এক্সক্লুসিভ

ভালো গ্রেডের বিনিময়ে যৌন সুবিধা দাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীর অভিযোগ

মানবজমিন ডেস্ক

২৫ জানুয়ারি ২০২২, মঙ্গলবার, ৮:৩১ অপরাহ্ন

নীরবতা ভাঙলেন মরক্কোর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু ছাত্রী। প্রফেসরদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন তারা। বলেছেন, প্রফেসররা তাদেরকে ভালো গ্রেড দেয়ার বিনিময়ে যৌন সুবিধা দেয়ার দাবি করেছেন। মুসলিম দেশ মরক্কোতে এমন অভিযোগ নিয়ে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থায় কাঁপন লেগেছে। এরই মধ্যে একজন শিক্ষককে দু’বছরের জেল দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার আদালতে তোলার কথা আরও দু’জন শিক্ষককে।
রাবাত থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, মি টু আন্দোলনের অংশ হিসেবে এসব ছাত্রী মুখ খুলেছেন। তাদের বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সয়লাব। তাদেরকে উৎসাহিত করছেন অধিকারকর্মীরা। ফলে উত্তর আফ্রিকার এই রক্ষণশীল দেশটিতে এখন যৌন সহিংসতার বিষয় নিয়ে তোলপাড়। সাধারণত, এসব বিষয়ে মান মর্যাদার কথা বিবেচনায় নিয়ে কেউ মুখ খোলেন না।
বিক্ষুব্ধ একজন ছাত্রীর নাম নাদিয়া (২৪)। তিনি নিজের পুরো নাম প্রকাশ করতে চান না। বলেছেন, পরীক্ষায় জালিয়াতি করেছি। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এক বছর আগে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, আমার একজন প্রফেসর আমাকে যৌনতায় ব্ল্যাকমেইল করতে চেয়েছিলেন। আমি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি।
কাসাব্লাঙ্কার কাছে সিত্তাতে দ্য হাসান আই ইউনিভার্সিটিতে তিনি আবার ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে সেখানকার ৫ জন প্রফেসরের বিরুদ্ধে এমন যৌনতার অভিযোগে চারদিক তোলপাড় হচ্ছে। এ বিষয়টি আদালতে উঠেছে। এরই মধ্যে প্রথম রায় হয়েছে। তাতে ভালো গ্রেড দেয়ার বিনিময়ে যৌন সুবিধা দাবির জন্য একজন প্রফেসরকে দুই বছরের জেল দেয়া হয়েছে। অন্য চারজনকে গতকাল সোমবার আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।
নাদিয়া বলেন, শুধু যে আমার সঙ্গে ঘটেছে এ ঘটনা, তা নয়। অন্য মেয়েদের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কেউই আমাদের কথা শুনতে চাননি। কয়েক বছরে স্থানীয় মিডিয়ায় এ রকম বেশকিছু ঘটনার খবর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু অফিসিয়াল কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এর ফলেই ছাত্রীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বেছে নেন। তারা তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের এমন আচরণের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে তাতে পোস্ট দিতে থাকেন। এসব পোস্টের স্ক্রিন শট অনলাইনে চারদিক বিদ্যুৎবেগে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তাতে যুবতীদের প্রতি প্রফেসরদের যৌন সুবিধা দাবির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সৃষ্টি হয় জনমত। নাদিয়া বলেন, আমি অভিযোগ করতে চাইনি। কিন্তু এই কেলেঙ্কারির খবর যখন প্রকাশ হয়ে পড়লো, তখন আমি একটি ফৌজদারি মামলা করি। আমার উদ্দেশ্য ছিল, একই ঘটনার শিকার অন্যরাও যেন উৎসাহী হন সামনে এগিয়ে আসতে এবং মুখ খুলতে।
এই প্রচারণা শুরু হয়েছিল ইনস্টাগ্রামের একটি পেইজে। সেখানে নির্যাতিত অন্য ছাত্রীদেরকে তাদের কাহিনী শেয়ার করতে অনুরোধ করা হয়। গড়ে ওঠে একটি সংগঠন। এর প্রতিষ্ঠাতা সারাহ বেনমুসা বলেন, যত দ্রুত আমাদের আপিল চালু করা হলো, আমরা একের পর এক অভিযোগ ও সাক্ষ্য পেতে লাগলাম। তারা প্রমাণসহ অভিযোগ প্রকাশ করতে লাগলেন। ইউনিভার্সিটি লেকচারারদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ বেরিয়ে আসতে লাগলো অনলাইনে।
ওউজদা’র ন্যাশনাল স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের সাবেক একজন ছাত্রী লিখেছেন, যৌন নির্যাতন বন্ধের বিষয়ে আমি কথা বলছি। প্রদর্শক হিসেবে যেসব দৈত্য অগ্রহণযোগ্য ও পচে যাওয়া ব্যক্তির আচরণ, তা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। অন্য নির্যাতিতরাও তাদের অভিযোগ শেয়ার করতে থাকেন। তাতে বলা হয়, এসব আচরণ কিছু প্রফেসরের। এ ঘটনায় উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত মাসে ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে।
আইনজীবী আইছা গুয়েল্লা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ট্যাঙ্গিয়ার্সে একটি প্রতিষ্ঠানের অনুবাদ বিষয়ক একজন প্রদর্শক যৌন হয়রানির অভিযোগে জানুয়ারির প্রথমদিকে অভিযুক্ত হয়েছেন। তাকে এ জন্য জেলে পাঠানো হয়েছে। ওই আইনজীবী আরও বলেন, তেটোয়ানে আবদেল মালেক এসাদি ইউনিভার্সিটিতে প্রায় ৭০টি এ রকম অভিযোগ জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর প্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা নিতে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির এ ঘটনায় দেশে অধিকারকর্মী, অনলাইন এবং মরক্কোর স্থানীয় মিডিয়ায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তারা যৌন নির্যাতনের বিষয়ে শূন্য সহনশীলতা নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী আবদেল লতিফ মিরাউয়ি’র কাছে। ওদিকে অভিযোগকারী ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বেশ কিছু ইউনিভার্সিটি টেলফ্রি হটলাইন চালু করেছে। তারা যৌন সহিংসতার বিষয় দেখার জন্য টিম গঠন করে দিয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status