এক্সক্লুসিভ

জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের এফটিএ স্বাক্ষর করা উচিত: সিপিডি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৭ মার্চ ২০২২, বৃহস্পতিবার, ১০:০৭ অপরাহ্ন

জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর করা উচিত বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এতে একদিকে বিনিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত হবে। পাশাপাশি বাজারে প্রবেশাধিকারের পথও সহজ হবে। কারণ এফটিএ বা পিটিএ (প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষর করা না হলে জাপানের বাজারে উচ্চ শুল্কের সম্মুখীন হতে হবে বাংলাদেশকে। গতকাল রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সিপিডি আয়োজিত ‘পরবর্তী উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশ জাপানের অংশীদারিত্ব’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলা হয়।
সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য উভয় দেশের মধ্যে একটি এফটিএ স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যেকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও শক্তিশালী ও সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বলেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যে অভিজ্ঞতা, তারই আলোকে আমরা অপেক্ষা করে আছি যে, আগামী ৫০ বছরে এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী এবং উষ্ণ হবে। তিনি বলেন, একসময় কেউ বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ চুক্তি করতে তেমন আগ্রহ দেখায়নি। তবে জাপান নিজেই এফটিএ চুক্তি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে এবং নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সংলাপে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ, জাইকা চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ ইউহো হায়াকাওয়া, সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেনের বোর্ড সদস্য ক্যাথি মাতসুই।
সিপিডি জানায়, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর বাংলাদেশকে এমএফএ (মাল্টি ফাইবার এগ্রিমেন্ট) হিসেবে গণ্য করা হবে এবং যদি এখন কোনো এফটিএ বা পিটিএ (প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষর না করা হয় তাহলে জাপানের বাজারে উচ্চ শুল্কের সম্মুখীন হবে।
জাপানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নকে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। যেখানে কেবলমাত্র জাপানের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেকগুলো নেতিবাচক দিক আছে, যেগুলো আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। দেশে দুর্নীতির সমস্যা অস্বীকার করার উপায় নেই। এটি ক্যান্সারের মতো, আমরা এটা জানি, এটা দূর করার চেষ্টা করছি। এটা আঠার মতো। দেশে দুর্নীতি প্রতিকারেও আইন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন দেশে প্রচুর উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। এতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির সুযোগও তৈরি হচ্ছে। কোথাও দুর্নীতি হলে সেখানে আমরা প্রতিকার ব্যবস্থা করি, এক্ষেত্রে প্রচলিত আইন অনুসারে কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাই এতে অনেক সময় পার হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশের সব জায়গায় জাপানি বিনিয়োগের চিহ্ন রয়েছে। মাতারবাড়ি, মেট্রোরেল, আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চল সব ক্ষেত্রেই জাপান কাজ করছে। চলমান এসব কাজ শেষ হলে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলবে।
এসব উন্নয়ন ও কাজের জন্য রাজনৈতিক ধারাবাহিকতায় গুরুত্ব দেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি শুধু একটা বিষয় নিয়েই ভয় পাচ্ছি। সেটা হলো রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা না থাকা। রাজনীতি ও সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে এটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, টোকিও বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ গঠনের বিষয়ে একটি যৌথ সমীক্ষা শুরু করার কথা ভাবছে। তিনি বলেন, যদি আমরা প্রক্রিয়াটি শুরু করতে পারি এবং এফটিএ করতে পারি, তাহলে এটি আমাদের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করবে। তবে সেটি পারস্পরিক হতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পর চলমান বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে চায় জাপান। এজন্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) অথবা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সম্পাদন এবং উভয় দেশের বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়াতে একটি যৌথ কার্য দল গঠন করা যেতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, জাপানের শ্রমবাজারের চাহিদা মেটাতে হলে বাংলাদেশকে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য প্রশিক্ষণের দিকে মনোযোগী হতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন কাজ করছে এমন প্রায় ৬৮% জাপানি কোম্পানি তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য প্রস্তুত। বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে আমরা জাপান সরকারের ওপর পূর্ণ আস্থাশীল।
প্রবন্ধ উপস্থাপনে সিপিডির গবেষক সৈয়দ ইউসুফ বলেন, জাপান বাংলাদেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগের বড় অংশীদার হতে পারে। জাপানে পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, তেমনি জনশক্তি রপ্তানির সম্ভাবনাও রয়েছে। সেসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশকে আরও গভীরভাবে ভাবতে হবে।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে আমাদের প্রয়োজন। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে যেসব শিক্ষার্থী আছে, তাদের জন্য জাপানে কাজ করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। সেখানে কাজ করার জন্য একটি বড় জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে আগামী দিনগুলোতে জাপানের জনশক্তির যে ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তন হবে, বাংলাদেশ সেই সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে না।

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status