বাংলারজমিন
প্রতারণা করে ৭ বছরে কোটিপতি নাচোলের বাবু
ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে
৭ জুলাই ২০২২, বৃহস্পতিবাররেজাউল করিম বাবু। নামটা চাঁপাই নবাবগঞ্জের মানুষের কাছে আলোচিত। সাত বছর আগে নাচোলের একটি মোটরসাইকেল শোরুমে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করতেন। এরপর চলে যান ঢাকায়। ঢাকায় গিয়ে চলাফেরায় আসে চাকচিক্য। শুরু হয় বিলাসী জীবন। আর এ সবই প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া টাকায়। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে ‘ভালো যোগাযোগ’-এর ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে শুরু করেন প্রতারণা। শুধু তাই নয়, প্রতারণার কৌশল হিসেবে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেন। সম্প্রতি অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার মামলায় চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি।
প্রতারণার মাধ্যমে ৭ বছরে তিনি প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, রাজশাহীর ছোটবনগ্রামে ৫ কাঠার প্লট, নাচোল হাট ও বাসস্ট্যান্ডে জমি এবং বাড়িও রয়েছে তার। বাসস্ট্যান্ডের জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। চলাফেরা করেন ৩৬ লাখ টাকা দামের গাড়িতে। এর নেপথ্যেই ছিল রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন ও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাদের ব্যবহার করে সচিবালয় ও পুলিশ কর্মকর্তার অফিসে ছিল অবাধ যাতায়াত। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, ব্যবসায়ীসহ সমাজের এলিট শ্রেণির লোকদের মনোরঞ্জনের খোরাক সুন্দরী নারী সরবরাহ করেও হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। অর্থের প্রভাব আর অদৃশ্য ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বাবু। পরে পদত্যাগ তরে মেয়র পদে সতন্ত্র নির্বাচন করেন। তবে পরাজিত হন তিনি। এছাড়াও রেজাউল করিম বাবুর বিরুদ্ধে নাচোল উপজেলার কন্যানগর মৌজা ও নাচোল বাসস্ট্যান্ড এলাকার জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ বলছে, পুলিশে চাকরি ও প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রেজাউল করিম বাবু। তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা, চাঁদাবাজিসহ ৭টি মামলা চলমান। চলতি বছরের মার্চে রাজশাহীর যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত এনআই অ্যাক্টের একটি মামলায় তাকে ৫ মাসের সাজা দিয়েছেন।
টাঙ্গাইল আদালত রেজাউল করিম বাবুর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের একটি মামলা দায়ের করেন মির্জাপুর উপজেলার সেলিম খান নামে এক ব্যক্তি। সেই মামলার ওয়ারেন্টমূলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জানা গেছে, রাজশাহীর নওহাট্টা পৌরসভার সাবেক মেয়র মকবুল হোসেনের কাছে সরকারের উন্নয়ন ও নির্মাণ প্রকল্প পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ৪৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন রেজাউল করিম বাবু। সাবেক মেয়র মববুল হোসেন বলেন, আমি বিএনপি’র মেয়র ছিলাম। এজন্য মন্ত্রণালয় আমাদের যথাযথ মূল্যায়ন করতো না। আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য চেষ্টা করেছি। সে সময় প্রতারক রেজাউল করিম বাবু আমার কাছে আসেন। আমাকে জলবায়ু ও এলজিইডি’র উন্নয়ন প্রকল্প পাইয়ে দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৪৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তবে কাজের কাজ কিছুই করেনি। দীর্ঘদিন থেকে আমাকে টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এছাড়া একই কৌশলে তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমানের কাছ থেকেও ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক বাবু। দুরুল হোদা নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকেও পুলিশের ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন ২৬ লাখ টাকা। দুরুল হোদা বলেন, পুলিশ ওয়্যারলেসের ব্যাটারি সরবরাহের কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ২৬ লাখ টাকা নেন বাবু। পরবর্তীতে জানতে পারি তিনি আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
টাকা চাইতে গেলে আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন। আমার বিরুদ্ধে মামলাও করেন তিনি। এ নিয়ে ঢাকার হাতিরঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার বাসিন্দা ইউপি সদস্য সেলিম খান জানান, আমার ছোট ভাইকে পুলিশে চাকরি দেয়ার কথা বলে এক বছর আগে ১২ লাখ টাকা নেন রেজাউল করিম বাবু। সে সময় তিনি পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম করে এ টাকাগুলো নিয়েছিলেন। তবে টাকা নেয়ার সময় ইসলামী ব্যাংকের একটি চেক দিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ঘুরে টাকা ফেরত না পেয়ে টাঙ্গাইল আদালতে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার মামলা দায়ের করি।