প্রথম পাতা
ইউক্রেন যুদ্ধ
যে দশ সংকটের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ
কাজল ঘোষ
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, শুক্রবার, ৯:৩৮ অপরাহ্ন

ইউক্রেনে পুতিনের সামরিক হামলার ঘোষণায় দ্রুতই বদলে যাচ্ছে বিশ্ব পরিস্থিতি। এই সংকটে বাংলাদেশ কোথায়? আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর এসেছে ইউক্রেনে হাজার বাংলাদেশি চরম সংকটে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ছে হু হু করে। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে স্যাংশন আরোপ করেছে। কিন্তু এই স্যাংশনের প্রভাব বাংলাদেশে কোন কোন ক্ষেত্রে পড়তে পারে এমন বেশকিছু প্রশ্ন নিয়ে মানবজমিন কথা বলেছে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি আ ন ম মুনীরুজ্জামান-এর সঙ্গে। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ বেশকিছু সংকটে পড়বে এই ইস্যুতে। তার মধ্যে রাশিয়ার চলমান প্রকল্পগুলোর কী হবে, পণ্য সরবরাহ চেইন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিশ্ববাজারে কারেন্সির বাজার দরে অস্থিরতা এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এই লড়াইয়ে কোন পক্ষে যাবে বাংলাদেশ। সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত:
প্রথমত, আমরা একটি জ্বলানি আমদানি নির্ভর দেশ। আমাদের জ্বালানির সম্পূর্ণটাই আমদানি করে আনতে হয় বিদেশ থেকে। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলা শুরু হওয়ায় জ্বালানির দাম বিশ্ববাজারে খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যাচ্ছে। গতকাল বৃহষ্পতিবার আমরা দেখেছি তা ১০০ ডলারে পৌঁছে গেছে। এটা বাড়তেই থাকবে। এটা যত বৃদ্ধি পাবে এর যে নানাবিধ প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া তা আমাদের সামনে আসবে। শুধু জ্বালানির মূল্য নয় এর সঙ্গে অন্যান্য জিনিসেরও দাম বেড়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত, ইউক্রেন, বেলারুশ এবং রাশিয়া সংলগ্ন ঐ অঞ্চল থেকে পৃথিবীর একটি বড় অংশে গম রপ্তানি হয়। গমের একটি বড় অংশ এই অঞ্চল থেকে আসে। যুদ্ধ হওয়ার ফলে এসব অঞ্চল থেকে গম রপ্তানি হবে না বা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে বিশ্বের খাদ্যবাজার অস্থির হয়ে যাবে এবং খাদ্যপণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাবে। যেটার সরাসরি প্রভাব আমাদের ওপরে এসে পড়বে।
তৃতীয়ত, এই হামলার কারণে সারা পৃথিবীতে যে সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ রুট রয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে বিঘ্নিত হয়ে যাবে। সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বিঘ্নিত হওয়ার ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের পণ্য বা পোশাক রপ্তানি করার যে ধরনের সুযোগ থাকা দরকার সেটা অনেক ক্ষেত্রে বিঘ্নিত হয়ে যাবে। আমরা জানি যে, আমাদের তৈরি পোশাকের যে রপ্তানি হয় সেক্ষেত্রে সরবরাহের একটি সময়সীমা বা ডেডলাইন দেয়া থাকে। অর্ডারের শিপমেন্ট যদি ৭ দিন পিছিয়ে যায় তাহলে সেই সিজনটি ক্রেতারা আর ধরতে পারে না। সেক্ষেত্রে অর্ডারও বাতিল হয়ে যাবে। সাপ্লাই চেইন বিঘ্নিত হওয়ার কারণে আমাদের পণ্য রপ্তানি করার ক্ষেত্রে যে ধরনের সুযোগ থাকা দরকার বিশেষত জাহাজ বা অন্যান্য যে পদ্ধতি রয়েছে তা যদি বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে এর সরাসরি প্রভাব আমাদের ওপর এসে পড়বে এবং এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতির ওপরও।
