প্রথম পাতা

বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা চাইলেন মোমেন

অতিথি প্রতিবেদক

৬ এপ্রিল ২০২২, বুধবার, ৯:৫৬ অপরাহ্ন

বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। সোমবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি এ সহায়তা কামনা করেন। বৈঠকে অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দেন ব্লিনকেন। এ সময় মন্ত্রী মোমেন বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার আন্তরিক। এতে সব রাজনৈতিক দলের অংশ নেয়ার মানসিকতা থাকা প্রয়োজন। বিএনপি ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দল নির্বাচনমুখী জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা জরুরি। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ধরনা দেয়ার বিষয়টি মন্ত্রী মোমেন নিজেই গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন। বৈঠক শেষে হোটেলে ফিরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। তারা নির্বাচনকে স্বচ্ছ, অবাধ এবং সুষ্ঠু দেখতে চান। জবাবে আমি বলেছি, সব দল জয়েন করে, একটি দল (বিএনপি) ছাড়া। ওই পার্টি তৈরি হয়েছে মিলিটারি দ্বারা, তারা নির্বাচনে আসে না। যুক্তরাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ তাদের রাজনীতিতে নিয়ে আসা। তাদের ভোটে জিততে হবে, মানুষের কাছে যেতে হবে। সেজন্য আমরা ফেয়ার সিস্টেম করেছি। আমাদের নির্বাচন কমিশন আছে, তারা স্বাধীন। নির্বাচনের সময় সবকিছুর জন্য তাদের একজন ‘বস’ আছেন। মন্ত্রী মোমেনের এমন বক্তব্যের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনের প্রতিক্রিয়া কি ছিল জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে ড. মোমেন বলেন, তিনি (ব্লিনকেন) বলেছেন, ‘এগুলো তো ভালো।’ মন্ত্রী নিজের এলাকার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমার শহরে (পৈতৃক নিবাস সিলেটে) আমি আওয়ামী লীগের এমপি। আমার মেয়র বিএনপি’র। আমরা খুব স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে একত্রে কাজ করি। সুতরাং, নির্বাচনে তাদের (বিএনপিকে) স্বাগত জানাই। যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছি আপনারা বরং তাদের আইনি পথে অর্থাৎ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসুন।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতি- মোমেন-ব্লিনকেন বৈঠকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতের তাগিদ: এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিনকেন নিরাপদ ও সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি মানবাধিকার, আইনের শাসন ও ধর্ম চর্চার স্বাধীনতা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন বলে এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এসবের গুরুত্বের বিষয়টি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপে ব্লিনকেন পুনর্ব্যক্ত করেছেন বলেও জানানো হয়। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইসকে উদ্ধৃত করে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিটি প্রচার করা হয়। উল্লেখ্য, ওই সোমবার ওয়াশিংটন সময় দুপুরে (বাংলাদেশ সময় মধ্যরাত) পররাষ্ট্র দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকের উদ্বোধনী সেশন বা দুই মন্ত্রীর সূচনা বক্তব্য আগেই প্রচার করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। পরবর্তীতে যে রুদ্ধদ্বার আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে মন্ত্রী মোমেন গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন। ঢাকার তরফে স্বতন্ত্র সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু স্টেট ডিপার্টমেন্টের তরফে মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে সংক্ষিপ্ত বিবৃতিটি প্রচার করা ছাড়া বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন ও সম্পর্কের প্রতিফলন হিসেবে সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্থনি জে. ব্লিনকেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেক্রেটারি অব স্টেট ব্লিনঙ্কেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সম্পর্কের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। একই সঙ্গে ফুলব্রাইট বিনিময়সহ দুই দেশের জনগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠাসহ গত অর্ধ শতাব্দীতে পারস্পরিক সহযোগিতার যেসব প্রতিফলন ছিল তা নিয়ে কথা বলেন। উচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠকে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিদ্যমান সহযোগিতা, গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাহিদা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেন।

