নির্বাচিত কলাম
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ
পশ্চিমা দ্বিচারিতা ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্ন
আশরাফুল ইসলাম আকাশ
১৩ মার্চ ২০২৪, বুধবারযুদ্ধ বিধ্বস্ত অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক বিপর্যয় চলছে। একদিকে হত্যাযজ্ঞ অন্যদিকে খাবার ও চিকিৎসা সংকট চরমে। ন্যূনতম বাঁচার অধিকার যেন নেই তাদের! গত ৭ই অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞে ইতিমধ্যে আহত ৭২ হাজার এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার ১৮ মাসব্যাপী অভিযানে ৫৪৫ শিশু নিহত হয়েছে। এর বিপরীতে গাজায় ইসরাইলের পাঁচ মাসের কম সময় ধরে চলা যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ১২ হাজার ৫০০ শিশু। বিশ্বের এমন কোনো সংঘাতের কথা জানা নেই, যেখানে এমন অস্বাভাবিক দ্রুততায় এত শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। এটা শুধু বিপন্ন ও বেদনার্ত অনেকগুলো অঞ্চলের মধ্যে একটি অঞ্চল নয়। ইউনিসেফ বলছে, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মধ্যে গাজা এখন শিশুদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক।
সম্প্রতি অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা করে ইসরাইলি বাহিনী। খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকা শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত এবং অন্তত ৭৬০ জন ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। বিশ্ব জুড়ে এ হামলার নিন্দার ঝড় উঠেছে আর এই ঘটনা এমন সময় ঘটলো, যখন জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সংস্থা (ডব্লিউএফপি) হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে-যদি অবস্থার পরিবর্তন না হয়, তবে গাজায় দুর্ভিক্ষ অত্যাসন্ন। গাজায় ক্রমশ খারাপ হতে থাকা মানবিক পরিস্থিতির ভেতর আরও কিছু করার প্রত্যয় জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেখানে আকাশ পথে ত্রাণসামগ্রী ফেলার ঘোষণা দেন। গত ৩রা মার্চ বিমান থেকে প্যারাসুটের মাধ্যমে ৩৮ হাজারের বেশি খাবারের প্যাকেট ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্রথম আকাশ থেকে গাজায় ত্রাণ সহায়তা পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এই ত্রাণ সহায়তাকে প্রহসন হিসেবে দেখছে খোদ মার্কিনিরা। আমেরিকাতেই এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারী মার্কিনিরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের হত্যার জন্য বাইডেন একদিকে ইসরাইলকে অস্ত্র দিচ্ছে আবার অন্যদিকে স্থল পথ অবরুদ্ধ রেখে আকাশপথে সামান্য পরিমাণ ত্রাণ ফেলেছে। পুরো বিশ্ব থেকে যে পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা যাচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য। অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে শিশুরা। ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা পাচ্ছেন না বেঁচে থাকার মতো ন্যূনতম মানবিক সুবিধা। মার্কিনিরা একদিকে স্বাধীন ফিলিস্তিনের কথা বললেও তাদের পরম মিত্র ইসরাইলকে হত্যাযজ্ঞ চালানোর সব রসদ জোগান দিয়ে যাচ্ছে। সীমানা রুদ্ধ করে চরম মানবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেখানে। স্থায়ী সমাধানের তেমন অগ্রগতি নেই, সাময়িক যুদ্ধবিরতিতেও পৌঁছাতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন বিশ্বনেতারা। পবিত্র রমজান মাসের আগেই গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য চাপ অনেক বেড়েছে।
