ঢাকা, ২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

বিশ্বনাথের মেয়র মুহিব কী পারবেন চাপ সামাল দিতে

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথের আলোচিত চরিত্র মেয়র মুহিবুর রহমান। এরশাদ জমানায় উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। এরপর আরেকবারও উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন। শেষ দফা এসে পৌর মেয়র। এর মধ্যে কয়েকবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন। প্রতিবারই তাকে ঘিরে ছিল ব্যাপক সমালোচনা-আলোচনা। গত সংসদ নির্বাচনেও হঠাৎ করে তিনি প্রার্থী হন। ছাড়তে হয়নি মেয়র পদ। নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিনি প্রার্থিতা ফিরিয়ে এনে ভোটের মাঠে নামেন। পৌর মেয়রের পদে থেকেই তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন ভোটের দিন নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে যান। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কিছুটা ব্যাকফুটে মেয়র মুহিবুর রহমান। এক বছর হতে চললো মেয়র হয়েছেন। এই সময়ে তিনিই বিশ্বনাথে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি। এখন তার প্রধান অস্ত্র ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া। যাই করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করেন। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তিনি সেটিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখিয়ে দেন সবাইকে। নিজেও নামেন দুর্নীতির অনুসন্ধানে। প্রচার করেন লাইভে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে অনেকেই ক্ষুব্ধ। কারও কারও বাহবাও কুড়ান। খোদ তার পরিষদের কাউন্সিলরদের কাবু করেন লাইভের মাধ্যমে। সামাজিক বিচারও করেন লাইভে। এ নিয়ে তার নিজের একটি টিমও কাজ করে। নির্বাচনের আগে সিলেট-২ আসনের তখনকার এমপি ও গণফোরাম নেতা  মোকাব্বির খানকে একই কায়দায় কাবু করেছিলেন। তখন এমপি মোকাব্বিরকে নিয়ে তুমুল বিতর্ক চারদিকে। বিশ্বনাথে তৈরি করা প্রবাসী স্মারক নিয়ে এই লাইভ ছিল। নির্বাচনেও এমপি মোকাব্বির খানের প্রতিপক্ষ হয়ে লড়াইয়ে নেমেছিলেন। ভোটের দিন অবশ্য মোকাব্বির খানকে সঙ্গে নিয়েই ভোট বর্জন করেন। বিশ্বনাথ বিএনপি’র সঙ্গে বনিবনা নেই মেয়র মুহিবুরের। সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে  ফেরারি হয়েছিলেন। একসময় ছিলেন জাতীয় পার্টি নেতা। এক যুগ আগে ফিরেছেন আওয়ামী লীগে। তবে; পদপদবিতে নেই। এ কারনে বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের বড় অংশ তার বিরোধী। সাবেক কয়েকজন নেতা আড়ালে থেকে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন। বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়ার সঙ্গে দ্বন্ধ জড়িয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে। ডজনখানেক মামলা হয়েছে পাল্টাপাল্টি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে নীরব উপজেলা চেয়ারম্যান। আসনের এমপি, প্রবাসী কল্যাণ ও  বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তার সঙ্গে বিরোধ কিংবা সখ্যতা কোনোটিই নেই। তবে; তার কার্যকলাপ নিয়ে আছে আওয়ামী লীগের নেতাদের আপত্তি। ভার্চ্যুয়ালি চরিত্র হনন করে চলেছেন- এমন অভিযোগ নেতাদের। যারাই বিরোধী হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের নিয়ে আলোচনা করেন। ধুয়ে দেন সবাইকে। এ নিয়ে দিনে দিনে তার বিরোধী সংখ্যা বেড়েছে। এবার মেয়র মুহিবুর রহমানের বিরোধী হয়েছেন তার পরিষদেরই বেশির ভাগ সদস্য। এতদিন ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব ছিল। সেটি বাষ্পীয় হয়ে বড় হয়েছে। একজোট হয়েছেন বেশির ভাগ কাউন্সিলর। তারা ইতিমধ্যে মেয়র মুহিবুর রহমানের নানা অনিয়ম তুলে ধরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনাস্থা জানিয়েছেন। তাদের এই অনাস্থা প্রস্তাবকে নিয়ে বিশ্বনাথসহ সিলেটে আলোচনা তুঙ্গে। চাপের মুখে পড়েছেন মুহিবুর রহমানও। কাউন্সিলররা এক জোট হওয়ার কারণে পরিষদের ভবিষ্যতও পড়েছে অনিশ্চিয়তায়। ক্ষুব্ধ কাউন্সিলররা বয়কট করবেন মেয়র মুহিবকে। পরিষদ অচল হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমনিতেই দ্বন্দ্বের কারণে থমকে গেছে বিশ্বনাথ পৌরশহরের উন্নয়ন। সরকার থেকে এখনো তেমন বরাদ্দও আসেনি। আর প্রতিমন্ত্রীর তরফ থেকে বরাদ্দ মেয়র মুহিবুর রহমানের কাছে আসবে কিনা- সেটিও বড় প্রশ্ন। কারণ; যারা মেয়রবিরোধী হয়েছেন তারা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ দলীয় কাউন্সিলর। প্যানেল মেয়র-১ রফিক হাসান। তিনি আওয়ামী লীগেরই নেতা। মঙ্গলবার বিরোধী কাউন্সিলররা সংবাদ সম্মেলন করে মেয়রের বিরুদ্ধে কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। এদিকে, গতকাল থেকে ফের সরব হয়েছেন মুহিবুর রহমান। এবার তিনি প্যানেল মেয়র-১ রফিক হাসানের দুর্নীতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করেছেন লাইভ। পরপর দুটি দুর্নীতির ঘটনা তিনি তুলে ধরেছেন। তবে; আগে মতো আর সাপোর্ট পাচ্ছেন না তিনি। এতোদিন তার সঙ্গে ছিলেন বিশ্বনাথের অনেক বিতর্কিত ব্যক্তিরা। এখন তারাও দিয়েছেন পিছুটান। মেয়রের কাছাকাছি না গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এই অবস্থায় চাপ সামাল দিতে একাই মাঠে মেয়র মুহিব। পারবেন কি তিনি সেই চাপ সামাল দিতে- এখন সেটিই দেখার অপেক্ষায় বিশ্বনাথের মানুষ। 
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2022
All rights reserved www.mzamin.com