীবাজারে বন্যা
পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কমেনি দুর্ভোগ
ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে
৭ জুলাই ২০২২, বৃহস্পতিবারমৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি। ধীরগতিতে কমছে পানি। সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ জলাবদ্ধতা। এখনো বাড়ি ফিরতে পারেনি বন্যার্ত মানুষ। সরজমিন রাজনগর ও সদর উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় গেলে চোখে পড়ে এমন দৃশ্য। এখনো গ্রামের পর গ্রাম। কোথাও নেই কিঞ্চিত শুকনো জায়গা। তাই থাকার জায়গা আর লাশ দাফন নিয়ে চরম ভোগান্তি। ওই এলাকার সবখানেই ঘরবাড়ি ও কবরস্থানে বানের পানি। তলিয়ে যাওয়া বসত ঘরে গলা কিংবা বুকসমান পানি।
জানাজার নামাজ পড়ার স্থান পানিতে তলিয়ে থাকায় ওয়াপদা সড়কেই হয় নামাজ। নাজির মিয়ার ছেলে-মেয়েরা নিজ গ্রাম ছেড়ে ৬ কিলোমিটার দূরে পিতাকে কবরস্থ করায় আহাজারি আর আক্ষেপ করছেন। বন্যা না হলে তারা নিজ গ্রামেই পিতাকে কবর দিতে পারতেন। রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ আর ফতেহপুর। এই দুই ইউনিয়নের প্রায় ২৫-৩০টি গ্রাম। কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী ওই গ্রামগুলো পুরোটাই প্লাবিত। বসত ঘর, গোয়ালঘর, ক্ষেতের জমি, মৎস্য খামার, টিবওয়েল, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সবই ডুবন্ত। সিরাজ মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা গঙ্গাদাশেরগুল গ্রামের শাহীন মিয়া ও জাবেদ আলীসহ অনেকেই জানান বন্যার শুরু থেকেই তারা ঘরবাড়ি ছাড়া। নিজের পরিবার আর গবাদি পশুগুলো নিয়ে অর্ধাহারে- অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। দিনে গবাদি পশুসহ নিজেরাই থাকছেন কবরস্থানে। আর রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে। আগে কবরস্থানে রাত-দিন থাকলেও এখন চুরির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই পানির মধ্যেও বাড়িতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। সুনামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা আমিরুন বেগম, মালতি রানী দাশ, জেসমিন বেগম, আব্দুল হাফিজ ও শাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রের তাবির আলী, আছাদ আহমদসহ ওই এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর একাধিক বন্যার্তরা জানালেন তারা দীর্ঘদিন থেকে আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে আছেন।
আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার,বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা প্রকট। তারা ক্ষোভের সাথে জানালেন সরকারি উদ্যোগে আমরা কোনো কিছুই পাইনি। শুনলাম জেলায় বন্যার্তদের চিকিৎসা সহায়তায় ৬০টি মেডিকেল টিম গঠন হয়েছে কই একদিনতো ওদের দেখা পেলাম না। এখনো কোনো কর্মকর্তা কিংবা জনপ্রতিনিধিও আমাদের দেখতে আসেননি। রোগবালাই আর অনাহারে নানা দুর্ভোগে থাকলেও সরকারের তরফে সংশ্লিষ্টরা শুধুই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, প্রবাসী, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের ব্যানারে অনেকেই কমবেশি সহযোগিতা নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এজন্য আমরা এখনো পর্যন্ত ওখানে কনোরকম ঠিকে আছি। জেলার ৫ টি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। কয়েক ইঞ্চি পানি কমলেও দুর্ভোগের শেষ নেই। হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখার অধিকাংশ গ্রামই এখনো বানের পানিতে তলিয়ে আছে। আর কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার খলিলপুর, মনুমুখ আর উত্তরভাগ ও ফতেহপুর এই ৪টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামই চরম ক্ষতিগ্রস্ত। এখনো জেলাজুড়ে প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। বানভাসিদের দাবি হাওর ও নদী শাসনের জন্য বাঁধ নির্মাণ ও নাব্যতার জন্য খনন করে স্থায়ীভাবে বন্যা সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার।