দেশ বিদেশ
৩ দিনের রিমান্ডে হেনোলাক্সের মালিক, মামলা ডিবিতে
স্টাফ রিপোর্টার
৭ জুলাই ২০২২, বৃহস্পতিবারগাজী আনিস আত্মহত্যার ঘটনায় আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি হেনোলাক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন ও পরিচালক ফাতেমা আমিনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। শাহবাগ থানায় হওয়া মামলাটি তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গাজী আনিস আত্মহত্যার ঘটনায় আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি হেনোলাক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন ও পরিচালক ফাতেমা আমিনের কাছে ব্যবসায়ী গাজী আনিস তিন কোটি টাকা পেতেন। গতকাল বুধবার দুপুরে কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, মৃত গাজী আনিসের সঙ্গে লেনদেনে টাকার পরিমাণ নিয়ে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের ঝামেলা চলছিল। আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে তারা স্বীকার করেছেন। বিভিন্ন সময়ে চেকে ও নগদে ৭৬ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। তবে গাজী আনিসের লভ্যাংশসহ ন্যায্য পাওনা তিন কোটি টাকা।
এটা নিয়েই মূলত তাদের মধ্যে একাধিকবার বাকবিতণ্ডা হয়েছে। খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৪ঠা জুলাই বিকাল পৌনে ৫টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় গাজী আনিস নিজের গায়ে পেট্রোল জাতীয় দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে ভিকটিমের সখ্য এবং আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। অভিযুক্তরা ২০১৮ সালে চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী একটি দেশে গেলে সেখানে স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থানকালে গাজী আনিসকে হেনোলাক্স কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য প্ররোচিত করেন। প্রথমে অসম্মতি জানালেও পরে রাজি হন এবং প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। এরপর তাদের প্ররোচনায় তিনি আরও ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। অধিকাংশ টাকাই ভিকটিম ঋণ হিসেবে আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন। বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বাসের কারণে তাদের মধ্যে কোনো চুক্তিপত্র করা হয়নি। ভিকটিম তাদেরকে বিনিয়োগ-পরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদনের কথা বললে গড়িমসি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে প্রতি মাসে লভ্যাংশ প্রদানও বন্ধ করে দেন। কয়েকবার আনিসকে হেনস্তা-ভয়ভীতিও প্রদর্শন করা হয়। ওই টাকা উদ্ধারের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার আদালতে দু’টি মামলা করেন গাজী আনিস। এ ছাড়া ওই টাকা ফিরে পাওয়ার জন্য গত ২৯শে মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
গত ৩১শে মে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে পাওনা টাকা আদায় সংক্রান্তে মামলার বিষয়টি পোস্ট করেন। বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে সহায়তা চান। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৪ঠা জুলাই পাওনা টাকা পরিশোধের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু বিকাল গড়ালেও তারা নিহতকে টাকা প্রদান করেননি। এরপর গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। নিহত গাজী আনিস কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঠিকাদারি ব্যবসার পাশাপাশি একটি টেলিকম কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পরে চাকরি ছেড়ে কুষ্টিয়ায় গাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। তিনি সাহিত্যচর্চা করতেন এবং তার বেশ কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। আল মঈন বলেন, আসামি নুরুল আমিন ১৯৮১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত গোপীবাগ এলাকায় কাদের হোমিও হল নামে হোমিও হলে ১৫ বছর চাকরি করেন। ওই সময়ে তার একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার কথা মাথায় এলে ১৯৯১ সালে হেনোল্যাক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন।
পরে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি নামকরণ করেন। ওই কোম্পানির অধীনে হেনোলাক্স কসমেটিকস্ যেমন-হেনোলাক্স কমপ্লেকশান ক্রিম, হেনোলাক্স স্পট ক্রিম, হেনোলাক্স মেছতা আউট ক্রিম ও হেনোলাক্স হেয়ার অয়েল ও পোলট্রি ফার্মের ব্যবসা করেন। পরে বাজারে হেনোলাক্সের চাহিদা কমে গেলে ২০০৯ সালে তিনি আমিন হারবাল নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান করে ব্যবসা শুরু করেন। এবং ২০১৬ সালে হেনোলাক্সের ব্যবসাও বন্ধ করে দেন। তাদের কাকরাইলে একটি ফ্ল্যাট, পুরানা পল্টনে স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টার নামে একটি ১০তলা ভবন, পিংক সিটিতে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি, মেরাজনগর কদমতলীতে হেনোলাক্স নামে চারতলা ভবন, মোহাম্মদবাগ কদমতলী এলাকায় হেনোলাক্স ফ্যাক্টরি রয়েছে। বর্তমানে ওই ফ্যাক্টরিতে খান ফুড প্রোডাক্টস, বন্যা ফুড প্রোডাক্টস ও জে কে অ্যাগ্রো ফুড নামে তিনটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভাড়ায় তাদের উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। নুরুলের স্ত্রী ফাতেমা আমিন একটি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ থেকে ডিএইচএমএস সম্পন্ন করে স্বামীর আমিন হোমিও হলে প্রথমে এক বছর হোমিও চিকিৎসা করেন। তিনি স্বামীর প্রতিষ্ঠিত আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।