শেষের পাতা

গ্রিন ফ্যাক্টরিতে লাভ বেশি, নীতি সহায়তা কম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

৩১ জানুয়ারি ২০২২, সোমবার, ৯:১৯ অপরাহ্ন

দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত বস্ত্র ও তৈরি পোশাকের কারখানা সবুজায়ন হলে 
এ খাতের আয় বাড়বে, যার সুফল পাবে গোটা অর্থনীতি। সেইসঙ্গে পরিবেশেরও সুরক্ষা হবে। তবে দেশের অর্থনীতি ও তৈরি পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে নীতি সহায়তা ও অর্থনৈতিক সহায়ক পণ্যগুলো পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এ ছাড়া সবুজায়নের পথে কারখানা আধুনিকায়ন ও উৎপাদনশীলতার জন্য বিনিয়োগের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে ছোট কারখানাগুলোর সে সক্ষমতা নেই বললেই চলে। গতকাল সিপিডি’র এক সংলাপে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে সবুজ পরিবর্তন’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকায় সুইডিশ দূতাবাসের হেড অব মিশন ক্রিস্টিন জোহানসন। সংলাপ সঞ্চালনা ও মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
মূল উপস্থাপনায় ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিশ্ববাজারে বস্ত্র ও তৈরি পোশাকের অবস্থান আরও ভালো করতে হলে পরিবেশবান্ধব বা সবুজ কারখানার বিকল্প নেই। শ্রমিকের জীবনমানের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন এখন থেকেই সমন্বিত উদ্যোগ। তিনি বলেন, দেশের প্রধান রপ্তানি খাতটি ভালো করছে, রপ্তানিও বাড়ছে। তবে সামনের দিনে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম পরিবেশ ইস্যু। এ ক্ষেত্রেও ভালো করতে হবে। রানা প্লাজা ধসের পর নানা ধরনের কমপ্লায়েন্স পূরণে সক্ষম হয়েছে খাতটি। ফলে পরিবেশ ইস্যুতেও ভালো করার সুযোগ রয়েছে।
ফাহমিদা বলেন, যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সেগুলো হচ্ছে- দেশের অর্থনীতি ও তৈরি পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে নীতি সহায়তা ও অর্থনৈতিক সহায়ক পণ্যগুলো পর্যাপ্ত নয়। সবুজায়নের পথে কারখানা আধুনিকায়ন ও উৎপাদনশীলতার জন্য বিনিয়োগের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে ছোট কারখানাগুলোর সে সক্ষমতা নেই বললেই চলে। আবার দীর্ঘদিন ধরে পোশাকপণ্যের দাম না বাড়ায় খাতটির উদ্যোক্তারাও আর্থিকভাবে আশানুরূপ সফলতা পাচ্ছেন না। কিন্তু পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণে দরকার বড় বিনিয়োগ। তাই গ্রিন ফ্যাক্টরি নির্মাণে আগ্রহে ভাটা পড়ছে।
অন্যান্য চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পরিবেশগত দিকগুলো নিয়ে খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। একইসঙ্গে নতুন এ পরিবর্তনের জন্য খাত সংশ্লিষ্টদের পর্যাপ্ত তথ্য ও জ্ঞানের অভাবও বড় চ্যালেঞ্জ। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে এ খাতের কর্মীদের জীবনমানে পরিবর্তন, কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কারখানার দূষণ কমানোসহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জও রয়েছে। তবে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করে এ খাতে সবুজ কারখানা বাড়লে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি এর সুফল পাবে।
অনুষ্ঠানে সিপিডি জানায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪১ লাখ মানুষ নিয়োজিত। বছরে এখান থেকে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ, যা মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশের বেশি। তাই খাতটির ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে।