এদিকে, গত ৩রা মার্চ নিজেদের মধ্যে অহিনকুল সম্পর্ক ভুলে এক হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস ও ফাতাহ। রাশিয়া আয়োজিত এক আলোচনার মধ্যদিয়ে বিরল এই ঐক্যের ঘোষণা দিলো তারা। এক হওয়ার প্রস্তাবে রাজি হয়েছে হামাস, ইসলামিক জিহাদ, ফাতাহ ও অন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীরা। চলমান যুদ্ধে কীভাবে ইসরাইলকে মোকাবিলা করা যায় এবং যুদ্ধের পরে কর্মপরিকল্পনা কী হবে, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। এর আগে গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাতায়েহ পদত্যাগ করেন এবং মন্ত্রিসভা ভেঙে দেন। এর পরপরই ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ঐক্যের ডাক দেন। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো মস্কো থেকে এক হয়ে বার্তা দিয়েছে যে, প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) অধীনে আবারো একই ব্যানারের নিচে আসছে সবাই। সবগুলো পক্ষই এবার ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একমত। যদিও হামাস ও ইসলামিক জিহাদকে সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করেছে পশ্চিমারা। যদিও পিএলও’র সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয় তারা। এর আগেও হামাস ও পিএলও-কে একসঙ্গে আনার নানা চেষ্টা ব্যাহত হয়েছে। তবে সর্বশেষ রাশিয়ার উদ্যোগে এই চেষ্টা সফল হলো। যুদ্ধের মাঠে বা স্বাধীন ফিলিস্তিন গঠনে কতোটা ভূমিকা রাখবে তারা তা সময়ই বলে দেবে। সামপ্রতিক বছরগুলোতে ফাতাহ ও হামাসসহ সবগুলো পক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে রাশিয়া। প্রথম থেকেই ইসরাইলের বর্বর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসছে রাশিয়া।
অপরদিকে একাধিকবার ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে দেশটি। হামলা থামাতে জাতিসংঘে প্রস্তাবও উত্থাপন করেছিল মস্কো। এ ছাড়া ইরান সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠীও হামাসের পাশে দাঁড়িয়েছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরাও ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। সবারই চাওয়া ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। তবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্ন কবে বাস্তবায়ন হবে তা অনুমান করাও দুরুহ ব্যাপার। বিধ্বস্ত গাজার শাসনভার নিয়ে ইতিমধ্যে ইসরাইলিরা বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রকাশ করে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- স্বাধীন ফিলিস্তিন তো দূরের কথা গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণও হারাতে বসেছে ফিলিস্তিনিরা।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজেই যেখানে ইসরাইলের হামলাকে বাড়াবাড়ি বলছেন, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অব্যাহতভাবে সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। এটা তো স্পষ্ট দ্বিচারিতা। সিনেটর বার্নি স্যানডার্স বলছিলেন, ইউক্রেনে বেসামরিক জনতার ওপর রাশিয়ার বোমা হামলার নিন্দা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নেতানিয়াহুর যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে অব্যাহতভাবে তহবিল জুগিয়ে যাচ্ছে? মার্কিন প্রেসিডেন্ট মুখে যাই-ই বলুন না কেন, তিনি মনেপ্রাণে একজন ইহুদিবাদী এবং তিনি ইসরাইলকে রক্ষার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করবেন। এ পরিস্থিতিতে ইসরাইলকে থামাবে কে- এটাই বড় প্রশ্ন। দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান করবে কে?
মানুষ, মনুষ্যত্ব, মানবতা, মানবাধিকার-কথাগুলো একইসূত্রে গাঁথা। দেশ, কাল, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ সমান। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নেই- কথাগুলো শুনতে মধুর লাগলেও বাস্তবে তা পুরোপুরি কার্যকর নয়। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র-একটি ঘোষণাপত্র বা আন্তর্জাতিক দলিল। যা সমস্ত মানুষের অধিকার এবং স্বাধীনতাকে সংহত করে। প্রত্যেক মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে এই সনদ ঘোষিত হয়। সমস্ত মানুষ এবং সমস্ত জাতির জন্য অর্জনের এটি একটি সাধারণ মানদণ্ড হিসেবে গৃহীত হয়। জাতিগুলোকে জাতীয়তা, বসবাসের স্থান, লিঙ্গ, জাতীয় বা জাতিগত নির্বিশেষে সমস্ত মানুষকে স্বাধীন এবং মর্যাদা ও অধিকারে সমান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এই ঘোষণা।