নিষেধাজ্ঞা কোনো সুইচ নয় যে চাপলেই অন বা অফ হবে- পররাষ্ট্রমন্ত্রী: ওদিকে বাংলাদেশের এলিট সিকিউরিটি ফোর্স র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হতে হবে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জি ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠকের পর মন্তব্যে এ ইঙ্গিত দেন। বলেন,  র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা পূনর্বিবেচনার জন্য আমি অনুরোধ করেছি। জবাবে তারা এ নিয়ে বিদ্যমান প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যাওয়ার কথাই বলেছেন। মন্ত্রী বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের একটা প্রসেস আছে। এটা আমাদের কমপ্লিট করতে হবে। আমেরিকায় প্রায় জিনিসেরই প্রক্রিয়া রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক কমিটির লোকগুলোকে সন্তুষ্ট করতে হবে, এটাতে সময় লাগবে। তিনি বলেন, এটা সুইচের মতো না যে চাপলেই অন বা অফ করা যাবে। বাংলাদেশে অনেক কিছু ‘সহজে’ করা গেলেও যুক্তরাষ্ট্রে সেভাবে করা যায় না মন্তব্য করে মোমেন বলেন, ‘আমাদের দেশের সরকার ইয়েস বললে ইয়েস হয়ে গেল। এখানে অনেক সময় চাইলেও তারা (সরকার) তা পারে না।  উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যেমন ট্যারিফ প্রত্যাহারের জন্য ২৩টা কমিটিতে অনুমোদন লাগে। তারপর প্রেসিডেন্ট তাতে সম্মতি দেন। এর আগে প্রেসিডেন্টও কিছু বলতে পারেন না। আমেরিকায় এক্সিকিউটিভরা যথেষ্ট আটকা থাকেন জানিয়ে মোমেন বলেন, সে কারণে তারা সহজে কিছু বলতে পারবে না। সুতরাং আপনাকে (নিষেধাজ্ঞা শিথিলে) তাদের প্রসেসের মধ্যদিয়ে যেতে হবে।  যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ ছিল মুখ্য। গত বছর ১০ই ডিসেম্বর ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক, বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ বাহিনীর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। র‌্যাব হয়তো কখনো কখনো বাড়াবাড়ি করেছে স্বীকার করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনের সঙ্গে আলাপে মোমেন বলেন, তারা কখনো কখনো ‘অতিরিক্ত বা বেশি কিছু করে’ ফেলেছে। তবে এটা রোধে বা বিচারে আমাদের আইন আছে। অনেকের শাস্তি হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী র‌্যাব গঠন, সদস্যদের বাড়াবাড়ির বিচার এবং নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী চার মাসে এ এলিট ফোর্সের কাজের উজ্জ্বল বিবরণ তুলে ধরেন। বলেন, আমি তাদের (যুক্তরাষ্ট্রকে) এলিট ফোর্স র‌্যাব এমন এক সময়ে তৈরি হয়েছিল, যখন আমাদের দেশে সন্ত্রাস, জিহাদি- এগুলোর উৎপাত খুব বেশি ছিল। ‘একদিনে ৪৯৫টা বোমাবাজি হয়, শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়, যার ফলে ২৪ জন লোক মারা যায়, ৩৭০ জন আহত হয়। এ নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক ছিল, ওই সময়ে র‌্যাব তৈরি হয়। মন্ত্রী বলেন, র‌্যাবের ইনবিল্ট সিস্টেম আছে জবাবদিহিতার এবং অনেকের শাস্তিও হয়েছে। এমনকি মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেয়েছে ১২ জনের মতো। সুতরাং এখানে জবাবদিহিতা আছে। তাছাড়া এই র‌্যাবকে আপনাদেরই রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি বলেছিলেন, র‌্যাব ইজ দ্য এফবিআই অব বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির ?উপরে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় আমার তরুণরা ওখানে কাজ করায় নিরুৎসাহিত হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি খুব খুশি হবো, আপনি যদি এটা পুনর্বিবেচনা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন জবাবে কী বলেছেন, সে ধারণা দিয়ে মোমেন বলেন, ‘উনি বললেন যে, এটার প্রসেস আছে, সেই প্রসেসে যেতে হবে। তবে অবশ্যই র‌্যাবের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার। আমরা এ নিয়ে বেশ সোচ্চার রয়েছি।’ মন্ত্রী বলেন, আমি বললাম, আমরা সব ধরনের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি। গত চার মাসে কেউ মারা (বিচারবহির্ভূত হত্যা) যায়নি’। আর ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ)-তেও আমাদের ট্র্যাক রেকর্ড গুড। গত চার মাসে একজনও অ্যারেস্ট হয়নি। ব্লিনকেন বললেন, ‘এটা ভালো’।