চতুর্থত, আমাদের খুব বড় একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে রূপপুরে। যেটা রাশিয়ার রোসাটন স্টেট এজেন্সি দ্বারা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে যে, রাশিয়ার ওপর বড় ধরনের স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা আসতে যাচ্ছে। যদি এ ধরণের স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়ার বিভিন্ন সংস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় তাহলে আমাদের সর্ববৃহৎ এই প্রকল্পের চলমান প্রক্রিয়া প্রশ্নবিব্ধ হয়ে যাবে। অন্যদিকে যদি স্যাংশনের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান পড়ে যায় তাহলে এই প্রকল্প স্থগিতও হয়ে যেতে পারে।
পঞ্চমত, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর কাছে, বিশেষ করে বিমান বাহিনীর কাছে বিভিন্ন ধরনের রাশিয়ার তৈরি সরঞ্জামাদি আছে যেমন, মিগ-২৯, এম আই-১৭ হেলিকপ্টার এবং অতি সম্প্রতি এটাচ হেলিকপ্টারের অর্ডার দেয়া হয়েছে রাশিয়াকে। সশস্ত্র বাহিনীর কাছে রাশিয়ার তৈরি সেসব সরঞ্জামাদি আছে এগুলোকে চলমান রাখা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এগুলোর যদি স্পেয়ারস না পাওয়া যায়, এগুলো যদি মেইনটেন্যান্স না করা যায় তাহলে তো এগুলো অকেজো হয়ে যাবে, এগুলো ব্যবহার করা যাবে না।
ষষ্ঠত, এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল ব্যবস্থা যেভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে সেটার প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়বে। অর্থনৈতিকভাবে যেকোনো সময় পৃথিবীর কোনো অঞ্চলে সংঘাত হলে আন্তর্জাতিক চলাচল, আমদানি, রপ্তানির উপর যে ইন্স্যুরেন্স কভারেজ বা বীমার মূল্য থাকে তা বহুলাংশে বেড়ে যায়। তার কারণে যেকোনো ধরনের যোগাযোগ বা পণ্য আমদানি ও রপ্তানি যে মূল্যে আমরা পৌঁছাবো তাতে পণ্যমূল্যের দাম অনেক অংশে বেড়ে যাবে এবং এর প্রভাব সরাসরি জনগণের ওপর পড়বে। বীমার মূল্য বাড়লে সবকিছুর বাজার দরও বেড়ে যাবে।
সপ্তমত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজার বা কারেন্সি মার্কেট সম্পূর্ণভাবে অস্থিতিশীল হয়ে যাবে। বিশ্বব্যাপী মুদ্রা বাজার ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে। মুদ্রাবাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া আমাদের ওপর এসে সরসারি পড়বে।
অষ্টমত, কূটনৈতিকভাবে বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি যে, রাশিয়ার এই হামলার ফলে বিশ্ব দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের ওপর চাপ আসবে যেকোনো একটি পক্ষে কথা বলার। অথবা জাতিসংঘ যদি এই ইস্যুতে ভোটে যায় তাহলে চাপ আসবে সে ক্ষেত্রেও। কূটনৈতিক মধ্যস্থতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে।
নবমত, আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের নিরাপত্তা। যেসব দেশ খুব বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দ্ধারা পরিবেষ্টিত থাকে সেসব দেশে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা কীভাবে বজায় রাখবে সেটার বিষয়ে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এখানে বিশেষ করে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, বর্তমানে যে রাজনৈতিক, ভৌগোলিক সীমারেখা দ্বারা, বিভিন্ন দেশের সৃষ্টি হয়েছে; যার ওপর দাঁড়িয়ে পৃথিবীর স্থিতিশীলতা বজায় আছে, সেটা যদি সম্পূর্ণভাবে বিঘ্নিত হয়ে যায় তাহলে এটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এখন পর্যন্ত আমরা বলতে পারছি না।
দশম, এ যুদ্ধের মাধ্যমে কতগুলো নতুন ধরনের পন্থা আমরা দেখতে পাচ্ছি। তার মধ্যে উল্লেখ করার মতো যেটা দেখতে পাচ্ছি তা হলো, যেকোনো দেশের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী সেটা এথনিক মাইনোরিটি হতে পারে বা রিলিজিয়াস মাইনোরিিট হতে পারে তাদেরকে এমনভাবে উইপেনাইজ করা হচ্ছে যে, তারা দেশের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করার জন্য এক ধরনের পন্থা অবলম্বন করছে। যেমন বর্তমান এই সংকটের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, দু’টি রিপাবলিকানকে রাশিয়া স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিলো এবং তাদেরকে দিয়েই আগে মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড় করিয়ে, স্বীকৃতি দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হলো যে রাশিয়া তাদের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিলো।