কিন্তু দেখা যায়, মানবাধিকারের ঘোষণা সর্বজনীন হলেও বাস্তবে তা নয়, অবস্থানভেদে মানবাধিকারের প্রয়োগে ভিন্নতা দেখা যায়। ইউক্রেন ও ফিলিস্তিন সংকটে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে। মানবাধিকার শব্দটি যেমন পশ্চিমাদের সৃষ্টি, তেমনি পশ্চিমাদের সুবিধা অনুযায়ী মানুষের সর্বজনীন অধিকারগুলোকে তারা বদলেও নেয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য পশ্চিমারা পশ্চিমের কোনো দেশ, তাদের অর্থনীতির পার্টনার দেশগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নিয়ে কখনো উচ্চবাচ্য করে না। অন্যদিকে তাদের প্রতিপক্ষ দেশগুলোতে সামান্য কিছু ঘটলেই মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। রাশিয়া-ইউক্রেন আর ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে মানবাধিকার নিয়ে পশ্চিমা দ্বৈতনীতির বিষয়টি খোলা চোখেই দেখা যায়। নেটিজেনরা সমালোচনার ঝড় তোলেন। আগেকার সময়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে চুপ থাকলেও পশ্চিমা বিশ্বের সাধারণ জনগণ এসব নিয়ে এখন সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।
রাশিয়ার আক্রমণে ইউক্রেনে দুই বছরে বেসামরিক মৃত্যু ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে একটি বড় অংশ বয়স্ক মানুষ। যারা নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক ছিলেন। রাশিয়ার আগ্রাসনের সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকার নেতৃত্বে ইউরোপিয়ানরা আর্তচিৎকার শুরু করে যেন তাদের নিজেদেরই দেশ আক্রান্ত হয়েছে। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের ওপর এ ন্যক্কারজনক আক্রমণ নিঃসন্দেহে অপরাধ। এর বিরোধিতা প্রতিটি সভ্য দেশ ও মানুষের অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু পশ্চিমাদের এই মানবতা, মানবাধিকার, অন্য দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ইত্যাদি দেশ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্যই কি একই ধরনের? ফিলিস্তিন-ইসরাইলের যুদ্ধের দিকে নজর দিলেই স্পষ্টত উত্তর মিলবে। ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় দেড় লাখের মতো ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা ৩ লাখেরও বেশি।
ইসরাইলি সুসজ্জিত সশস্ত্র বাহিনীর অত্যাধুনিক ট্যাংক, কামান ও ক্ষেপণাস্ত্রের বিপরীতে ফিলিস্তিনি শিশু-কিশোর ও নারী-বৃদ্ধদের ইটপাথরের ঢেলা নিক্ষেপকে মার্কিনিরা ইসরাইলের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি মনে করেন। আর ইসরাইলিদের বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিমানবাহিনী দ্বারা ফিলিস্তিনি ঘনবসতি এলাকায় নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত মানুষের ওপর বোমাবর্ষণকে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে ইসরাইলিদের আত্মরক্ষার অধিকার! ইসরাইলিদের কাছে ফিলিস্তিনিদের মানবিক মর্যাদা বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়ালের পর্যায়ে পৌঁছেছে! এই ইসরাইলি ইহুদিবাদকে অন্ধভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব। সিংহভাগ আন্তর্জাতিক নেতাই ইউক্রেনের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রশংসা করেন, আর সমালোচনা করেন রাশিয়ার আক্রমণের। কিন্তু পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরাইলের দখলদারিত্বের ব্যাপারেও একই কথা খাটছে না। নিজ দেশ রক্ষার জন্য লড়াইরত ইউক্রেনীয়দের সমর্থন দিচ্ছে পশ্চিমা কূটনীতিবিদ ও সংবাদমাধ্যম, কিন্তু ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে লড়াইরত ফিলিস্তিনিদের তারা আখ্যা দিয়েছে ‘সন্ত্রাসী’। গাজার স্কুল, হাসপাতাল ও শরণার্থী ক্যাম্পে নির্বিচারে ইসরাইলিদের অব্যাহত বোমা হামলা, ট্যাংক আক্রমণকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করেনি পশ্চিমা উন্নত দেশের মানবাধিকারের প্রবক্তারা! উল্টো ইসরাইলের পক্ষে সাফায় গেয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মানবাধিকারের কথা বলে মুখে ফেনা তোলা দেশগুলোর আগ্রাসী মনোভাব, দ্বিচারিতা আর স্বার্থপরতার আরেকটি নজির হয়ে থাকবে এই সমর্থন।