র‌্যাব ছাড়াও আরও যেসব বিষয় আলোচনায়: মোমেন-ব্লিনকেন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে ‘খুবই ভালো আলোচনা হয়েছে’ দাবি করেন হোটেলে ফিরে ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, বাংলাদেশের ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি ও অবকাঠামো খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত আসামি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানো, রোহিঙ্গা সংকট, শ্রম অধিকার এবং মানবাধিকারের মতো বিষয় আলোচনায় এসেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চিঠির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আলোচনা শুরু হয়। চিঠিতে বাইডেন লিখেন- দুই দেশের গত ৫০ বছরের সম্পর্ক ‘অত্যন্ত মধুর’। আগামী ৫০ বছরে আমাদের যথেষ্ট কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ক্লাইমেট ইস্যু, হিউম্যান রাইটস, শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করার সুযোগ আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মোমেন বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ৯০ শতাংশই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে, সে বিষয়টি তুলে ধরে আমি বলেছি, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি ও অবকাঠামো খাতে নজর দেয়ার এখন সময় এসেছে। এসব খাতে তাদের বিনিয়োগের জন্য আমি আহ্বান জানিয়েছি। মন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি, আমাদের দেশে ‘ইজ অব বিজনেস’ খুব পুওর। তোমরা আমাদের সাহায্য করো না কেন? যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘‘আমরা বলেছি যে, এখানে ৫-৬ লাখ বাঙালি থাকে, তারা দেশে যেতে চায়, বিমানটা যদি চালু করেন। আমরা সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছি, আপনি এটাকে ত্বরান্বিত করেন। ৫০ বছর পূর্তিতে যদি এটা করতে পারি, আমরা খুবই খুশি হব। রাহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে মোমেন বলেন, বলেছি, আপনাদের পজিশন ভালো। আপনাদের আরও বেশি ভূমিকা চাই।  আমরা চাই, আপনারা আসিয়ান ও কোয়াড কান্ট্রিজকে ওদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে বলবেন। আমরা চাই, এর আগে তাদের ওপরে ২০১৬ সালের আগে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, ওইটা আবার আরোপ করেন। আপনি এখনো জিএসপি দিচ্ছেন মিয়ানমারকে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। বৈঠকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করতে তাগিদ দেন ব্লিনকেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানান। বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরতের সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র আগে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দিতে রাজি হয়েছিল, কিন্তু পরে সেটি বাস্তবায়িত হয়নি বলে জানিয়েছি আমি। বলেছি, একবার ঠিক হয়েছিল তাকে ফেরত পাঠানো হবে। কিন্তু পাঠানো হয়নি। এই প্রক্রিয়াটি দ্রুত শেষ করা উচিত। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানো একটি গেম চেঞ্জার হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী মোমেন ব্লিনকেনকে বলেন, একজন খুনিকে আশ্রয় দেয়া আমেরিকান জনগণ পছন্দ করবে না। এটি আপনারা চিন্তা করতে পারেন।

সূচনা বক্তব্যে যা বলেন ব্লিনকেন: দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সূচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতা (হোস্ট) পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিনকেন এবং পরে অতিথি ৬ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বক্তব্য রাখেন। সূচনা বক্তব্যে ব্লিনকেন বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে এখানে পেয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব আরও জোরদারে একসঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা আজ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্‌যাপন করছি। আমরা ফেলে আসা দিনগুলোকে স্মরণ করে আজ পরবর্তী ৫০ বছরের দিকে তাকাচ্ছি। ভবিষ্যতেও আমরা একসঙ্গে কাজ করবো এবং আমাদের অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করতে পারবো বলে আশা রাখি। ব্লিনকেন বলেন, পৃথিবী আজ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কঠিন সংকটের মুখোমুখি, এটি মোকাবিলায় অন্যান্য দেশকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা এটি গভীরভাবে উপলব্ধি করি। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একত্রে কাজ করছে উল্লেখ করে মার্কিন মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ৬ কোটি ভ্যাকসিন দিতে পেরেছে, এ জন্য আমরা গর্বিত। মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়াসহ তাদের ভরণপোষণে বাংলাদেশ অসাধারণ মানবতা ও উদারতা দেখাচ্ছে উল্লেখ করে ব্লিনকেন বলেন, এ জন্য আমরা বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ অন্যতম শক্তিশালী সমর্থক হিসেবে কাজ করছে এবং অন্য অনেক কিছুর জন্যও বাংলাদেশ আজ প্রশংসিত। এশিয়া অঞ্চল তথা বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র নানা বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতেও উভয়ের মধ্যে এই সদ্ভাব ও আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status