ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট

প্রথম দিনে ৩ ঘণ্টায় টিকিট শেষ রাত জেগে স্টেশনে অপেক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার
২ জুলাই ২০২২, শনিবার

আগামী ১০ই জুলাই সারা দেশে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে ঘিরে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরবে রাজধানীর মানুষ। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫ই জুলাইয়ের টিকিট। ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে সমগ্র উত্তরাঞ্চলগামী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট, কমলাপুর শহরতলী প্ল্যাটফরম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট, ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী গামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট, তেজগাঁও স্টেশনে ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জগামী ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে নেত্রকোনা গামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট, ফুলবাড়িয়া স্টেশনে সিলেট ও কিশোরগঞ্জ গামী ট্রেনের টিকিট ও গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়েছে। কাউন্টারের পাশাপাশি অর্ধেক টিকিট অনলাইন ও অ্যাপসে বিক্রি হচ্ছে। তবে শুক্রবার টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার ৩ ঘণ্টার মধ্যে প্রথম দিনের টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়। যাত্রীদের অভিযোগ, সকাল ৮টা থেকে টিকিটি বিক্রি শুরু হলেও ১১টার পর কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যায়নি। একই অবস্থা অনলাইনে। ওয়েবসাইট এবং অ্যাপসে অর্ধেক টিকিট থাকলেও অনেকে বারবার চেষ্টা করেও টিকিট পাননি।