ইউরোপে ভয়ঙ্কর ইহুদি নিধনযজ্ঞের পর সেখান থেকে পালিয়ে তারা নতুন এক মাতৃভূমির স্বপ্ন দেখছিল। আর সেই স্বপ্ন ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখলের মধ্যদিয়ে বাস্তবে রূপ নেয়। ১৯৪৮ সালে ইহুদি নেতারা ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিলে শুরু হয় যুদ্ধ। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ হয়েছে এবং প্রাণ বাঁচাতে যখন ফিলিস্তিনিরা ঘরবাড়ি ছাড়ছে, সেই সুযোগে তাদের বেশির ভাগ অঞ্চল দখল করে নেয় ইসরাইল। নিজেদের আগ্রাসন টিকিয়ে রাখতে দীর্ঘ ৭৬ বছর ধরেই নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর চালিয়ে যাচ্ছে নির্যাতন। ইহুদি রাষ্ট্র গড়তে প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের। সেই ইসরাইলকে নিজেদের ঘনিষ্ঠ মিত্র আখ্যা দিয়ে বারবার আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে মানবাধিকারের ঝাণ্ডা-উত্তোলক হিসেবে দাবিকারী মহাপরাক্রমশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রায়ই শান্তি আলোচনার নাটক মঞ্চস্থ করলেও কখনই সফলতা আসেনি। কারণ সর্বদা তারা ইসরাইলের পক্ষে থেকেছে। তাদের অর্থ, অস্ত্র ও সর্বাত্মক সহায়তায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী জনগণের ওপর দশকের পর দশক ধরে নিপীড়ন চালিয়ে আসছে দখলদার ইসরাইল। এবারের সংঘাতেও ত্বরিত সাহায্য সহযোগিতা পাঠায়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যুদ্ধ বন্ধ ও মানবাধিকার রক্ষার দাবি উঠলেও পশ্চিমারা তাতে কর্ণপাত করেননি।
ইউক্রেন আক্রমণ ঠেকানোর জন্য পশ্চিমারা মরিয়া হয়ে উঠেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব তীব্র প্রতিবাদ করেছে; তা নিঃসন্দেহে উত্তম কাজ। কিন্তু যখন তারা নিজেরাই এসব অপকর্ম করে ফিলিস্তিনে লাখো মানুষ হত্যা করে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে, যখন যে দেশে খুশি আক্রমণ করে, যাকে খুশি তাকে হত্যা করে, তখন তাদের এই দ্বিমুখী নীতিটাই প্রকাশিত হয়ে পড়ে। কাজেই তাদের ন্যায়পরায়ণতার বাণী, সভ্যতার বুলি, গণতন্ত্রের বার্তা ইত্যাদি সবই আজ শঠতা বলেই প্রমাণিত হচ্ছে। তবুও অর্থসম্পদ ও অস্ত্রশক্তির জোরে তারাই আজ বিশ্বের মানবতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আর ন্যায়পরায়ণতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দিচ্ছে, যা অন্য সব দুর্বল দেশ, রাষ্ট্র ও জনতাকে মানতে হবে। সবাই তা মেনেও নেবে। কিন্তু ঘৃণা করবে পশ্চিমাদের নগ্ন দ্বিমুখী নীতিকে। পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে বাকি বিশ্বের ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে থাকবে, যা একসময় আরও চরমপন্থি গোষ্ঠীর জন্ম দেবে এবং চূড়ান্তভাবে বৈশ্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অস্থির করে তুলবে। বোধোদয় হোক সবার, সুরক্ষিত থাকুক প্রতিটি প্রাণ। ইউক্রেন-ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান হোক। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক। নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তি হোক-এমনটায় প্রত্যাশা।
লেখক: কলাম লেখক ও সাবেক সভাপতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (জবিসাস)।
E-mail : [email protected]
আপনার লিখা পড়লাম।বাস্তব লিখা।জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় নেতানিয়াহুকে খুব কাছ থেকে অবলোকন করেছি। সারা পৃথিবীতে বড় বড় প্রতিবাদ চলছে।কিন্তু তাকে যেভাবে দেখেছি,আমার মনে হয় পৃথিবীর বিলিয়ন মানুষও যদি প্রতিবাদে নামে এই মানুষটি(?) থামবে না।জাতিসংঘ, ও আই সি, আরব লীগ এগুলো এখন পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষের মুক্তির প্রতিবন্ধক।