ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

রাজধানীতে বেপরোয়া মোটরসাইকেল, বাড়ছে দুর্ঘটনা

মরিয়ম চম্পা
২ জুলাই ২০২২, শনিবার
mzamin

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ঘুরতে গিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আলমগীর হোসেন ও মো. ফজল নামে দুই তরুণের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আলমগীর মোটরসাইকেল মেরামতের কাজ করতেন। আর ফজলু বিদেশে থাকেন। এক মাস আগে দেশে আসেন তিনি। পরিবারের সদস্যরা জানায়, তারা ছয় বন্ধু মিলে তিনটি মোটরসাইকেলে পদ্মা সেতু দেখতে গিয়েছিলো। সেতুর জাজিরা প্রান্ত ঘুরে ফেরার সময় মাওয়া প্রান্তে এসে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনার পরপরই সরকার এক তথ্য বিবরণীতে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করার কথা জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীতে দ্রুতগামী ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত নামে বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। ওইদিন রাত সোয়া ১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞাপন
নিহত সিফাতের বন্ধু ফুয়াদ বলেন, তারা রাতে ৮ বন্ধু মিলে পুরান ঢাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে খাওয়া- দাওয়া করতে যান। ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সিফাত বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কোচিং করছিল। এর আগে মোটরসাইকেল চালিয়ে শেরপুর জেলা শহর থেকে সদর উপজেলার হালগড়া চকবড়ইগাছিতে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন বিজিবি সদস্য মো. ইউসুফ জামিল। 

আমতলী সেতুর উপর পৌঁছালে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণা বলছে, প্রতিবছর দেশে প্রতি ১০ হাজার মোটরসাইকেলের বিপরীতে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন ২৮ দশমিক ৪ জন। যাদের প্রায় ৪০ শতাংশেরই বয়স ২৪ থেকে ৩০ বছর। ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গত ২৬শে এপ্রিল থেকে শুরু করে ১০ই মে পর্যন্ত হওয়া প্রায় অর্ধেকই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। এতে নিহত হয়েছে ১৪৫ জন।

বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) বলছে, ২০২১ সালে শেষ হওয়া এই গবেষণায় মোটরসাইকেলের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি ছিল এমন ১৬টি দেশের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য মোটরসাইকেল আছে মাত্র ৭টি। মৃত্যুহারে বাংলাদেশের পরেই রয়েছে কম্বোডিয়া। বুয়েটের গবেষণা বলছে, দেশ স্বাধীনের পর ৪৯ বছরে দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে ৪৮ গুণ।

রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ বলেন, শুরুর দিকে বাড্ডা থেকে ধানমণ্ডিতে বাসে যাতায়াত করে ক্লাস করতেন। অসহনীয় যানজটের কারণে প্রায়ই ক্লাস মিস হতো। তাই বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে এবং নিজের কিছু জমানো টাকা দিয়ে একটি মোটরসাইকেল ক্রয় করি। আগে বাসে বাড্ডা থেকে ধানমণ্ডিতে যেতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগতো। এক সময় পাঠাও রাইডে ক্যাম্পাসে যেতেন। যানজটের অসহনীয় দুর্ভোগ এড়াতে মোটরসাইকেল কিনেছেন। ইতিমধ্যে একাধিকবার দুর্ঘটনা ঘটেছে। বেশ কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছে তাকে।
আরেক শিক্ষার্থী সোহেল বলেন, মোটরসাইকেল প্রথমে সখের বসে কিনলেও এখন এটা দিয়ে মাসে বেশ ভালো টাকা আয় করছেন তিনি। নিজের সখ মেটাতে এবং যাত্রী পরিবহনে যুক্ত হওয়ায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ৩৭ লাখ ১ হাজার ৭৮৬টি মোটরসাইকেলের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। 

বেসরকারি সংস্থা রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ২০২১ সালে মোট ২ হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মারা যান ২ হাজার ২১৪ জন, যা সড়ক দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৩৫ শতাংশ। আর ২০২১ সালে যত দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার প্রায় ৩৯ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এর আগের বছরের চেয়ে ২০২১ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ৫০ শতাংশ ও মৃত্যু ৫১ শতাংশ বেড়েছে। বুয়েটের গবেষণা বলছে, মোটরসাইকেলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (৩০ শতাংশ) দুর্ঘটনা ঘটে মুখোমুখি সংঘর্ষের কারণে। এই বাহনের দুর্ঘটনায় যতজন মারা যান, তাদের অর্ধেকই মারা যান মুখোমুখি সংঘর্ষের কারণে। 

এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে এগিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৩০ লাখেরও বেশি। নতুন করে প্রতিবছর লাখ লাখ মোটরসাইকেল রাস্তায় নামছে। যাদের ৯০ শতাংশ মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার করছেন। এসব কারণে দুর্ঘটনা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বুয়েটের এআরআই’র সহযোগী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ মানবজমিনকে বলেন, ২০১০-২০১৭ সালে করা এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৮৮ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে হেলমেট না পরার কারণে। কিন্তু এখন হেলমেট থাকা সত্ত্বেও দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

 

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status