এটাকে ইংরেজিতে বললে দাঁড়ায়, ‘উইপেনাইজেশন অফ এথনিক অ্যান্ড রিলিজিয়াস মাইনোরিটি ইন অ্যা স্টেট টু সাভার্ড ন্যাশনাল সভরেন্টি।’ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অথবা ধর্মীয় মাইনোরিটিকে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়া এবং পরবর্তীতে তাদের সাহায্যে বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ করা।
প্রথমত, আমরা একটি জ্বলানি আমদানি নির্ভর দেশ। আমাদের জ্বালানির সম্পূর্ণটাই আমদানি করে আনতে হয় বিদেশ থেকে। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলা শুরু হওয়ায় জ্বালানির দাম বিশ্ববাজারে খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যাচ্ছে। গতকাল বৃহষ্পতিবার আমরা দেখেছি তা ১০০ ডলারে পৌঁছে গেছে। এটা বাড়তেই থাকবে। এটা যত বৃদ্ধি পাবে এর যে নানাবিধ প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া তা আমাদের সামনে আসবে। শুধু জ্বালানির মূল্য নয় এর সঙ্গে অন্যান্য জিনিসেরও দাম বেড়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত, ইউক্রেন, বেলারুশ এবং রাশিয়া সংলগ্ন ঐ অঞ্চল থেকে পৃথিবীর একটি বড় অংশে গম রপ্তানি হয়। গমের একটি বড় অংশ এই অঞ্চল থেকে আসে। যুদ্ধ হওয়ার ফলে এসব অঞ্চল থেকে গম রপ্তানি হবে না বা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে বিশ্বের খাদ্যবাজার অস্থির হয়ে যাবে এবং খাদ্যপণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাবে। যেটার সরাসরি প্রভাব আমাদের ওপরে এসে পড়বে।
তৃতীয়ত, এই হামলার কারণে সারা পৃথিবীতে যে সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ রুট রয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে বিঘ্নিত হয়ে যাবে। সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বিঘ্নিত হওয়ার ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের পণ্য বা পোশাক রপ্তানি করার যে ধরনের সুযোগ থাকা দরকার সেটা অনেক ক্ষেত্রে বিঘ্নিত হয়ে যাবে। আমরা জানি যে, আমাদের তৈরি পোশাকের যে রপ্তানি হয় সেক্ষেত্রে সরবরাহের একটি সময়সীমা বা ডেডলাইন দেয়া থাকে। অর্ডারের শিপমেন্ট যদি ৭ দিন পিছিয়ে যায় তাহলে সেই সিজনটি ক্রেতারা আর ধরতে পারে না। সেক্ষেত্রে অর্ডারও বাতিল হয়ে যাবে। সাপ্লাই চেইন বিঘ্নিত হওয়ার কারণে আমাদের পণ্য রপ্তানি করার ক্ষেত্রে যে ধরনের সুযোগ থাকা দরকার বিশেষত জাহাজ বা অন্যান্য যে পদ্ধতি রয়েছে তা যদি বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে এর সরাসরি প্রভাব আমাদের ওপর এসে পড়বে এবং এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতির ওপরও।
চতুর্থত, আমাদের খুব বড় একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে রূপপুরে। যেটা রাশিয়ার রোসাটন স্টেট এজেন্সি দ্বারা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে যে, রাশিয়ার ওপর বড় ধরনের স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা আসতে যাচ্ছে। যদি এ ধরণের স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়ার বিভিন্ন সংস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় তাহলে আমাদের সর্ববৃহৎ এই প্রকল্পের চলমান প্রক্রিয়া প্রশ্নবিব্ধ হয়ে যাবে। অন্যদিকে যদি স্যাংশনের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান পড়ে যায় তাহলে এই প্রকল্প স্থগিতও হয়ে যেতে পারে।
