ঢাকা, ১ মে ২০২৪, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিনোদন

আনন্দ-বিনোদনে দুর্দান্ত ঈদ ইত্যাদি

স্টাফ রিপোর্টার
১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

বিগত চার দশক ধরেই দর্শকপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেত নির্মাণ করছেন ইত্যাদি। ধীরে ধীরে এই কয়েক দশকে অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠেছে গণমানুষের তুমুল প্রিয় অনুষ্ঠান। ইত্যাদিতে যেভাবে শিক্ষা-বিনোদন আর দেশীয় সংস্কৃতিকে সুনিপুণভাবে তুলে ধরা হয় তা আর কোথাও দেখা যায় না। প্রতি ঈদেই দর্শকরা অপেক্ষায় থাকেন ইত্যাদির জন্য। হানিফ সংকেত আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন সমাজের ক্ষতগুলোকে। ঈদ ছাড়াও প্রতি অনুষ্ঠানেই থাকে বিভিন্ন অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তার তীব্র কটাক্ষ ও জোরালো বক্তব্য। এবারের ঈদুল ফিতরেও তিনি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটি। দেশের প্রখ্যাত নজরুল সংগীত শিল্পীদের দিয়ে গানটি পরিবেশনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় ইত্যাদি। 
এরপর একে একে তুলে ধরা হয় ঈদে যাকাতের কাপড়ের নিম্নমানের কারণে দান গ্রহীতাদের অসন্তোষের বিষয়, তখনকার গান আর এখনকার গানের পার্থক্য, বিয়ের মতো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সোশাল মিডিয়ার লাইভে যাওয়ার বিষয়টি ছিল কারণে-অকারণে লাইভে যাওয়ার প্রতি চপেটাঘাতের মতো। স্বল্প আয়ের চাকরিজীবী আর পরিবারে উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্ত্রীদের মানসিকতার সময়োপযোগী দুটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। স্বামীর আয় বুঝে ব্যয়ের নীতি প্রতিটি স্ত্রীর জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা তিনি দেখিয়ে দিলেন সুরে সুরে, আর একটি নাট্যাংশে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে জুতা প্রদান ছিল ঘুষখোরদের জুতা মারার শিক্ষা অসাধারণ লেগেছে শিবলী ও নিপা জুটির পরিবেশিত একাল আর সেকালের বিয়ে নিয়ে নৃত্যটি। বর্ণাঢ্য আয়োজনের এই নাচটির মাধ্যমে আমরা ফিরে গেলাম আমাদের বিয়ের ঐতিহ্যে। যেখানে ছিল না কোনো উদ্দাম নৃত্য-গীত, ছিল আবেগ, অশ্রু আর ভালোবাসা। কিন্তু কোথায় যাচ্ছি আমরা? এ যেন মাইকেল মধুসূদন দত্তের কপোতাক্ষ নদের সেই কবিতার পঙ্‌ক্তির মতো- ‘তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি, পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ। ঈদ আয়োজনে স্কুলের ঘণ্টা যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে তা অনেকেই হয়তো কল্পনা করেননি। হারিয়ে যাওয়া এই ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে দর্শকপর্বের অংশটি ছিল উপভোগ্য। আর বর্তমান সামাজিক অবক্ষয়, শিক্ষা ব্যবস্থা, কিছু কিছু ব্যক্তির অনলাইনে শিক্ষা নামের ব্যবসা- কিছু রুচিবিকৃত ইউটিউবারের দৌরাত্ম্য-এসব বিষয়ের উপর বর্ষীয়ান অভিনেতা আবুল হায়াতের মাধ্যমে দর্শক পর্বে তুলে ধরা হয় বাস্তব সামাজিক চিত্র। ক’জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মাধ্যমে বিভিন্ন রুচিহীন বিষয়ের কনটেন্ট দিয়ে ভাইরাল নামক ভাইরাস তুলে ধরার বিষয়টি ছিল প্রশংসনীয়। একসঙ্গে দুইভাই প্রতীক হাসান আর প্রীতম হাসানের গান, জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী তাহসান আর অভিনেত্রী ফারিণের সংগীত পরিবেশনা ছিল মুগ্ধকর। অসাধারণ লেগেছে সোশ্যাল মিডিয়ার লাইক, কমেন্ট, শেয়ার, ফলোর উপর ইত্যাদির দলগত শিল্পীদের সঙ্গে সিয়াম আর মেহজাবীনের চমৎকার নৃত্য পরিবেশনা। বাড়িওয়ালা আর ভাড়াটিয়ার চরিত্রে নাসির উদ্দিন খানের উপস্থিতি আর মীর সাব্বিরের অভিনয় ছিল উপভোগ্য এবং হালের সোশ্যাল মিডিয়ায় বিচরণকারী কিছু বয়স্ক ব্যক্তির মেয়েদের বিয়ে করার প্রসঙ্গটি ছিল সময়োপযোগী। আল মামুন, আজিজুল হাকিম, শহীদুজ্জামান সেলিম আর সাবেরী আলমের সাঙ্গিতিক পরিবেশনা দুটোই ছিল উপভোগ্য এবং হৃদয়ছোঁয়া। সন্তানদের অনেক কষ্টে লালন-পালন করে যদি তাদের পরিণতি দুর্নীতি, মাদকাসক্তি আর বেপরোয়া চালচলনের হয়, তবে কষ্ট পাওয়ারই কথা। বিষয়টি অনেককেই অশ্রুসিক্ত করেছে। নানি-নাতির খুনসুটিও দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। সবশেষে বিদেশিদের পর্বের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতেই হয়। বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের এত বৃহদাকার পরিবেশনা একমাত্র ইত্যাদির পক্ষেই সম্ভব। বিদেশিরা নিভৃত পল্লীতে গিয়ে, সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের উপহার দেন বছরে একটিবার এই পর্বটি। এবারের পর্বে বিদেশিরা ভাঙা ভাঙা উচ্চারণে মধ্যস্বত্বভোগীদের আসল চেহারা তুলে ধরেছেন। যা শুধু উপভোগ্যই নয়, শিক্ষণীয়ও বটে।

 

বিনোদন থেকে আরও পড়ুন

প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2022
All rights reserved www.mzamin.com