শরীর ও মন
এই সময়ে ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়
ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
২৯ এপ্রিল ২০২২, শুক্রবারচলছে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরা এবং খরার সঙ্গে চলমান তাপপ্রবাহ আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। গত ২৫.০৪.২০২২ ইং সোমবার কয়েকটি নামকরা সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে জানা যায়, এদিন দেশে একসঙ্গে তিন জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর ছুঁয়েছে। আর বর্ধিত এই তাপদাহের কারণেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে চলেছে বলে মনে করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল মুখপাত্রের কথা অনুযায়ী ডায়রিয়ার প্রকোপ তেমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তাই সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী দেশে ডায়রিয়া নিয়ে যে উদ্বেগ বিরাজ করছে, তা সহসাই কাটছে না। তাই চলমান ডায়রিয়ার প্রকোপ নিয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে, অন্যকেও সচেতন করতে হবে। দেখা যাচ্ছে বর্তমানে বড়দের সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শিশু ও নারীরাও। শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধে পিতামাতার যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা বড়দের চেয়ে শিশুদের শরীরের কোষের বাইরের পানি বা এক্সট্রা সেলুলার ফ্লুইড বেশি থাকে। ফলে ডায়রিয়া হলে সহজেই তাদের শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে।
আইসিডিডিআর.বি’র সূত্রমতে, সমপ্রতি যে সংখ্যক ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যাই বেশি। গরমকালে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। সঠিকভাবে পানি ও লবণ পূরণ করা হলে ডায়রিয়া কখনো গুরুতর আকার ধারণ করে না। বেশির ভাগ ডায়রিয়া এমনিতেই সেরে যায়। কিন্তু ডায়রিয়া হলে ওরস্যালাইন খাওয়া এমনকি এর চিকিৎসা নিয়েও কিছু ভুল ধারণা অছে।
যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, এমন রোগীরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে ওরস্যালাইন খেতে তারা দ্বিধায় ভোগেন। কেননা, স্যালাইনে লবণ আছে, তাদের আশঙ্কা ওরস্যালাইন খেলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। এটি ভুল ধরাণা। প্রতিবার পাতলা পায়খানার সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। তা যথাযথভাবে পূরণ করা না হলে, রোগীর পানিশূন্যতা, লবণশূন্যতা এমনকি রক্তচাপ কমে গিয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে, এমনকি রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। ওরস্যালাইনে চিনি বা গ্লুকোজ থাকে, তাই ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে ভয় পান। অনেকে মনে করেন,ওরস্যালাইন খাওয়ার পরে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ওরস্যালাইনে যে সামান্য চিনি বা গ্লুকোজ আছে, তা অন্ত্রে লবণ শোষণের কাজে ব্যয় হয়। সুতরাং ডায়রিয়ার সময় ডায়াবেটিস রোগীরা নিশ্চিন্তে ওরস্যালাইন খেতে পারবেন।
স্যালাইন কতটুকু খেতে হবে তা নির্ভর করবে কতবার পাতলা পায়খানা হচ্ছে বা কতটুকু পানি হারাচ্ছেন তার ওপর। ডায়রিয়ার কারণে একজন মানুষ মাত্র কয়েক ঘণ্টায় এক থেকে দেড় লিটারের বেশি পানি হারাতে পারেন। প্রতিবার পায়খানা হওয়ার পর স্যালাইন খাওয়া এবং অল্প করে সারা দিন বারবার খাওয়া। বানানো খাবার স্যালাইন ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যায়। এরপর প্রয়োজন হলে আবার নতুন করে খাবার স্যালাইন বানাতে হবে। শিশুর ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ বেশি করে খাওয়াতে হবে। এছাড়া বড়দের স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে। তরল জাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ভাতের মাড়, ডাবের পানি, চিঁড়ার পানি, লবণ-গুড়ের শরবত, খাবার স্যালাইন, বিশুদ্ধ খাবার পানি খাওয়াতে হবে। এর বাইরে সারা দিন পানি ও তরল খাবার যেমন-স্যুপ, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে হবে। অনেকে নিজে থেকে ওষুধ সেবন করে থাকেন, যা উচিত না। সব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া জরুরি নয়। ডায়রিয়া হলে সবার আগে প্রয়োজন দেহের লবণ ও পানিশূন্যতা পূরণ করা। দরকার হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য পৃথক ইউনিট খোলা হয়েছে। সেখানে রোগীদের বিশেষভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অবস্থা খারাপ হলে জরুরি হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
প্রকৃত কথা, ডায়রিয়া প্রতিরোধে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা থাকতে হবে। টয়লেট করার পর হাত সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে। খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। যে পানি পান করবেন তা যেন বিশুদ্ধ হয়। বাসি, পচা খাবার খাওয়া যাবে না। ফলমুল খেলে তা ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে। সর্বোপরি ডায়রিয়া হলে ডায়রিয়া প্রতিরোধে যে গাইড লাইন আছে তা অনুসরণ করতে হবে। ভালো থাকুন।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ) কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন বঙ্গবন্ধুৃ শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বার: ১৯ গ্রীন রোড, একে কমপ্লেক্স, লিফ্ট-৪, ঢাকা।
ফোন-০১৭১২-৯৬৫০০৯