পঞ্চমত, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর কাছে, বিশেষ করে বিমান বাহিনীর কাছে বিভিন্ন ধরনের রাশিয়ার তৈরি সরঞ্জামাদি আছে যেমন, মিগ-২৯, এম আই-১৭ হেলিকপ্টার এবং অতি সম্প্রতি এটাচ হেলিকপ্টারের অর্ডার দেয়া হয়েছে রাশিয়াকে। সশস্ত্র বাহিনীর কাছে রাশিয়ার তৈরি সেসব সরঞ্জামাদি আছে এগুলোকে চলমান রাখা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এগুলোর যদি স্পেয়ারস না পাওয়া যায়, এগুলো যদি মেইনটেন্যান্স না করা যায় তাহলে তো এগুলো অকেজো হয়ে যাবে, এগুলো ব্যবহার করা যাবে না।
ষষ্ঠত, এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল ব্যবস্থা যেভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে সেটার প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়বে। অর্থনৈতিকভাবে যেকোনো সময় পৃথিবীর কোনো অঞ্চলে সংঘাত হলে আন্তর্জাতিক চলাচল, আমদানি, রপ্তানির উপর যে ইন্স্যুরেন্স কভারেজ বা বীমার মূল্য থাকে তা বহুলাংশে বেড়ে যায়। তার কারণে যেকোনো ধরনের যোগাযোগ বা পণ্য আমদানি ও রপ্তানি যে মূল্যে আমরা পৌঁছাবো তাতে পণ্যমূল্যের দাম অনেক অংশে বেড়ে যাবে এবং এর প্রভাব সরাসরি জনগণের ওপর পড়বে। বীমার মূল্য বাড়লে সবকিছুর বাজার দরও বেড়ে যাবে।
সপ্তমত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজার বা কারেন্সি মার্কেট সম্পূর্ণভাবে অস্থিতিশীল হয়ে যাবে। বিশ্বব্যাপী মুদ্রা বাজার ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে। মুদ্রাবাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া আমাদের ওপর এসে সরসারি পড়বে।
অষ্টমত, কূটনৈতিকভাবে বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি যে, রাশিয়ার এই হামলার ফলে বিশ্ব দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের ওপর চাপ আসবে যেকোনো একটি পক্ষে কথা বলার। অথবা জাতিসংঘ যদি এই ইস্যুতে ভোটে যায় তাহলে চাপ আসবে সে ক্ষেত্রেও। কূটনৈতিক মধ্যস্থতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে।
নবমত, আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের নিরাপত্তা। যেসব দেশ খুব বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দ্ধারা পরিবেষ্টিত থাকে সেসব দেশে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা কীভাবে বজায় রাখবে সেটার বিষয়ে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এখানে বিশেষ করে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, বর্তমানে যে রাজনৈতিক, ভৌগোলিক সীমারেখা দ্বারা, বিভিন্ন দেশের সৃষ্টি হয়েছে; যার ওপর দাঁড়িয়ে পৃথিবীর স্থিতিশীলতা বজায় আছে, সেটা যদি সম্পূর্ণভাবে বিঘ্নিত হয়ে যায় তাহলে এটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এখন পর্যন্ত আমরা বলতে পারছি না।
দশম, এ যুদ্ধের মাধ্যমে কতগুলো নতুন ধরনের পন্থা আমরা দেখতে পাচ্ছি। তার মধ্যে উল্লেখ করার মতো যেটা দেখতে পাচ্ছি তা হলো, যেকোনো দেশের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী সেটা এথনিক মাইনোরিটি হতে পারে বা রিলিজিয়াস মাইনোরিিট হতে পারে তাদেরকে এমনভাবে উইপেনাইজ করা হচ্ছে যে, তারা দেশের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করার জন্য এক ধরনের পন্থা অবলম্বন করছে। যেমন বর্তমান এই সংকটের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, দু’টি রিপাবলিকানকে রাশিয়া স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিলো এবং তাদেরকে দিয়েই আগে মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড় করিয়ে, স্বীকৃতি দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হলো যে রাশিয়া তাদের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিলো।
এটাকে ইংরেজিতে বললে দাঁড়ায়, ‘উইপেনাইজেশন অফ এথনিক অ্যান্ড রিলিজিয়াস মাইনোরিটি ইন অ্যা স্টেট টু সাভার্ড ন্যাশনাল সভরেন্টি।’ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অথবা ধর্মীয় মাইনোরিটিকে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়া এবং পরবর্তীতে তাদের সাহায্যে বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ করা।