প্রথম পাতা

ইসি কর্মকর্তা কাসেমের পদত্যাগ নানা গুঞ্জন

সিরাজুস সালেকিন

৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, মঙ্গলবার, ৯:৫৩ অপরাহ্ন

নতুন নির্বাচন কমিশন ঘোষণার ঠিক দুই সপ্তাহ আগে ইসি সচিবালয়ের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন এক যুগ্ম সচিব। পরবর্তী কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন এমন গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে তিনি কমিশনের চাকরি ছাড়ছেন বলে নির্বাচন ভবনে গুঞ্জন উঠেছে। আলোচিত এই কর্মকর্তা হলেন ইসি’র নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা-১ এর যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম। চাকরির মেয়াদ শেষ হলে ২০২০ সালে ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে দুই বছরের জন্য তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। অবসরের এক বছর বাকি থাকতেই গত ২রা ফেব্রুয়ারি কমিশনের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। আবুল কাসেম নির্বাচন কমিশনার হচ্ছেন এমন আলোচনা এখন ইসি কর্মকর্তাদের মুখে মুখে। অবশ্য নির্বাচন কমিশনার হওয়ার জন্য চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আবুল কাসেম। গতকাল মানবজমিনকে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে অবসর নিচ্ছি। এর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। দীর্ঘদিন চাকরি করেছি। বয়স হয়ে গেছে। এখন পরিবারকে সময় দিতে চাই।

গত ২৯শে জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ আইনের গেজেট প্রকাশ করে সরকার। আইন অনুসারে নতুন কমিশন গঠনে এরই মধ্যে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। সিইসিসহ নতুন কমিশনার খুঁজে বের করার লক্ষ্যে সার্চ কমিটি  রোববার বিকালে প্রথম বৈঠকে বসেছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়ে প্রেসিডেন্টকে নামের তালিকা দেবেন তারা। সার্চ কমিটি গঠনের আগে থেকেই নির্বাচন কমিশনার হওয়ার জন্য তদবির শুরু করছেন অনেকেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ ক’জন ইসি কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-১ শাখার যুগ্ম সচিব মো. আবুল কাসেম পরবর্তী কমিশনের কমিশনার হবেন- এমন গুঞ্জন ছিল দীর্ঘদিন থেকে। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে যুগ্ম সচিব মো. আবুল কাসেম ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। কারণ নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের অযোগ্যতায় বলা হয়েছে, ‘আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করিতেছে না এমন পদ ব্যতীত তিনি প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন’। অর্থাৎ, কমিশনে চাকরি থাকা অবস্থায় তার কমিশনার পদে নিয়োগ লাভের কোনো সুযোগ নেই। ইসি সূত্রে জানা গেছে, আবুল কাসেম ২রা ফেব্রুয়ারি পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরও একটি কমিশন সভাসহ ইসি সচিবালয়ের একাধিক সভায় যোগদান করেছেন। তবে ওইসব বৈঠকের উপস্থিতি তালিকাসহ কোনো কাগজপত্রে সই করেননি বলে জানান ওই কর্মকর্তারা। ইসি সচিবালয়ের নিয়মিত চাকরি অবসায়নের পর দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া আবুল কাসেম চুক্তির শর্তানুযায়ী এক মাসের বেতনের টাকা ফেরত দিয়ে গত ২রা ফেব্রুয়ারি পদত্যাগপত্র জমা দেন। তিনি চাইলে বেতন ফেরত না দিয়ে এক মাসের আগাম নোটিশ দিয়েও পদত্যাগ করতে পারতেন। তার এই তাড়াহুড়ো করে পদত্যাগে ইসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আবুল কাসেমের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা জানান, সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত আবুল কাসেম নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পাবেন এমন আশ্বাস পেয়েই পদত্যাগ করেছেন। এমনকি তিনি সহকর্মীদের বলেছেন, কমিশনার হলে তার দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, আবুল কাসেম ১৯৯০ সালে ২৪শে মার্চ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচন কমিশনে যোগ দেন। ওই বছর নভেম্বর সহকারী সচিব হিসেবে ইসি সচিবালয়ে যোগ দেন। ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যুগ্ম সচিবের চলতি দায়িত্ব পান তিনি। ২০১৯ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন আবুল কাসেম। ২০২০ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাধারণ নির্বাচনেও রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালে তার চাকরির বয়স শেষ হলে সরকার তাকে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনগুলোতে ফলাফলের গেজেট প্রদানের দায়িত্‌্েব ছিলেন ইসি’র প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা। নির্বাচন কমিশনের চাকরি ছাড়াও রাজধানীর একটি স্কুলের পরিচালক (একাডেমিক ও প্রশাসন) হিসেবে কাজ করছেন আবুল কাসেম। ওই স্কুলে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করেন তিনি। এছাড়া ঢাকার রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সঙ্গেও আবুল কাসেম জড়িত বলে আলোচনা আছে।

প্রসঙ্গত, বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সার্চ কমিটি পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম সুপারিশ করবে। অর্থাৎ আগামী ২৪শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে সার্চ কমিটিকে এই সুপারিশ দিতে হবে। এর আগে ১৪ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ ফুরিয়ে যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেছেন, ১৫ কার্যদিবসের আগেই সার্চ কমিটি তাদের কাজ গুছিয়ে আনবে। এই কমিটির সুপারিশ করা ১০ জনের মধ্য থেকেই একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পাঁচজনকে নিয়োগ দেবেন প্রেসিডেন্ট। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সিইসি ছাড়া এবারও চার নির্বাচন কমিশনার পদে প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এবং একজন নারী নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সার্চ কমিটি প্রতিটি পদের বিপরীতে দু’জনের নাম সুপারিশ করবে। নূরুল হুদা কমিশনে ইসি’র একজন সাবেক কমকর্তাকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান এই দুইজনের মধ্যে একজন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আসছেন এমন আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status