এক্সক্লুসিভ

সময় এখন আম-কাঁঠালের

বিয়ানীবাজার (সিলেট) প্রতিনিধি

১৪ জুন ২০১৬, মঙ্গলবার, ৯:০০ পূর্বাহ্ন

আম-কাঁঠালী। সিলেট অঞ্চলের একটি পরিচিত শব্দ। আম-কাঁঠালী নিয়ে সর্বত্র তোড়জোড় শুরু হয় প্রতিবছর মধুমাসে। বর্তমানে আম-কাঁঠালের মৌসুম চলছে। তাই মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে আম-কাঁঠাল পৌঁছানোর ব্যস্ততা শুরু হয়েছে অভিভাবকদের মাঝে। মূলত সিলেট অঞ্চলকে ঘিরেই আম-কাঁঠালীর রেওয়াজ দেখা যায়। মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে আম-কাঁঠাল না পৌঁছালে যেন জাত-মান দুটোই যায়। প্রাচীন এই রেওয়াজটি এখনও আছে। বর্তমানে আম-কাঁঠালীর মৌসুম চললেও রমজান মাস চলছে। রমজানে আবার সিলেটজুড়ে মেয়ের বাড়িতে ইফতারি পাঠানো হয়। তাই একই সময়ে আম-কাঁঠালী ও ইফতারির মৌসুম চলমান থাকায় বিয়ে হওয়া মেয়েদের বাবার বাড়ির পরিবারের সদস্যদের ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। প্রতিদিন গাড়ি বোঝাই করে মেয়ের বাড়ি পাঠাতে হচ্ছে ইফতারি-আম, কাঁঠাল। সিলেট অঞ্চলে কবে থেকে এ রেওয়াজ চালু হয়েছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য কারো কাছে নেই। বয়োবৃদ্ধ অনেক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে আম-কাঁঠাল দেয়ার প্রবণতা জানার চেষ্টা করা হলেও কেউই নির্দিষ্ট কিছু বলতে পারেন নি। কথিত আছে, বহু বছর আগে এক সৌখিন পিতা তার মেয়ের বাড়িতে বেশ ঘটা করে আম-কাঁঠাল নিয়ে যান। সেই থেকে এ প্রবণতা শুরু হয়। বর্তমানে এটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। সচ্ছল পরিবারের জন্য এটি সৌখিন রেওয়াজ হলেও নিম্নবিত্ত কিংবা দরিদ্র পরিবারের জন্য আম-কাঁঠাল গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে আম-কাঁঠালের এ বিষয়টিকে কুসংস্কার হিসেবে আখ্যায়িত করলেও মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে এটি না পৌঁছালে নিজেকে ছোট মনে করেন অনেক অভিভাবক। তাই তারা বাধ্য হয়েই মেয়ের বাড়িতে পৌঁছে দেন মৌসুমী রসালো ফল। অন্যদিকে আম-কাঁঠাল পৌঁছানোর আগে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে তারিখ জানানো হয়। সেখানে চলে প্রীতিভোজের মহা আয়োজন। সব ধরনের ফলমূল গাড়িতে বোঝাই করে পরিবারের সদস্যদের জন্য কাপড় চোপড় নিয়ে বেশ ঘটা করেই যাওয়া হয় মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে। সেখানে আম-কাঁঠাল নিয়ে আসা অতিথিদের ফিরতি কাপড় দেয়া হয় অনেক উচ্চবিত্ত ধনাঢ্য পরিবারে। মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত পরিবারে এতসব ধূমধাম না থাকলেও আয়োজন থাকে চোখে পড়ার মতো। গাড়িতে বোঝাই করা হয় আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, কমলা, আপেল, মুড়ি, চিড়া, মাল্টাসহ সবরকমের রসালো ফল, সঙ্গে মিষ্টি, জিলাপি।  মেয়ের বাড়িতে আম-কাঁঠাল দেয়ার জন্য পৌর শহরের আজিজ মার্কেটে কাঁঠাল ক্রয় করতে আসা এবাদুর রহমান (৫২) জানান, মাত্র ৩ মাস আগে তার মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ে বাড়িতে আম-কাঁঠাল দেয়ার জন্য সব মিলিয়ে তার বাজেট ২৫ হাজার টাকা। এ টাকাও তিনি সংগ্রহ করেছেন হালের বলদ বিক্রি করে। তিনি নিজেও জানাতে পারেননি কবে থেকে আম-কাঁঠাল দেয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শুধু জানিয়েছেন, মেয়ের বাড়িতে যেমন করেই হোক এটি পৌঁছে দিতে হবে। তবে তিনি জানালেন, ২ বছর আগে তার বড় ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। সেই ছেলের সম্মানে তার পরিবারেও পুত্রবধূর অভিভাবকরা আম-কাঁঠাল দেয়ার তারিখ জানিয়েছেন। আম-কাঁঠালীর এসব রেওয়াজ সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট আমান উদ্দিন জানান, সচেতন মহলের অনেকেই একে কুসংস্কার বলেন। কিন্তু আম-কাঁঠালী দেয়া নেয়ার ক্ষেত্রে এসব নীতিবাক্য হারিয়ে যায়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status