পরিবেশবান্ধব কারখানা পরিচালনাকারী উদ্যোক্তারা জানান, পরিবেশবান্ধব কারখানা পরিচালনা খরচ অনেক বেশি। তারপরও বেশিরভাগ উদ্যোক্তা বিনিয়োগে আগ্রহী হলেও ক্রেতা-বায়াররা কর্মপরিবেশের মান উন্নয়নের কথা বললেও বাড়তি দাম দিতে চান না। একইসঙ্গে সরকারের নীতিসহায়তাও সবুজ শিল্পায়নবান্ধব নয়। বেসরকারি খাতের পোশাক মালিকরা নিজ উদ্যোগে, বড় অঙ্কের বিনিয়োগ দিয়ে পরিবেশবান্ধব কারখানা পরিচালনা করলেও লাভজনক করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা আরও জানান, পোশাকের ন্যায্যমূল্য দিতে গড়িমসি করছেন অনেক ক্রেতা। তাই সরকারকে প্রণোদনা বাড়াতে হবে। এজন্য একটি তহবিলও আছে। কিন্তু জটিল নানা শর্তের কারণে উদ্যোক্তারা তহবিলটি থেকে সুফল পাচ্ছেন না।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, পরিবেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে- এ বিবেচনায় ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি বাতিল করেছে সরকার। এসব প্রকল্পে ১২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হওয়ার কথা ছিল। সাবের হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, বস্ত্র ও পোশাক খাতসহ সব ধরনের শিল্প খাতেরই সবুজায়ন চায় সরকার। সবচেয়ে বড় খাত হিসেবে বস্ত্র ও পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা কী ধরনের নীতিসহায়তা চান পথ-নকশাসহ সে বিষয়ে একটি লিখিত চিঠি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। এর মাধ্যমে আগামী বাজেটে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই চাহিদা জানানো হবে।
এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, পরিবেশবান্ধব কারখানার প্রয়োজনীয়তা আছে। এজন্য ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের তাগিদ আছে। কিন্তু পোশাকের নায্যমূল্য দিতে গড়িমসি করছে অনেক ক্রেতা। তাই সরকারকে প্রণোদনা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। এজন্য একটি তহবিল আছে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত শর্তের কারণে উদ্যোক্তারা এর সুফল পাচ্ছেন না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি মো. ফারুক হাসান বলেন, বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতের ১৫৭টি কারখানা গ্রিন ফ্যাক্টরির সার্টিফিকেটধারী। এরমধ্যে ৪৭টি প্ল্যাটিনাম ও ৯৪টি গোল্ড সার্টিফিকেট পেয়েছে। প্রতি মাসে গ্রিন হিসেবে সার্টিফিকেট পাচ্ছে। ফারুক হোসেন বলেন, বাংলাদেশে সবুজ শিল্পায়ন বিষয়ে সিপিডি যে উদ্যোগটা নিয়েছে, সেটাকে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে স্বাগত জানাচ্ছি। বিজিএমইএ অনেক আগে থেকেই সবুজ শিল্পায়ন নিয়ে কাজ করছে। আরও কাজ করতে চাই। শুধু সমালোচনা না করে ভালো কাজগুলো ফোকাস করাও জরুরি। তাহলেই আমরা এগিয়ে যাবো।
বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গ্রিন কারখানা বাংলাদেশে হয়েছে, তা কিন্তু আমাদের উদ্যোক্তারা নিজ উদ্যোগে করেছে। গ্রিন ইন্ডাস্ট্রিজ করে তারা কী সুবিধা পেয়েছে? ইটিপি স্থাপনে বিদেশ থেকে ক্যামিক্যাল আমদানিতে সরকার শুল্ক আরোপ করে কেন? এনবিআরকে বারবার বলেও এর সুরাহা পাওয়া যায়নি। পরিবেশবান্ধব হলে আমাদের সুবিধা দেয়ার কথা, সেখানে সরকার কেন ব্যবসা করবে? তিনি বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি আমাদের গ্রিন ফ্যাক্টরিগুলো পৃথিবীর জন্য রোল মডেল। সেখানে বেতন ঠিকমতো দেয়া হয় না, কথাটি সত্য নয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status