দেশ বিদেশ
বিদ্যুতের দাম বাড়ায় বিজিএমইএ’র উদ্বেগ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৪ মার্চ ২০২৪, সোমবারনতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের মতো যেকোনো পরিষেবার মূল্য বাড়লে শিল্পের ওপর চাপ বাড়ে। দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি পোশাক উৎপাদনের খরচ বাড়িয়ে দেবে।
রোববার রাজধানীর বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে ‘লঞ্চিং রিপোর্ট অন বেইওন্ড কটন: এ স্ট্রাটেজিক ব্লু প্রিন্ট ফর ফাইবার ডাইভারসিফিকেশন ইন বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
তুলাবিহীন বা নন-কটন পোশাক রপ্তানি-সংক্রান্ত এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফারুক হাসান বলেন, দেশে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সেই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হবে। এ পরিস্থিতিতে দেশের সার্বিক পোশাক রপ্তানি খাতের কথা চিন্তা করে সরকারের প্রতি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে বিদ্যুতের দাম কমানো উচিত বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি।
তিনি বলেন, বিশ্বের ফ্যাশন বাজার এখন নন-কটন পোশাকের দিকে সরে যাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে ভোক্তাদের ক্রমাগত জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কারণে টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য ও পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈশ্বিক পোশাক ব্যবহারের মধ্যে ৭৫ শতাংশ নন-কটন। আর বৈশ্বিক বস্ত্র খাতের বাণিজ্যের মধ্যে ৫৭.৫০ শতাংশ নন-কটন। যদিও আমাদের রপ্তানির মাত্র ২৯ শতাংশ নন-কটন পোশাক।
নন-কটন পোশাক রপ্তানিতে বিনিয়োগ ও বাজার সমপ্রসারণের সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে বিজিএমইএ’র সভাপতি বলেন, গত ৩ বছরে আমাদের রপ্তানিতে নন-কটন পোশাকের হিস্যা ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৯ শতাংশ হয়েছে। সামপ্রতিক বছরগুলোতে আমাদের পোশাকশিল্পে নন-কটন পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ এসেছে। নন-কটন পোশাকে জোর দিলেও তুলার পোশাক থেকে আমরা মোটেও দৃষ্টি সরাচ্ছি না; বরং তুলার পোশাকের ক্ষেত্রে আমরা নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছি।
মূলত কোরিয়া, চীন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও ভারতে এসব ফাইবারের যে সক্ষমতা আছে, তাতে করে তারা অনেক কম মার্জিনাল খরচে পণ্য তৈরি করতে পারে ও কম্পিটিটিভ থাকতে পারে। আমাদের এখানে শিল্পটি এখনো উদীয়মান। তাই স্কেল ইকোনমির অ্যাডভান্টেজ না থাকায় আমাদের ইউনিট কস্ট কিছুটা বেশি। এ ছাড়া প্রচুর মূলধন ও টেকনোলজি নির্ভর হওয়ায় মূলধনী বিনিয়োগের চাহিদাও অনেক বেশি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গবেষণাপত্র অনুযায়ী, বর্তমানে নন-কটন পোশাকের বাজার পৃথিবীতে ৩ লাখ ৭ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের। বিজিএমইএ ২০৩২ সালে নন-কটন পোশাক রপ্তানি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের। বর্তমানে বাংলাদেশ মাত্র ১ হাজার ১৫০ ডলার রপ্তানি করে। কিন্তু এ জায়গায় পৌঁছানোর জন্য প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন। এই বিনিয়োগের ফলে নতুন করে ১ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করার জন্য নন-কটন খাতের জন্য আলাদা নীতিমালার দাবি জানায় বিজিএমইএ।
গবেষণার কাজটি করেছে ভারতীয় গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ওয়াজির অ্যাডভাইজর লিমিটেড। গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন এই প্রতিষ্ঠানের বিজনেস ডিরেক্টর বরুন বৈদ্য। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ’র পরিচালক আসিফ আশরাফ, স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম প্রমুখ।