বিজ্ঞাপন
সকাল ৮টা থেকে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনের ১৬টি কাউন্টারে এক যোগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এর মধ্যে নারী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য রাখা হয় আলাদা দুটি কাউন্টার। টিকিট বিক্রি শুরুর ৩ ঘণ্টার মধ্যেই বেশিরভাগ ট্রেনের টিকিট শেষ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন টিকিট প্রত্যাশীরা। তারা বলেন, টিকিট বিক্রির আগের রাত থেকেই কমলাপুর স্টেশনে জড়ো হয়েছেন তারা। কেউ কেউ ভোররাতে এসে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ভোগান্তির স্বীকার হয়েছেন। তবে বেশিরভাগ মানুষ টিকিট না পেয়ে ফিরে গেছেন। একাধিক টিকিট প্রত্যাশী বলছেন, দীর্ঘ লাইন থাকলেও টিকিট পাননি তারা। প্রতিটি লাইনের প্রথম দিক থেকে ২০ থেকে ২৫ জনের মতো মানুষ কাউন্টার থেকে টিকিট পেয়েছেন। তবে এই সময়ে লাইনে দাঁড়িয়ে অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন তারা। প্রথম দিন টিকিট না পেয়ে কেউ কেউ দ্বিতীয় দিনের টিকিটের জন্য লাইনে অপেক্ষা করছেন। সাভার থেকে আসা টিকিট প্রত্যাশী হাবিবুর রহমান বলেন, গতকাল রাতে স্টেশনে উপস্থিত হয়েছি। সারারাত স্টেশনে ছিলাম। সবার মতো আমিও লাইনে দাঁড়িয়েছি। তবে টিকিট পাইনি। আমার সামনের লোকজনও না পেয়ে হতাশা নিয়ে ফিরে গেছেন। আমার টিকিট লাগবেই। এজন্য আজও স্টেশনে থাকবো। আগামীকালের জন্য আবার সিরিয়াল দিয়েছি। খুব কষ্ট হচ্ছে তবুও অপেক্ষা করছি। রিপন নামের আরেক টিকিট প্রত্যাশী বলেন, পরিবার নিয়ে চেয়েছিলাম ৫ই জুলাই লালমনিরহাটে গ্রামের বাড়ি যাবো। তবে তা আর হলো না। টিকিট কাউন্টারে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকিট নেই বলে জানিয়ে দিলো। পরের দিনের জন্য অপেক্ষা করবো। সিরিয়ালে ১ নম্বরে আছি। আশা করি দ্বিতীয় দিন পাবো। সারারাত স্টেশনেই থাকতে হবে। অন্যথায় সিরিয়াল থাকবে না। নাহিদা আক্তার নামের একজন বলেন, নারীদের জন্য আলাদা লাইন করলেও এখানে বৈষম্য সৃষ্টি করে রেখেছে। একজনকে ৪টি টিকিট দেয়ার কথা থাকলেও একটি কিংবা দু’টি করে টিকিট দিয়েছে। আমি ৩টি টিকিট চেয়েছি। ২টা দিলো। এখন একটা টিকিটের জন্য ঈদের সময়টি আমার ছেলেকে ঢাকায় রেখে যেতে হবে। কাউন্টারের সামনে এ নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে দেখলাম মারামারি হয়েছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেছেন, স্টেশনে একদিন আগে থেকেই টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড় শুরু হয়েছে। টিকিটের তুলনায় টিকিট প্রত্যাশীদের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে ভিড় লেগে থাকছে। তবে কাউন্টারে টিকিট কালোবাজারি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রেলপথ মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য এজেন্সি কাউন্টারের ভেতরে তদারকি করছে। ১০ জন অফিসার রয়েছেন কাউন্টারের ভেতরে সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য। অনলাইনে যাত্রীদের টিকিট না পাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট সবাই পাবে না। কাউন্টারের পাশাপাশি অনলাইনেও টিকিট প্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেশি। অনলাইনে টিকিট আছে ১৩ হাজার। অথচ একসঙ্গে সাড়ে ৪ লাখ মানুষ হিট করছে টিকিটের জন্য। এতে টিকিট কাটতে অনেকের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে টিকিট বিক্রির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি’। তাদের কাছ থেকে আমরা যে ব্যাখ্যা পেয়েছি তা হলোÑ সকালে ১৩ হাজার টিকিটের জন্য সাড়ে চার লাখ টিকিট প্রত্যাশী সার্ভারে প্রবেশ করেছে। ১৩ হাজার মানুষই কিন্তু টিকিট পাবে বাকিরা টিকিট পাবে না। অধিকাংশ লোকই যেহেতু টিকিট পাবে না। তাই তারা অভিযোগ করছেন। এছাড়া কাউন্টারেও টিকিট সংখ্যা যেহেতু নির্দিষ্ট। টিকিট বিক্রি হয়ে গেলে ১০ হাজার লোক লাইনে থাকলেও সেখানে কেউ আর টিকিট পাবে না। স্টেশন ম্যানেজার বলেন, ঈদযাত্রায় ট্রেনের প্রতিদিন ২৬ হাজার ৭২৯টি অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীসহ মোট সাতটি জায়গা থেকে সকাল ৮টায় একযোগে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। জয়দেবপুর, ঢাকা বিমানবন্দর, তেজগাঁও, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ফুলবাড়িয়া, ঢাকা কমলাপুর এবং কমলাপুরের আরেকটি জায়গা নারায়ণগঞ্জ শহরতলী থেকে ৩৭টি আন্তঃনগর ট্রেনের ঈদের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। রেলওয়ে জানায়, ১লা জুলাই দেয়া হয়েছে ৫ই জুলাইয়ের টিকিট। 
৬ই জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে আজ। ৭ই জুলাইয়ের টিকিট ৩রা জুলাই, ৮ই জুলাইয়ের টিকিট ৪ঠা জুলাই এবং ৯ই জুলাইয়ের টিকিট ৫ই জুলাই বিক্রি হবে। এছাড়া ১১ই জুলাইয়ের ট্রেনের ফিরতি টিকিট ৭ই জুলাই, ১২ই জুলাইয়ের টিকিট ৮ই জুলাই, ১৩ই জুলাইয়ের টিকিট ৯ই জুলাই এবং ১৪ ও ১৫ই জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি করা হবে ১১ই জুলাই। ট্রেনের অগ্রিম টিকিট একজনকে সর্বোচ্চ চারটি দেয়া হচ্ছে। অনলাইন টিকিটের অর্ধেক ওয়েবসাইটে এবং অর্ধেক অ্যাপে বিক্রি করা হবে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে যাত্রীদের সুবিধার্থে ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। সেগুলো হলোÑ দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল, চাঁদপুর স্পেশাল-১, ২, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম (পঞ্চগড়) ঈদ স্পেশাল, শোলাকিয়া স্পেশাল-১, ২। এছাড়া, আগামী ৬ই জুলাই থেকে ৯ই জুলাই পর্যন্ত ঢাকামুখী একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনি ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোর বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি থাকবে না। আগামী ৬ থেকে ১৪ই জুলাই পর্যন্ত মিতালি এক্সপ্রেস এবং ৭ থেকে ১৪ই জুলাই পর্যন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেস ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করবে না।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status