ঢাকা, ২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

প্রার্থী হলেই বহিষ্কার করবে বিএনপি

কিরণ শেখ
১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেউ ভোটে অংশ নিলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করবে বিএনপি। যেসব জেলায় নেতারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের সঙ্গে কেন্দ্র থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং জেলার শীর্ষ নেতাদের মাধ্যমেও তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা অমান্য করে যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি যারা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন, সেসব নেতার নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠাতে তৃণমূলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে বিএনপি এখনই বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্তে যেতে চাচ্ছে না। আগামী ২২শে এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এসময় পর্যন্ত দলটি দেখতে চায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নেতারা কী করেন। 

উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি’র নেতাদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়া প্রসঙ্গে বিএনপি’র চারজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে মানবজমিন। তারা জানান, বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত যারা অমান্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে  

বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, এই নির্বাচনে বিএনপি’র যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা কেউ গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই। নাম ও পদবির জন্য তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন তাদের বিরুদ্ধেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, যারা সরকারের ফাঁদে পা দিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন তারা তো দলের প্রতি অনুগত নয়।

সূত্রমতে, তৃণমূলের কর্মী ও জেলায় শীর্ষ নেতাসহ দলীয় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গত সোমবার সকালে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেন। বৈঠকে নেতারা উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মতামত দেন। এদিন রাতেই বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়ালি সভা হয়। ওই সভায় উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, এই সরকার (আওয়ামী লীগ) ভোট, সংবিধান, ভিন্নমত প্রকাশ, বহুদলের অংশগ্রহণে নির্বাচনসহ মানুষের সহজাত অধিকারগুলোকে নির্দয় দমনের কষাঘাতে বিপর্যস্ত করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির একমাত্র ভিত্তি হচ্ছে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা। তাই সহিংস সন্ত্রাসের ব্যাপক বিস্তারের ফলে এই অবৈধ সরকারের অপরাজনীতি ও নির্বাচনী প্রহসনের অংশীদার না হওয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিএনপি আগামী ৮ই মে থেকে শুরু হওয়া সকল ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত জানানোর আগেই প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলা নির্বাচনের বেশ কয়েকটিতে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন দলটির নেতারা। তারা অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তবে কতোজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তার প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এই সংখ্যা ৫০ জনের কম হবে না। 

যেসব উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি নেতারা: নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান মুকুল চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নাটোরের ধামইরহাট উপজেলায় বিএনপি নেতা মো. আয়েন উদ্দিন ডালিম, মহাদেবপুরে উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরুজ্জামান লস্কর তপু, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা বিএনপি সভাপতি মো. রমিজ উদ্দিন, একই জেলার নাঙ্গলকোটে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. মাজহারুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় বিএনপি নেতা মো. আশরাফ হোসেন আলিম ও তার ছেলে আব্দুল্লাহ আল রাইহান, ভোলাহাট উপজেলার বিএনপি’র মোহাম্মদ বাবর আলী, মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও ইয়াজদানী আলীম আল রাজী, ময়মনসিংহের ফুলপুরে পৌর বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমরান হাসান পল্লব চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। 

নাটোর সদর উপজেলায় বিএনপি নেতা গোলাম সরোয়ার ও বিএনপিকর্মী সাবেক ভিপি মো. ইসতেয়াক আহম্মেদ (হিরা), একই জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার বিএনপি’র উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি সরদার আফজাল হোসেন, পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান ফায়জুল কবির তালুকদার, বান্দরবান সদর উপজেলার জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কুদ্দুছ, নওগাঁর মহাদেবপুরে থানা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. সাজ্জাদ হোসেন, সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলা বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গৌছ খান, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেবুল মিয়া ও যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা সফিক উদ্দিন চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। আরও অনেক উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলটির অনেক নেতা প্রার্থী হয়েছেন।

নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান মানবজমিনকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে সে বিষয়ে দল সিদ্ধান্ত নিবে। আর এখনো মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার সময় আছে।

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য বলা হচ্ছে। এরপরও যদি কেউ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়, তখন দল সিদ্ধান্ত নিবে।

উল্লেখ্য যে, নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটে তিনটি পদে এক হাজার ৮৯১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এতে চেয়ারম্যান পদে ৬৯৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৪ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৭১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2022
All rights reserved www.mzamin.com