ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা কমিটির যুগ পূর্তি কড়া নাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার
৭ জুলাই ২০২২, বৃহস্পতিবার
mzamin

নৌকা বাইচ বাংলার লোকসংস্কৃতির একটি অংশ। বাংলা ও বাঙালির শিরা-উপশিরায় মিশে আছে বাংলার হাজার বছরের নৌকা বাইচের ঐতিহ্য। দীর্ঘদিন ধরে এ ঐতিহ্য এ দেশের মানুষ নিজেদের মধ্যে লালন করে আসছে। এক সময় এ দেশের মানুষের অন্যতম বিনোদনের মাধ্যম ছিল নৌকা বাইচ। কিন্তু পাশ্চাত্যে ও আধুনিকতার প্রভাবে হারাতে বসেছে বাঙালির হাজার বছরের এই সংস্কৃতি।
হিসাব অনুযায়ী, এ দেশে হাজার বছরের ঐতিহ্য নৌকা বাইচের। কিন্তু দেশে এখন আর নৌকা বাইচের আগের সেই জৌলুস নেই। ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জে  প্রায় একশ’ বছর আগে থেকে ইছামতি, কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে মাসব্যাপী নৌকা বাইচ হতো। ৮০ দশকে ঢাকার নবাবগঞ্জে দেওতলার জেরু গমেজ, দরি দেওতলার মাইগ্যার নৌকা, গোল্লা গোবিন্দ পুরের বিমল গমেজের পলাশ শিমুল, পুরাতন বান্দুরার সমিতির কোষা, নতুন বান্দুরার খালেক চোকদারের নৌকা, সুজাপুরের আব্দুল হক তালুকদার, তুইতালের এন্ডু এয়ারমেল, শচীন মিস্তিরির নৌকা, বাংলা বাজারের কংকট, কইলাইল মাইলাল এলাকার জলতরঙ্গ, আগলার সালাম মেম্বার, শেরপুরের রকেট, আলালপুরের মাহমুদের নৌকা, লাল সবুজ, শাহজালাল, রাধাকান্তপুরের শেখ গোপালের নৌকা,  সন্তোষ সরকারের নৌকা, বিনত বায়ানের নৌকা, চক খানেপুরের নিবেশ সরকারের  কালা চান রকেট এবং দোহারের ইমাননগরের প্যালেসের নৌকা বিভিন্ন স্থানে বাইচ করত।কিন্তু ২০০১ এর দিকে পদ্মার ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে কাশিয়াখালী ইছামতী নদীর মুখে বেড়িবাঁধ দেয়া হয়। ফলে বর্ষা মৌসুমেও ইছামতী এখন আর নদীতে পানি থাকে না। নৌ-যান চলাচল বন্ধ।

বিজ্ঞাপন
ভাটা পড়ে নৌকা বাইচের। এ কারণে এলাকার সেরা নৌকা নাজ, দাদা নাতি, সোনার তরী, তুফান মেইল, পানিরাজ, কালা চান রকেট, চার ভাই নৌকার বিলুপ্তি ঘটে।  
নৌকা বাইচ বাঙালি জাতিসত্তার সঙ্গে মিশে আছে ওতপ্রোতভাবে। কয়েক বছর আগেও নৌকাবাইচ ঘিরে গ্রামগঞ্জে উৎসবের আমেজ বিরাজ করতো। ঘরে ঘরে পিঠা-পুলির আয়োজন হতো। দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসতো। এরইমধ্যে চলতো নৌকা বাইচ উৎসব। কিন্তু দেশের বিভিন্ন নদ-নদী দিন দিন ময়লা-আবর্জনার স্তূপে ভরাট হওয়া, নাব্য সংকট এবং নৌপথ ব্যবস্থার অবনতির ফলে প্রাচীন এ ঐতিহ্য বাঙালি সংস্কৃতি থেকে হারাতে বসেছে। এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতেই এবার এগিয়ে এসেছে একদল উদ্যমী নৌকা বাইচপ্রেমী। ২০১০ সালের ২০শে জুলাই গঠন করা হয়েছে ‘নৌকাবাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটি’। চলতি মাসের ২০ তারিখ সংগঠনটি যুগপূর্তি উদ্যাপন করবে। আগামী ভাদ্র মাসে আয়োজন করা হবে যুগপূর্তির নৌকা বাইচ। এ সংগঠনের কর্মকর্তা নিবেশ চকিদার বড় একটি নৌকা বানাচ্ছেন। এবারের বাইচে এলাকাবাসী দেখতে পাবেন তার নতুন এ নৌকা। এছাড়া পুরনো নৌকাগুলোতেও আঁকছেন বিভিন্ন চিত্রকর্ম।
সূত্র জানায়, এই সংগঠনের কার্যক্রম এখন রাজধানী ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলায়। এসব জেলার বিভিন্ন নদীতে অনুষ্ঠিত বাইচে নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দের নৌকা অংশ গ্রহণ করে। ২০১৯ সালে রাজধানী বুড়িগঙ্গার কামরাঙ্গীর চরে নৌকা বাইচ করতে ৫৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইদুল মাদবরের সঙ্গে মিটিং করে সংগঠনের সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও ক্রিড়া সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দ। বুড়িগঙ্গায় হারানো নৌকা বাইচ ঐতিহ্য ফেরাতে নৌকা বাইচ আয়োজন করার আহ্বান জানানো হয় কাউন্সিলরকে। কমিশনার রাজি হন। আয়োজন করেন বিশাল নৌকা বাইচ। বাইচে সংগঠনের ৮/১০টি নৌকা অংশগ্রহন করে। এরপর ২০২১ সালে বিআইডব্লিউটিএ' আয়োজন করে নৌকা বাইচ। এই বাইচ আয়োজনেও সহায়তা করে নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা কমিটি। এতে অংশ নেয় সংগঠনের ৭টি নৌকা। কথা হয় সংগঠনের ক্রিরা সম্পাদক দুলাল দেওয়ানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০১০ সালে নৌকাবাইচ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লার পরামর্শে এ সংগঠন গঠন করা হয়। গত ৩১ মার্চ মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশন হাতিরঝিলে আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক নৌকাবাইচ। বাইচে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় দুটি ইভেন্ট ছিল। জাতীয় ইভেন্টে অংশ নেয় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লার নবাবগঞ্জ রোইং ক্লাব। আন্তর্জাতিক ইভেন্টেও বাংলাদেশ টিমের সাদা দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। দুই ইভেন্টেই জয় লাভ করে। তিনি আরো জানান, সবশেষ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন আয়োজিত নৌকাবাইচে পদ্মা পাড়ি দিয়ে এই সংগঠনের ৬টি নৌকা অংশ গ্রহণ করে। নৌকাগুলো হলো- বলধারার ঐতিহ্য, সোনার তরী, হাতনীর রাজ, মামা ভাগ্নে, সোনার বাংলা ও লিটন এক্সপ্রেস।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status